৩ ডিসেম্বর ২০১৯
বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩.৪ জন মানুষ সেরেব্রাল পালসি (সিপি) তে আক্রান্ত। মোট রোগীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি। সিপি শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে কাজ করে। আপনার বা আপনার পরিবারের কারো সন্তান যদি সিপি আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে এই প্রশ্নসমূহের উত্তর জানা আপনার জন্য খুবই জরুরি।
সেরেব্রাল পালসি (সিপি) কী?
শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার প্রধান কারণ এই সিপি। এটি মস্তিষ্কের ত্রুটির কারণে সৃষ্ট এক ধরনের স্নায়ুতন্ত্রঘটিত রোগ।
সেরেব্রাল পালসির কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। এর মধ্যে সাধারণ কিছু লক্ষণ হল:
১. হাঁটার অক্ষমতা
২. কথা বলায় অসুবিধা
৩. কোন কিছু শেখার জটিলতা
৪. বুদ্ধিগত দুর্বলতা
৫. দৃষ্টি বা শ্রবণ শক্তি গঠিত না হওয়া
৬. খিঁচুনি
৭. মানসিক ও আচারজনিত সমস্যা
৮. মেরুদণ্ডের বিকলাঙ্গতা
৯. অস্থিসন্ধিতে সমস্যা
সেরেব্রাল পালসি (সিপি) কেন হয়?
সিপির সঠিক কারণ সবসময় নির্ণয় করা যায় না। এর সম্ভাব্য কারণগুলি উল্লেখ করা হচ্ছে:
১. মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মস্তিষ্কের গঠন সঠিকভাবে না হওয়া
২. মায়ের কোন রোগ বা ইনফেকশন
৩. গঠনরত মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হওয়া
৪. জিনগঠিত সমস্যা
৫. গর্ভাবস্থায় মায়ের কোন বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ
৬. প্রসবের সময় শিশুর মাথায় আঘাত পাওয়া
৭. অকালে প্রসবজনিত জটিলতা
সেরেব্রাল পালসি (সিপি) কত ধরনের হয়?
৪ ধরনের।
১. স্প্যাস্টিক সেরেব্রাল পালসি
৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এধরনের সেরেব্রাল পালসি হয়ে থাকে। এতে মাংসপেশির টোন বেড়ে যায়, যাকে স্প্যাস্টিক সেরেব্রাল পালসি বলে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে আছে
– স্বাভাবিক গঠনপ্রক্রিয়া ও চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া
– অস্বাভাবিক দৃঢ় মাংসপেশি
– মাংসপেশি চলাচলের নিয়ন্ত্রণে জটিলতা
– এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলনে জটিলতা
স্প্যাস্টিক কোয়াডরিপ্লেজিয়া: এ অবস্থায় শিশুর চার হাত-পা আক্রান্ত হয় এবং চলাচল অত্যধিক বাধাগ্রস্ত হয়।
স্প্যাস্টিক ডাইপ্লেজিয়া: এক্ষেত্রে শিশুর শরীরের নিচের অর্ধেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক শিশু সাপোর্ট নিয়ে হাঁটাচলা করতে পারে।
স্প্যাস্টিক হেমিপ্লেজিয়া: এক্ষেত্রে শরীরের শুধু এক পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পায়ের চেয়ে হাতেই বেশি সমস্যা দেখা দেয়। শিশুরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে।
২. ডিসকাইনেটিক সেরেব্রাল পালসি
এটি দ্বিতীয় প্রকারের সেরেব্রাল পালসি। লক্ষণসমূহ হল
– মাংসপেশির অস্বাভাবিক টোন এবং সংকোচন-প্রসারণ
– দুর্বল অঙ্গবিন্যাস
– চলাচলে ব্যথা অনুভূত হওয়া
– কথা বা গলধকরণে জটিলতা
৩. এটাক্সিক সেরেব্রাল পালসি
এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে কম। এতে ভারসাম্য বাধাগ্রস্ত হয়।
৪. মিক্সড সেরেব্রাল পালসি
এতে একাধিক ধরনের সিপির লক্ষণ একসাথে প্রকাশ পায়। স্প্যাস্টিক-ডিসকাইনেটিক সেরেব্রাল পালসি হল সবচেয়ে কমন পর্যায়ের সিপি।
সেরেব্রাল পালসি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
সিপি নির্ণয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট বা সহজ কোন পরীক্ষা নেই। অনেক সময়, পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটি নির্ধারণ করা হয়।
সেরেব্রাল পালসি প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে?
সিপি প্রতিরোধের কোন নিশ্চিত উপায় নেই। তবে ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
– সন্তান গ্রহণের পূর্বে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং সুস্থ থাকা
– গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা এবং ভিটামিন গ্রহণ
– গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেকআপে থাকা
– গর্ভাবস্থায় জটিলতামুক্ত থাকা
সেরেব্রাল পালসির প্রতিকার কী?
সিপির কোন প্রতিকার নেই। সময়ের সাথে এর জটিলতা বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তবে শিশু বয়সেই চিকিৎসা ও থেরাপি নিলে হাঁটাচলায় অসুবিধা কম দেখা দেয়।
সেরেব্রাল পালসি চিকিৎসা করা হয় কীভাবে?
লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকগণ চিকিৎসার পরিকল্পনা করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, থেরাপি এমনকি অপারেশনও করা হয়।
সেরেব্রাল পালসি কী অন্য কোন শারীরিক সমস্যা করতে পারে?
না। তবে অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো থাকে-
– দৃষ্টি ও শ্রবণে সমস্যা
– খিঁচুনি
– আবেগ ও আচারজনিত সমস্যা
– খাদ্যগ্রহণ ও পুষ্টিজনিত সমস্যা
– কোষ্ঠকাঠিন্য
– অস্থিসন্ধিতে সমস্যা
– ঘুমের সমস্যা
সেরেব্রাল পালসির শিশুদের ভবিষ্যত কেমন হবে?
এটা সম্পূর্ণভাবে প্রতিটি শিশুর নিজস্ব ধরনের উপর নির্ভর করে। তবে অধিকাংশ শিশুই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে, স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন হয়।
সামান্য কিছু সহায়তা পেলেই সেরেব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুরা স্বাভাবিক পড়ালেখা এবং সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সেরেব্রাল পালসি গাইডেন্স
প্রতিবেদন/ সামিউন ফাতীহা