প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, সোমবার
বৃটিশ জার্নাল অব অফ্থ্যালমলজিতে প্রকাশিত হয়েছে চক্ষু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. বিপুল সরকারের চোখের গ্লুকোমা সার্জারি বিষয়ক গবেষণা। (গবেষণা পত্র: http://dx.doi.org/10.1136/bjophthalmol-2020-317098 )
বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রেটিং এর দশটি অফ্থ্যালমলজি জার্নালের একটি হলো বৃটিশ জার্নাল অব অফ্থ্যালমলজি, যেটি সারা বিশ্ব থেকে পাঠানো আর্টিকেলের ৮৩% নাকচ করে দেয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র ১৭% নিবন্ধ তারা পর্যালোচনা করার পর প্রকাশনার জন্য বিবেচনা করে। এই সম্মানিত প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের গবেষণা কীভাবে প্রকাশিত হল, সেই পেছনের গল্পটিই সবার সামনে তুলে ধরেছেন ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট এন্ড হাসপাতালে কর্মরত সহকারী অধ্যাপক ডা. বিপুল সরকার, এম.বি.বি.এস, এফ.আর.সি.এস, এম.আর.সি.এস, এফ.সি.পি.এস, এফ.আই.সি.ও। তাঁর নিজের ভাষ্যে:
(১) এই ধরনের বিশ্বমানের জার্নালে প্রকাশনা করে কি লাভ?
আপনার লাভ অনেক। সেই সাথে আপনার প্রতিষ্ঠান ও দেশের অনেক লাভ।
প্রথমত, এর মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন। যেটা হয়তো কেউ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে বই লিখবে অথবা নতুন করে তার গবেষণা সেখান থেকে শুরু করবে। সর্বোপরি আপনার অবর্তমানেও আপনার কাজটি অমর হয়ে থাকবে।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন বিশ্বমানের সম্মেলনে আপনি অতিথি বক্তা হিসেবে নিমন্ত্রণ পেতে পারেন, ট্রাভেল গ্র্যান্ড পেতে পারেন ও আরো অনেক কিছু। আমি উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশের সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রাভেল গ্র্যান্ড বা ইনভাইটেশন এর মাধ্যমে বিনা খরচে।
(২) এই কাজ গুলো তো সহজ না। আমাকে দিয়ে হবে কি?
যে ডাক্তার প্রফ পরীক্ষা বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর মত পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারে তার পক্ষে গবেষণা বা আর্টিকেল লেখা সম্ভব না এটা আমার বিশ্বাস যোগ্য না। কপি-পেস্টের ধারনা বা কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়ার প্রবণতা পরিহার করে এবং নিজের কাজ গুলো সঠিক নিয়মে নিজে করার ইচ্ছা শক্তি থাকলেই এই কাজ অবশ্যই সম্ভব।
(৩) আমি কোন গবেষক নই, ব্যাস্ত চিকিৎসক। আমার তো সময় নেই।
একজন চিকিৎসক সেরা গবেষক। আর হ্যাঁ, সময় তো আপনাকে অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু আপনার গবেষণা করার চিন্তা ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের সময় আসতে হবে।
নতুন কিছু সম্বন্ধে জানা , তা নিয়ে গবেষণা করা এবং প্রকাশ করার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে যেটা আপনাকে খুঁজে নিতে হবে। যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন তাঁরা জানেন আমি যেখানে চাকরি করি বা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করি সেখানে কতটা ব্যস্ত চিকিৎসক/সার্জন। তবুও আমরা চেষ্টা করি নতুন কিছু করার।
(৪) দেশীয় জার্নালে পাবলিকেশন করলে কি সমস্যা? আমার তো অ্যাক্যাডেমিক পদোন্নতি আটকে থাকছে না।
এখানেই আমাদের শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের দেশে ইন্ডেক্স (বিশেষভাবে পাবমেড ইন্ডেক্স) জার্নাল নেই বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকটি আছে। সে কারণেই দেশীয় জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেল গুলো সাইটেশন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। একটি প্রতিষ্ঠানের বিশ্ব র্যাঙ্কিং এ স্থান পাওয়ার জন্য যে মানদন্ড গুলো বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে একটি হলো রিসার্চ এবং ইন্ডেক্স জার্নালে প্রকাশনা। সে জন্যই বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিশ্ব র্যাংকিং এ স্থান পায় না, শুধুমাত্র ইন্ডেক্স জার্নালে প্রকাশনা না থাকার জন্য। আমাদের দেশীয় জার্নাল গুলো যদি আর্টিকেল পাবলিশ এর পূর্বে প্লেজারিজম চেক বা পীর রিভিউ অপশন থাকতো তাহলে তারা একদিন ইন্ডেক্স জার্নাল হতে পারত। আর সে জন্যই একাডেমিক পদোন্নতির জন্য যে প্রকাশিত আর্টিকেল লাগে সেটা যদি অবশ্যই ইন্ডেক্স জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকতো তাহলে অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যেত।
(৫) এতে তো অনেক ফান্ড বা টাকার দরকার। এই গুলো তো আমার নেই।
অবশ্যই দরকার। তবে আপনি যদি সত্যিকার গবেষণা বা প্রকাশনা করতে চান ফান্ড যোগাড় করা কোন বাধা না। দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আপনাকে ফান্ড দেওয়ার জন্য বসে আছে। শুধুমাত্র আপনার রিসার্চ প্রপোজালটা তাদের পছন্দ হতে হবে। আর অধিকাংশ বিশ্বমানের জার্নালে প্রকাশনা করতে টাকা লাগে না। ব্রিটিশ জার্নালে আমার এই পাবলিকেশন এর জন্য এক টাকাও খরচ হয় নি। এমনকি অনেক সময় এটি আপনার আয়ের অতিরিক্ত মাধ্যমও হতে পারে।
আর গবেষণা বা প্রকাশনা হলো একটি টিম ওয়ার্ক। আমার এই প্রকাশনার ক্ষেত্রে যারা সবসময় পাশে ছিলেন বিশেষ করে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান স্যার, ডা. সাজ্জাদ ইফতেখার, ডা. মল্লিকা মহাত্মা তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আর যাকে ছাড়া এটা করা অসম্ভব ছিল সে হলো আমার দেখা সবচেয়ে মেধাবী চক্ষু চিকিৎসক বন্ধু ডা. মোহাম্মদ ইবনে আবদুল মালেক।
এর আগেও আমরা কিছু আর্টিকেল ইউরোপীয়ান জার্নাল অব অফ্থ্যালমলজি ও জার্মান মেডিকেল সায়েন্স সহ কিছু বিশ্বমানের জার্নালে প্রকাশ করতে পেরেছি।
সবশেষে বলতে চাই আমার এই লেখাকে কেউ কেউ আত্ম প্রচারণামূলক বলতে পারেন কিন্তু যদি একজন ডাক্তার বা জুনিয়ার আমার এই লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হন তাহলে কষ্ট করে আমার এই লেখা সার্থক।
সত্যিই অনুপ্রাণিত যে কেউ পাবলিকেশন করার ইচ্ছায় যে কোন বিষয়ে জানার জন্য আমার সাথে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করব সাহায্য করার।
মেইল : [email protected]
WhatsApp : +8801713211394
Facebook : Bipul Sarker