প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ২০২১
লেখাঃ ডা. জাকির হোসেন হাবীব
The woods are lovely, dark and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.
স্যার এখন কোভিড আক্রান্ত হয়ে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের আই সি ইউ তে। ওনার পরিবারের সবাই আক্রান্ত। আমার মতো স্যারের অসংখ্য গুনমুগ্ধ ছাত্র ছাড়াও তাঁর সহকর্মী ও সহযোদ্ধা অনেকেই স্যারের অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই করোনাকালে তিনি যেভাবে তাঁর দ্বায়িত্ব পালন করে গেছেন তা নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের অসুখ ইত্যাদি নিয়েও তিনি এই মহামারিকালে নিজের শরীরের কথা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি এক মুহূর্তের জন্য।
বলছিলাম সিডিসি’র প্রাক্তন ডাইরেক্টর এবং বর্তমানে জাতীয় রেফারেন্স ল্যাবরেটরী’র (NILMRC)পরিচালক প্রফেসর ডা. এ কে এম শামসুজ্জামান তুষার স্যারের কথা। তাঁর নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের এই মহা দূর্যোগকালে এক ঐতিহাসিক দ্বায়িত্ব পালন করেছে। জনবল স্বল্পতা ও অন্যান্য অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানটি রেকর্ডসংখ্যক করোনা পরীক্ষা করে চলেছে।
স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয় আমার জীবনের এক দূর্যোগকালে। এম ফিল থিসিস পার্টে আমি তখন হাবুডুবু খাচ্ছি আর স্যার ময়মনসিংহ মেডিকেলে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। আমার থিসিসের বিষয় কালাজ্বর নিয়ে আর স্যারের পান্ডিত্য এবং অসংখ্য গবেষণাও এই বিষয়েই। আমার জীবনের সেই দূর্যোগ মুহূর্তে তিনি আমাকে যে সাহায্য করেছিলেন তার প্রতিদান দেবার ক্ষমতা আমার নেই। স্যারের সংস্পর্শে এসে দেখেছি কি অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে তিনি মাইক্রোস্কোপ নিয়ে পড়ে থাকতেন কালাজ্বরের জীবাণু ‘এল ডি বডি’ র ( LD body)সন্ধানে।
স্যারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক শুধু ছাত্র শিক্ষকের নয়- এর চেয়ে অনেক বেশি। তিনি মূলত আমার একজন অভভাবকও। আমার বিভিন্ন দুঃসময়ে তাঁর কাছে ছুটে গিয়েছি- তাঁর পরামর্শ, সাহস ও সান্ত্বনা পেয়েছি। আমার টুকটাক লেখালেখি নিয়ে একটি বই প্রকাশ করে যখন স্যারের কাছে উপহার দিতে গিয়েছিলাম তখন তিনি সিডিসি’র পরিচালক। তাঁর উচ্ছাস দেখে আমি হতবাক। তিনি এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে নিয়ে বইসহ ছবি তুললেন, আমাকে অনুপ্রাণিত করলেন। আসলে স্যারের স্বভাবটাই এমন। খুব প্রাণবন্ত আর আবেগী একজন মানুষ তিনি।
স্যার একজন সুলেখক। তাঁর লেখা ফোক ধাঁচের বিভিন্ন কবিতা, গান ও গদ্য রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু ছাপা বই।
মানুষকে আপন করে নেয়া, ছোট বড় নির্বিশেষে সবার সঙ্গে মেশা, দেখভাল করা, আন্তরিকভাবে তাদের খোঁজ খবর করা, স্যারের এক অনন্য গুন। কিছু সময়ের জন্য তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠান আই ই ডি সি আর এর পরিচালকও ছিলেন। আমি অত্যন্ত অবাক হয়েছি যে পরবর্তীতে তিনি যখনই এখানে এসেছেন তাঁর ছোট বড় সব সহকর্মীর খোঁজ নিয়েছেন। বিশেষ করে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদেরকে ভালোবাসা, তাদের সম্মান দেয়া এবং তাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করতে দেখেছি আমি স্যারকে। আর সে কারণে তারাও তাঁকে অন্তর দিয়ে ভালবাসে।
বর্তমানে স্যার যে প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্বরত আছেন (National Institute of Laboratory Medicine and Referral Center সং ক্ষেপে NILMRC) তার প্রতি স্যারের ভালোবাসা সত্যিই অপরিসীম, এর গভীরতা বিস্ময়কর। তিনি একে অনেক ভালোবেসে নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নপুরী’। এর উন্নতির জন্য তিনি তাঁর শারীরিক অসুস্থতাকে তোয়াক্কা না করে রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সীমিত লোকবল নিয়েও এই করোনাকালে অসাধ্য সাধন করেছেন, সর্বোচ্চ সংখ্যক টেস্টের রেকর্ড গড়ে এবং তা অব্যাহত রেখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এই দূর্যোগের মুহূর্তে স্যারের মত একজন সাহসী এবং নিবেদিতপ্রান কর্মী, যোদ্ধা এবং নেতা’র খুব খুব প্রয়োজন এই দেশ ও জাতির। আর তাই দেশের জন্য, মানুষের জন্য প্রাণঘাতী করোনাকে জয় করে স্যার আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন, তাঁর স্বপ্নপুরীকে স্বপ্নের চেয়ে বেশি উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এটাই একান্ত কামনা।