অস্ট্রেলিয়ার একটি শিশুর শরীরে এমন একটি যন্ত্র যুক্ত করা হয়েছে, যা কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়ের মতো কাজ করবে। বিশ্বে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের মোকাবিলায় এ ধরনের চিকিৎসা এটিই প্রথম বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।
কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় বা ইনসুলিন পাম্প নামে পরিচিত যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা এমপিথ্রি প্লেয়ারের মতো। চার বছর বয়সী ওই শিশুর নাম জাভিয়ের হেমস। এটি তার শরীরে যুক্ত করার জন্য ত্বকের নিচে বেশ কয়েকটি নল স্থাপন করতে হয়েছে। এটি ইনসুলিন সরবরাহব্যবস্থা হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে কাজ করবে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, অগ্ন্যাশয়ের প্রাকৃতিক কার্যক্রমের অনুকরণে প্রযুক্তিটি তৈরি করা হয়েছে। এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমানো এবং ইনসুলিন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবে। ফলে শর্করার স্বল্পমাত্রার কারণে কোমা, আকস্মিক অসুস্থতা ও মৃত্যুর মতো মারাত্মক পরিণতি এড়ানো সম্ভব হবে।
শিশুটির শরীরে এ যন্ত্র যুক্ত করার প্রক্রিয়াটি কখন সম্পন্ন করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জুভেনাইল ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (জেডিআরএফ) এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে। গবেষকেরা বলেন, এ প্রযুক্তি মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পর্যবেক্ষণে রাখে এবং সম্ভাব্য আকস্মিক অসুস্থতার (হাইপোগ্লাইকেমিক) অন্তত ৩০ মিনিট আগেই ইনসুলিন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে হাইপোগ্লাইকেমিক আক্রমণ হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতে এ ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়, যখন রোগীরা সাড়া দিতে পারে না বা শারীরিক গোলযোগের মারাত্মক পরিণতি আন্দাজ করতে ব্যর্থ হয়।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অবস্থিত প্রিন্সেস মার্গারেট শিশু হাসপাতালে হেমসের শরীরে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানকার অধ্যাপক টিম জোনস বলেন, এ যন্ত্র হাইপোগ্লাইকেমিয়ার আভাস দিতে পারে এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার আগেই ইনসুলিন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে রোগীকে বিপদমুক্ত রাখে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে বড় এক অগ্রগতি।
হেমসের মা নাওমি বলেন, যন্ত্রটি তাঁর ছেলের জীবনে ইতিমধ্যে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছে। ২২ মাস বয়স থেকেই টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে ভুগছে জাভিয়ের। ইনসুলিন পাম্পটি দিনে তো বটেই, রাতে ঘুমানোর সময়টাও তার জন্য নিরাপদ বলে নিশ্চিত করেছে। এটা পানিনিরোধক হওয়ায় বাড়তি কিছু সুবিধা পাচ্ছে জাভিয়ের। খেলাধুলা ও বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করতে এখন তার কোনো বাধা নেই।
প্রিন্সেস মার্গারেট শিশু হাসপাতালসহ অস্ট্রেলিয়ার আরও কয়েকটি হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ইনসুলিন পাম্প যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। শরীরে এটি যুক্ত করতে প্রায় ৮ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার খরচ পড়ে।
সূত্র: এএফপি কার্টেসীঃ প্রথম আলো ।
আশা করছি , একদিন বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে টাইপ I ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিত্সায় , তাদের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ ও সাবলীল করবার লক্ষ্যে