প্ল্যাটফর্মের এডভাইজার মেম্বার এবং সিনিয়র মডারেটর ডা.তাহসিনা আফরিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলেন।
ডা.তাহসিনা বেড়ে উঠেছেন মফস্বল শহরে। বাবা মা দুজনেই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের চাকরির সুবাদে ছোট শহরেই পড়াশোনা করেন তিনি। কিন্তু নিজেকে প্রমান করার আগ্রহ নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছেন।ভালো স্কুল-কলেজই যে সব নয়, সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টিতে সচেষ্ট ছিলেন সবসময়।
ছোটবেলা থেকেই হতে চেয়েছেন ‘চিকিৎসক’। এমবিবিএস পাশ করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। দ্বিতীয় পেশাগত এবং চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ স্থান অর্জন করেন।
ডা.তাহসিনা জানান, ”পাস করে ২০১১সালে ঢাকা এসে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের সাবজেক্ট নিয়েছিলাম অনকোলজি। তখন অনকোলজির আজকালের মত এত হাইপ ছিল না। আমাকে অনেকে বলেছে মেডিসিনে অনার্স নিয়ে কেন অনকোলজিতে পড়ব? ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা সব সময়ই ছিল। তাই স্কয়ার হসপিটালের অনকোলজি ডিপার্টমেন্টে রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার হিসেবে জয়েন করি ২০১২সালে। সে বছরই জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে এমডি রেডিয়েশন অনকোলজিতে চান্স পাই।”
এখানেই দমে থাকেন নি তিনি। পাশাপাশি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন। ৩২তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৭ম স্থান অর্জন করেন। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে শখের বসে ৩৩তম বিসিএসে জেনারেল ক্যাডারে পরীক্ষা দেন।
কাছাকাছি সময়েই এমডি পার্ট ওয়ান এবং ৩৩তম বিসিএসের রিটেন পরীক্ষা হয়। প্রথম বারেই রেগুলার ব্যাচে এমডি পার্ট ওয়ান এবং বিসিএস ফরেন সার্ভিসে চান্স পেয়ে যান।
ডা.তাহসিনা বলেন, ”৩২তম বিসিএসের গেজেট হয়ে যাওয়াতে আর ফরেন ক্যাডারে জয়েন করব কিনা এই সিদ্ধান্ত হীনতায় ৩২তম বিসিএসের পোস্টিং এ আমার জেলা ফেনীর সোনাগাজী হেলথ কমপ্লেক্সে জয়েন করি। সেখানে প্রায় আট মাস সার্ভিস দেয়ার সুযোগ হয় আমার। এর মধ্যে ডাক্তারদের স্পেশাল ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এ ঢাকা বিয়ামের ৪০ তম ব্যাচে ফার্স্ট হয়ে ডিজি এওয়ার্ড পাই। ব্যক্তিগত ভাবে বিসিএস স্বাস্থ্য ছেড়ে আসার কোন ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু বাবার আগ্রহে শেষ পর্যন্ত সহকারী সচিব পদে ফরেন সার্ভিসে জয়েন করি ২০১৪ সালে।”
চাকরির নির্ধারিত ট্রেনিং গুলোর পাশাপাশি জাপানিজ ভাষা শেখার জন্য জাপানে আট মাসের ট্রেনিংও নেন তিনি। এর মধ্যে মন্ত্রনালয়ের আফ্রিকা, আমেরিকা, সংস্থাপনসহ বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রনালয় থেকে স্পেইনের বাংলাদেশ দূতাবাসে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে পোস্টিং পান। ২০১৯ সালে চাকরির সকল শর্ত পূরন সাপেক্ষে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি হয় ডা.তাহসিনা আফরিনের।
তিনি আরো জানান- ”যেহেতু আমি নিজ আগ্রহে ফরেন সার্ভিসে যাই নি, তাই ডাক্তারি পেশাটাকে আমি এখনো দারুন মিস করি। ক্যাম্পাস লাইফ থেকেই জুনিয়রদের সাথে সময় কাটাতে বা ওদের পরামর্শ দিতে আমার খুবই ভালো লাগত, প্ল্যাটফর্মের জন্মের মাধ্যমে যা গত ২০১৩সাল থেকে দিয়ে আসছি। বাংলাদেশের ডাক্তার সমাজের স্বার্থ, উন্নয়ন, ইমেইজ বৃদ্ধির যে কোন উদ্যোগে আমি সচেষ্ট থাকি। মন থেকে যে পেশাকে এত শ্রদ্ধা করি সে পেশার পেশাজীবিদেরও শ্রদ্ধা করি।
মাঝের একটা সময় আমি প্যালিয়েটিভ মেডিসিনের উপর বিশেষ ট্রেনিং করি বিএসএমএমইউ তে। সেই ট্রেনিং আমার জীবন বোধ অনেক পালটে দিয়েছে। খুব ইচ্ছা আছে, ফরেন সার্ভিসের চাকরির মাঝ পথে প্যালিয়েটিভের উপর আরো কিছু পড়াশোনা করে নেব। সেই সাথে অর্ধেকে রেখে আসা এমডি অনকোলজিটাও কমপ্লিট করার ইচ্ছা আছে।”
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ”মেডিকেল লাইফ খুব হতাশাপূর্ন করে রাখা হয় বলে আমাদের সব সময়েই মনে হয় এটা ছেড়ে অন্য কোথাও পালাই। কিন্তু আসল সত্য হল- একজন ডাক্তারের জীবন যতটা আলোকিত, আর কোন পেশাই এতটা আলোকিত নয়। তাই সবার উচিত আগে মেডিকেল সেক্টরেই নিজের ভাগ্য যাচাই করে নেয়া। এরপর জেনারেল ক্যাডার বা অন্য পেশায় যাবার ব্যাপারে চিন্তা করা। এতে করে নতুন জায়গা ভালো না লাগলে ফেরার পথ গুলো খোলা থাকবে।”
প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ডা.তাহসিনা আফরিনের জন্যে রইল শুভেচ্ছা এবং অফুরন্ত শুভকামনা। তিনি অনুজদের জন্যে অনুপ্রেরণা।
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটারঃ উর্বী সারাফ আনিকা
ফাইনাল ইয়ার
রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ।