আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ(এএফএমসি) কি ও কেন?
আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সামরিক বাহিনী পরিচালিত মেডিকেল কলেজ। এর উৎপত্তির কারণ হল সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর কে শক্তিশালী করা। সিভিল মেডিকেল কলেজ থেকে তো সেনাবাহিনী ডাক্তার রিক্রুট করছেই তাহলে কেন এই আলাদা সামরিক মেডিকেল কলেজ? কারণ হিসেবে জানা যায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ডাক্তারদের কিছুটা “পিকিউলিয়ার”* ক্যারেক্টারিস্টকসের দরকার পড়ে। (*এই শব্দটিই এএফএমসি এর ওয়েবসাইটেও ব্যবহার করা হয়েছে)। মূলত “মিলিটারী মোটিভেটেড” ডাক্তার তৈরীই ছিল এর উদ্দেশ্য। যেন প্রয়োজন মত এখান থেকেই ডাক্তার পেতে পারে আর্মি মেডিকেল কোর। যারা পেশায় ডাক্তার একইসাথে মিলিটারী ডিসিপ্লিনে অভ্যস্ত। এই উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে ৫৬ জন মেডিকেল ক্যাডেট নিয়ে এর যাত্রা শুরু। তখনও “এএমসি ক্যাডেট” প্রথার প্রচলন হয়নি। আগের নিয়মেই এমবিবিএস শেষ করে আইএসএসবি সম্পন্ন করে সেনাবাহিনীতে রিক্রুটেড হত ক্যাডেটরা। এই কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তারদের সেনাবাহিনীতে সাফল্য, মানসিকতা, মেধা ও দৃঢ়তা দেখে সিধান্ত হয় “এএমসি ক্যডেট” প্রথা চালুর। কলেজের নবম ব্যাচ থেকে চালু হয় “এএমসি ক্যাডেট” প্রথা যারা ISSB সহ সেনাবাহিনীতে যোগদানের সকল প্রক্রিয়া কলেজে ভর্তির আগেই সম্পন্ন করে। পাশ করে সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য থাকে। বর্তমানে কলেজটিতে ১২৫ টি আসন আছে। যার মাঝে ৪০টি “এএমসি ক্যাডেট” ও ৮৫টি আসন “এএফএমসি ক্যডেট” যারা এমবিবিএস শেষ করে যথাযথ নিয়মে সেনাবাহিনীতে যোগদানের আবেদন করতে পারেন ইচ্ছা করলে। শুধু ভর্তি প্রক্রিয়াতে পার্থক্য ছাড়া AMC ও AFMC ক্যাডেটদের মধ্যে তুলনামূলক কোন বৈষম্য নেই। এএমসি ক্যডেটরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট একটা টাকা সরকার হতে হাতখরচ হিসাবে পেয়ে থাকেন।
এএফএমসি কি বেসরকারী?
আসুন বাদ দেই এই আলোচনা। আরো কিছু বিষয় জেনে নিই। সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদবীর একজন কর্মকর্তা (সিভিল প্রশাসনে সচিব সমতুল্য) এই প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। তার অধীনে কর্মরত আছেন চল্লিশের বেশি সামরিক কর্মকর্তা। আছেন পঞ্চাশের বেশি সৈনিক থেকে শুরু করে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার পদবীর লোকবল। সিভিল লোকবলের হিসাব বলছিনা। আছে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট পরিচালনা করতে যা যা লাগে সব- সেনাবাহিনীর জীপ থেকে পাজেরো, বাস থেকে নয়-টনী ট্রাক সব। ঠিক এই কারণেই এখানকার প্রাধানকে প্রিন্সিপাল না বলে কমান্ড্যান্ট বলা হয়। কারণ তিনি একই সাথে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট প্রধান হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন।এই বিপুল লোকবল কি সেনাবাহিনী কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত রাখবে পার্মানেন্ট এটাচমেন্ট হিসাবে?
AMC ক্যাডেটরা কি বেসরকারী হিসেবে প্রতি মাসে সরকার থেকে মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন হাতখরচ হিসাবে?
আসুন এবার জেনে নিই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সম্পর্কে। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের পাশেই ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট বিশাল এই হাসপাতাল সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। যা গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অর্থ মন্ত্রলায়ের অর্থায়নে। এই হাসপাতাল গড়ে ওঠার মূল কারণ এএফএমসি এর ট্রেনিং হাসপাতাল। এতদিন পর্যন্ত যেটা ছিল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল(সিএমএইচ),ঢাকা। কুর্মিটোলা হাসপাতালের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ছিলেন তৎকালীন কর্ণেল(ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল করিম খান। এএফএমসি এর ফার্মাকোলজী বিভাগের অধ্যপক। উনার কাছে গিয়ে কোন কনফিউশান থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। গতবছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী,স্বাস্থ্যসচিব ও এএফএমসি কমান্ড্যান্টের মধ্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এর মধ্যে। যেটা অনেকগুলো জাতীয় দৈনিকের সংবাদ হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে থার্ড ইয়ার থেকে সব ক্লিনিক্যাল ক্লাস কুর্মিটোলা হাসপাতালে শিফট হয়ে গেছে। সেই হিসেবে এএফএমসি বাংলাদেশের প্রথম “বেসরকারী” মেডিকেল কলেজ যার ট্রেনিং হাসপাতাল সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়ের টাকায় গড়ে ওঠেছে।
এবারে জেনে নিই এই মেডিকেল কলেজটি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন?
জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ততদিনে সেনাবাহিনীর নিজস্ব কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছিলনা। ০৫ জুন ২০০৮, মিরপুর সেনানিবাসে যাত্রা শুরু হয় সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিশবিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস(বিইউপি)। সেই থেকে বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী(বিএমএ),নেভাল একাডেমী,এয়ারফোর্স একাডেমী, এনডিসি, পিএসসি, এমআইএসটি সহ সেনাবাহিনীর সকল প্রতিষ্ঠানের মত এএফএমসিও চলে আসে বিইউপি এর অধীনে।
প্রস্তাবিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
মেজর জেনারেল(অবঃ) নাসির উদ্দীন কমান্ড্যান্ট থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে। প্রতিবেদনের মূল বিষয় ছিল আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা। যেটা হলে এমডি/এমএস/এমফিল কোর্স এর চালু করা যাবে। ব্যাপারটা মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। সেই হিসেবে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের প্রথম “বেসরকারী” মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
আসুন আরো কিছু বিষয় আলোচনা করি। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ কি শুধু বাংলাদেশেই আছে? এশিয়ার মধ্যে আছে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর। পুনে,ইন্ডিয়া ও রাওয়ালপিন্ডি পাকিস্তান। এশিয়ার মধ্যে ৩য় দেশ হিসাবে বাংলাদেশ যার সেনাবাহিনীর নিজিস্ব মেডিকেল কলেজ আছে। পুনে এএফএমসি ১৯৪৮ সালে BC Roy কমিটি এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। সমগ্র ভারতে এটি অন্যতম সেরা মেডিকেল কলেজ। ২০১৫ সালে পুরো ভারতে ২য় সেরা মেডিকেল কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি ইন্ডিয়ান আর্মির সকল ধরনের আন্ডারগ্রাজুয়েট,পোস্টগ্রাজুয়েট ডাক্তার/স্পেশালিস্ট, পোস্টগ্রাজুয়েট ডেন্টাল সার্জন, নার্সিং স্টাফ, প্যারামেডিক সবই সরবরাহ করে। বুঝুন এর ব্যপ্তি কত বড়। মূল কথা এখনো বলা হয় নাই, মেডিকেল ক্যাডেটদের সকল খরচ ভা্রতীয় সেনাবাহিনী বহন করে। ফ্রি টিউশন,ফ্রি বোর্ডিং, ফ্রি ইউনিফর্ম এবং প্রতি মাসে আমাদের এএফএমসি এর মত একট নির্দিষ্ট ভাতা/হাতখরচ পায়। বিশ্বাস না হলে ঘুরে আসুন ওদের ওয়েবসাইট(afmc.nic.in)।
প্রশ্ন তুলুন ভারতের এএফএমসি কি বেসরকারী?
আর্মি মেডিকেল কলেজ প্রসঙ্গঃ
এবার আসি নতুন ০৫ টি আর্মি মেডিকেল কলেজ বিষয়ে। এই গুলো “আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ” না। এগুলি যথাক্রমে আর্মি মেডিকেল কলেজ যশোর, আর্মি মেডিকেল কলেজ বগুড়া, আর্মি মেডিকেল কলেজ সিলেট, আর্মি মেডিকেল কলেজ রংপুর, আর্মি মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রাম। এইগুলি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ। এইগুলাতে টেম্পোরারি এটাচমেন্টে কিছু আর্মি অফিসার এটাচড থাকলেও তারা পরবর্তীতে উইথড্র হবেন। এবং এই ০৫টি মেডিকেলের প্রধানও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। যাদেরকে বলা হচ্ছে সিএ(Chief Administrator)। তাদের কে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট ক্যন্টনমেন্টের এডিএমএস(এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস) মহোদয় সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের চলতি অধ্যক্ষ্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এট এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রকল্প(প্রজেক্ট) হিসেবে চলমান। এই মেডিকেল কলেজগুলিতে “এএমসি ক্যডেট” প্রথা চালু নেই।
সমসাময়িক বিজ্ঞপ্তিঃ
এবার আসি সেনাবাহিনীতে আর্মি মেডিকেল কোরের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে। এই লেখার উৎপত্তি যে কারণে। বেসরকারী মেডিকেল কলেজের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। এর পরপরই আমাদের শ্রদ্ধাভাজন অনেক সিনিয়রসহ অনেক সহকর্মীরা আঙুল তাক করেছিলেন এএফএমসি এর দিকে। এটি নাকি একটি বেসরকারী কলেজ। এখান থেকে কিভাবে রিক্রুটেড হতে পারে সেনাবাহিনীতে! আমাদের ধারণা ছিল সঠিক তথ্য জানাতে পারলে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণার অবসান হবে। কারণ আপনি একজন ডাক্তার। আপনার কাছ থেকে কেউ কোন তথ্য পেলে সেটিকেই সঠিক বলে জ্ঞান করবে। অনেক সিনিয়র ডাক্তার কেই দেখলাম এএফএমসি বেসরকারী এটা নিয়ে অনেক যুক্তি দিতে। আর বিজ্ঞপ্তির এই সিদ্ধান্ত সরাসরি সেনাসদর এর। এটি নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নাই। আপনারা একসাথে বসেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও সেনাবাহিনীকে এক সাথে বসান। আমরা আপনাদের পাশে আছি যে কোন প্রয়োজনে।
তবে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ও সেনাবাহিনী নিয়ে কোন কনফিউশন তৈরী না করি। এই প্রতিষ্টানটি জাতির গর্ব। সেনাবাহিনীর গর্ব। এটাকে বিশ্ববিদ্যলয়ে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলমান। স্বপ্ন দেখি এটি হবে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠান কে নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়াই।
সংযুক্তিঃ ১। এই লেখাটি লেখার সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত কয়েকজন অফিসার, এএফএমসি-র সিনিয়র ভাই, শিক্ষক ও এএফএমসি এর সাবেক একজন কমান্ড্যান্টের সাথে কথা বলা হয়েছে। সকল কনফিউশান দূর হবে সেই আশা করিনা। তবে নিজের বদ্ধমূল ধারণায় আটকে থাকবেন না।
২। আমিই অমুকের কাছ থেকে শুনেছি এএফএমসি বেসরকারী, অমুক আবার সামরিক কর্মকর্তা- এগুলো কোন যুক্তি নয়। অমুক-তমুক কোন রেফারেন্স নয়।
৩। গুগল করে দেখেছি এএফএমসি সরকারী প্রতিষ্টান নয়। গুগল কবে থেকে সঠিক রেফারেন্স হল? প্লিজ শিক্ষিত মানুষের মত আচরণ করুন।
৪। উইকিপিডিয়া তে দেখেছি এএফএমসি আধা সরকারী। আমার আপনার মত মানুষজন উইকি এডিট করতে পারে। প্লিজ হ্যাভ সাম সেন্স।
৫। “আব্বুর কাছ থেকে শুনেছি…… আব্বু আর্মিতে চাকরি করতেন”। আপনার বাবার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি তিনিও আপনাকে এএফএমসি তে ভর্তির চেষ্টা করেছিলেন।
৬। সংযুক্তিঃ বিএমডিসি সরকারী মেডিকেলের তালিকা।
০৮ নং দ্রষ্টব্য http://bmdc.org.bd/recognized-medical-and-dental-colleges/
ডাঃ আশিকুজ্জামান পিয়াশ
আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ,ঢাকা।
na,iccha nai
janar issa nai
না, একদম নাই
এএফএমসিতে ভর্তির কি যোগ্যতা লাগবে।
আর্মি মেডিকেল কোর এই জিনিসটা কি?? এখানে কি এমবিবিএস এর ভর্তি করা হয়??
আর্মড ফোর্স মেডিকেল এ পরতে সর্বমোট কত খরচ হবে??