২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
ডা. সাফিনাজ মেহজাবীন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (কে-৫৮)
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখেছি সাদা এ্যাপ্রন গায়ে চাপাবার। ছোটোবেলা থেকে ধ্যানজ্ঞান একটাই ছিল, ডাক্তার হতেই হবে। পারিবারিকভাবে কোনো চাপ ছিল না, বরং বাবামা দুজনেই এই পেশা বেছে নেয়ার পূর্বে বারবারই ভেবে দেখতে বলেছিলেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে এতো স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তুত কিনা তা ভালোমতো চিন্তা করে দেখতে বলেছিলেন।
সে যাই হোক আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করি। এরপর বহু চড়াই উৎরাই, ত্যাগ তিতিক্ষার পর আসে পরম আরাধ্য এফসিপিএস ডিগ্রি। অতঃপর শুরু হলো পূর্ণোদ্যমে পেশাগত জীবন, অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবনের সাথে ভারসাম্য মিলিয়ে।
বর্তমানে চিকিৎসকদের সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা এবং চিকিৎসক -রোগী সম্পর্কটির তিক্ততার খবর প্রায়শই আমাদেরকে বিচলিত করে। তবে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সে ধারণাকে বদলে দিয়েছে। সরকারি এবং প্রাইভেট চেম্বার দুই জায়গাতেই আমার মনে হয়েছে শতকরা ৯৯ জন রোগীই ডাক্তারদের সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা রাখে এবং আমাদের দায়িত্ব তাদের সেই আস্হার জায়গাটি ধরে রাখা। বাঙালি খুবই ইমোশনাল জাতি, অতএব একটু সিম্প্যাথেটিক হলেই রোগীকে ডিল করা সহজ হয়। তবে এটা ঠিক, দিনশেষে আমরাও রক্তমাংসেরই মানুষ। সবসময় হয়তো মেজাজ, মনোযোগ একরকম থাকে না।
কিছুদিন আগে প্রচণ্ড ঘাড়ে ব্যথা নিয়েও এক রোগীর অপারেশন করেছি। রোগীকে স্পাইনাল এ্যানেসথেশিয়া দেয়া ছিল, অর্থাৎ রোগী সজাগ ছিলেন। অপারেশন করার সময় ঘাড়ের ব্যথার কারণে সহযোগী ডাক্তারকে বিষয়টা বলছিলাম এবং অপারেশন শেষ করে ওটিতেই ঔষধ আনিয়ে খেয়েছিলাম। পরেরদিন যখন রোগীটা দেখতে গেলাম, উনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করার আগেই উনিই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কেমন আছেন? ব্যথা কমছে?” আমি সত্যিই অভিভূত! The incidence has just made my day! যেখানে চারপাশের নেগেটিভ ঘটনা, আচরণ আমাদেরকে এই প্রফেশনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করছে, সেখানে স্বল্পশিক্ষিত একজন মধ্যবয়সী নারীর এরূপ সিম্প্যাথেটিক আচরণে আমি মুগ্ধ, আশাবাদী।
আমার মনে হলো, আমি শুধুই ডাক্তার নই, আমি একজন মানুষও। আমারও শরীর অসুস্থ হয়, আমার মনও আপনজনের সহানুভূতি খোঁজে। পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতাই পারে এই পেশার আসল সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে।
উত্তম কুমার তার অভিনয়শৈলী দিয়ে এই পেশাকে মানুষের মনে পৌঁছে দিয়েছিলেন, আর ডা. বিধানচন্দ্র রায়, প্রফেসর আলীম চৌধুরী, প্রফেসর ফজলে রাব্বী, প্রফেসর নুরুল ইসলাম, প্রফেসর টি এ চৌধুরী প্রমুখ এই পেশাকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। আমাদের দায়িত্ব তা ধরে রাখা।