Umbilical cord বা নাড়ি – পাতলা, লম্বা টিউবের মত আকৃতির যা নবজাতকের নাভিমূল এবং প্লাসেন্টা বা ফুলের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করে। (আমাদের দেশে অনেকেই প্লাসেন্টাকে ফুল বলে থাকে, বাচ্চা হবার পর যেটি মায়ের থেকে আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়) যেটি মাংসপেশি দিয়ে তৈরি, যা দিয়ে বাচ্চা জরায়ুর মাঝে মায়ের কাছ থেকে রক্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের বর্জ্য ইত্যাদি সবকিছু আদান প্রদান করে। বাচ্চা জন্মদানের পর অপ্রয়োজনীয় বলে এটি ফেলে দেওয়া হয়।কিছু ক্ষেত্রে এর উপরের আবরন দিয়ে কিছু চিকিৎসার কাজেও ব্যবহৃত হত। বিজ্ঞানের উন্নতির ধারায় আজ আমরা জানতে পারছি এই নাড়ি(কর্ড) ও ফুলের মাঝে থাকা এবং পরবর্তীতে জন্মের পর ফেলে দেয়া রক্তের গুরত্ব। বর্তমানে ৮০ টির অধিক রোগের নিরাময়ে এই রক্তের উপযুক্ত ব্যবহার রয়েছে বলে প্রমানিত। Stem cell এর প্রাচুর্যের কারনে Transplant ( বোন ম্যারো ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম। এক হিসাবে দেখা গিয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ হাজারের বেশি Transplant এই কর্ড ব্লাড দিয়ে ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। থ্যালাসেমিয়া নামক রক্তরোগের সাথে আজকাল অনেকেই পরিচিত। আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রক্তের এই রোগ ওষুধ দিয়ে নিরাময় যোগ্য নয়। তাই এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা বলতে গেলে শুধু নিয়মিত রক্ত প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আছে রক্ত সঞ্চালনজনিত নানারকম জটিলতা ও জীবনভর চিকিৎসা ব্যয়। নিরাময় এভাবে হয় না। থ্যালাসেমিয়া নিরাময় একমাত্র সম্ভব Bone Marrow Transplant এবং Gene Therapy এর মাধ্যমে। দ্বিতীয়টি এখনও বাইরের দেশ গুলতেই দুষ্প্রাপ্য। তাই একমাত্র ভরসা Bone Marrow Transplant.লক্ষাধিক মানুষ কে Bone Marrow Transplant করার মত ডোনার পাওয়াও বলতে গেলে অসম্ভব। বিকল্প হিসাবে উন্নত বিশ্ব কর্ড ব্লাড (cord blood)কেই বেছে নিয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই পক্রিয়া অনুসরণ করা হয় । শুধু থ্যালাসেমিয়া নয়, আমাদের সাম্প্রতিক চিন্তার মাঝে যোগ হয়েছে অটিজম। সন্তান একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ধরা পড়েনা বলে অনেক ক্ষেত্রেই এটি চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায়।এই ক্ষেত্রেও কর্ড ব্লাডের চমৎকার ভূমিকা রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্মের পর অপরিণত স্বল্পওজনের বাচ্চাকে চিকিৎসার জন্য নিওনেটাল আইসিইউ তে বেশ অনেকদিন রাখতে হয়। এসময়ে বাচ্চার রক্ত স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। বাচ্চাকে রক্ত দিতে হয়। আরেকজনের শরীরের রক্ত বাচ্চার জন্য অনেক সময় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।(এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত লিখা হবে পরে)। জন্মের পর কর্ড ব্লাড থেকে নির্দিষ্ট অংশ পৃথক করে রেখে দিলে প্রয়োজনে সেটিই বাচ্চার জন্য ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ বাচ্চা আগে যে রক্তের মাধ্যমে তার মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পেতো, সেই রক্তই সংরক্ষণ করলে তা জন্মের বেশ কিছুদিন পরেও প্রয়োজনে বাচ্চার শরীরে দেয়া যেতে পারে। যা ভিন্ন ডোনারের দেয়া রক্তের তুলনায় নিরাপদ। এত গুনের আধার এই কর্ড ব্লাড সংগ্রহ করা কিন্তু সহজ সাধ্য। এতে মা এবং বাচ্চার কারও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেনা। সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরন করে একে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ১০ বছর পর্যন্ত এর কার্যকারিতা ধরে রাখা যায়।নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্বিঘ্ন করতে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন প্রতিটি বাবা মায়ের জন্য। আজকের সঠিক সিদ্ধান্তই হয়ত আপনার সন্তানকে ভবিষ্যৎ সুরক্ষা দিবে। তথ্যসূত্র – ACOG, modern method of blood banking
ডা. আশরাফুল হক
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্ট ওএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর