আর ক‘দিন পরেই চিভেনিং স্কলারশিপের আবেদন শুরু হবে ২০২০-২১ সালের জন্য। বিশ্বের অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস স্কলারশিপ এটি। British Foreign and Commonwealth Office মূলত এটি প্রদান করে থাকে যুক্তরাজ্যের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ বছর মেয়াদী মাস্টার্স করার জন্য।
সারা বিশ্বের প্রায় ১৬০ টি দেশে এই স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন নেতৃবৃন্দ চিভেনিং স্কলার। যেমন- কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট , কলম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সচিব, পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ চিভেনিং স্কলার ছিলেন। লিডারশীপের ভিত্তিতে দেয়া স্কলারশিপের মধ্যে চিভেনিং ই সবচেয়ে সেরা। ডাক্তাররাও এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে এক-দু‘জন ডাক্তার এই স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন।
সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার হল এই স্কলারশিপের কোন ধাপেই শুধু বাংলাদেশীদের উপর নির্ভর করা হয় না, তাই ওদের চাওয়ার সাথে আপনার চাওয়া মিলে গেলেই পেয়ে যেতে পারেন ইউকে মাস্টার্সের টিকেট!
আবেদনের যোগ্যতা:
আবেদনের যোগ্য হতে হলে আপনার ব্যাচেলর ডিগ্রীর পর অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়সের কোন সীমা নেই।
সময়সীমা:
আবেদন শুরু হয় অগাস্ট মাসে, সাধারণত চলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
আবেদনের প্রক্রিয়া:
আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করতে হয়। স্কলারশিপের আবেদন ও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির আবেদন ভিন্নভাবে করতে হয়। স্কলারশিপের আবেদনের সময়ই ৩ টি ইউনিভার্সিটি চয়েস দিতে হয়। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য পরের বছরের ১১ জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে unconditional offer পেতে হবে।
যে কোন কোর্সেই আবেদন করতে পারেন। কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে সেই কোর্স যদি আপনার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে খুব সুন্দর করে ফিট হয়, তাহলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
রচনাবলি:
আবেদনের সময় চারটি ৫০০ শব্দের রচনা লিখতে হবে- লিডারশীপ এন্ড ইনফ্লুয়েন্স, নেটওয়ার্কিং, কেন যুক্তরাজ্যে পড়তে চান আর কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চান এবং ক্যারিয়ার প্ল্যান বিশদভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয় আবেদনে।
রচনাগুলো নিয়ে কিছু নির্দেশনা:
১। লিডারশীপ এন্ড ইনফ্লুয়েন্স: এই রচনাতে আপনার নেতৃত্বের গুণাবলি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে তুলে ধরতে হবে। আমার মতে, এই রচনাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নেতৃত্বের বিবরণ যে শুধু আপনার সেক্টরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে, এমন না। বরং সেটা ছোট বেলা থেকে আজ অবধি যে কোন কিছুই হতে পারে। যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেসব সিদ্ধান্ত কিভাবে পরিবর্তন ঘটিয়েছে বা প্রভাব ফেলেছে পরবর্তীতে সেটা ফুটিয়ে তুলতে হবে।
২। নেটওয়ার্কিং: কোন সন্দেহ নেই যে চিভেনিং স্কলার হিসেবে আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু নিশ্চয়ই এখনি আপনি সম্পর্কের মোটামুটি একটা শক্তিশালী জাল তৈরি করে ফেলেছেন? যেহেতু নেতৃত্বের একটা বড় দিক হল নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং তা বজায় রাখা। তো বিস্তারিত লিখে ফেলুন সেসব কাহিনী। অবশ্যই ৫০০ শব্দের ভেতর।
৩। লেখাপড়া সম্পর্কিত: এখানে মূলত আপনি কেন যুক্তরাজ্যকে বেছে নিয়েছেন এবং কেন বেছে নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই পড়তে চান তা বিশদভাবে লিখে ফেলুন। এটা আপনার সততার একটা পরীক্ষা। অযথা যুক্তরাজ্যকে বেশি না ফুলিয়ে একেবারে নিজের ভাবনাগুলো লিখে ফেলুন। সত্যি কথার দাম এদেশে অনেক!
৪। ক্যারিয়ার প্ল্যান: এ রচনায় আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বর্ণনা করতে পারেন। এখন কী চাচ্ছেন, ৫ বছর পরে কী চান, ১০ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান এসব গুছিয়ে লিখে ফেলুন।
কারো রচনা নকল করবেন না, তাতে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আর নিজের কাছে তো অপরাধী থাকবেনই! সম্পূর্ণ নিজের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান।
সবগুলো রচনাই যেন পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এটা একটু খেয়াল রাখবেন। সাধারণভাবে, একটু সময় নিয়ে লেখা উচিৎ, যদিও আমি নিজে কয়েক ঘন্টায় সবগুলো লিখেছিলাম। একেকজনের ধরণ একেক রকম।
তবে শুরু করে দিন পরিকল্পনা আজকে থেকেই!
লেখনীঃ
Dr Zuhayer Ahmed
MBBS (DMC), MPH (Health Economics)
MSc (On course, Public Health Intelligence)
Research Assistant
Department of Geography and Environmental Science,
University of Southampton, UK
Chevening Scholar (2018-19)
Foreign and Commonwealth Office, UK