একজন মানুষের দেহে প্রায় ৩ মিলিয়ন ঘর্মগ্রন্থি (sweat gland) রয়েছে। এই গ্রন্থি গুলির কাজ হচ্ছে শরীরের অভ্যান্তরীন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা। অভ্যান্তরীন তাপমাত্রা বেড়ে গেলে sweat gland গুলি অটোমেটিক ভাবে Stimulated হয়ে ঘাম বাহির করার মাধ্যমে ইভাপোরেশন প্রক্রিয়ায় শরিরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে।।।
কিন্ত যখন এই ঘাম বাহির হবার পরিমান অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তথা কেউ শীতল আবহাওয়ায় থাকলেও যদি তার শরীর ঘামাতে থাকে, কিংবা রাত্রে ঘামাতে থাকে কিংবা যে কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত ঘামাতে থাকে, তবে এই অবস্থাকে তখন Hyperhydrosis বলে।
ঘর্মগ্রন্থির প্রকারভেদ :
মানুষের দেহে দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি রয়েছে, যথা একরাইন ও এপোক্রাইন
একরাইন গ্রন্থি সারা শরিরে বিস্তৃত থাকে, অন্যদিকে এপোক্রাইন মূলত sclap, armpit, এবং groin এরিয়াতে থাকে।।
একরাইন গ্রন্থিথেকে যে ঘাম বের হয়, তা গন্ধহীন থাকে, আর এপোক্রাইন থেকে যা বের হয়, তা গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।।
Hyperhydrosis এর ক্ষেত্রে দুই ধরনের গ্রন্থি থেকেই ঘাম বাহির হয়ে থাকে।।
প্রকারভেদ :
Hyperhydrosis কে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে,
১। প্রাইমারি অথবা ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস :
এইক্ষেত্রে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে ঘাম বাহির হয়, যথা হাতের তালু, পায়ের পাতা, বগল এবং মাথা থেকে ঘাম বের হয়। প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস মূলত ফিজিওলজিক্যাল । রাগের সময়, ভয়ের সময় anxiety, ও stress, এর সময় অঅধিকহারে Sympathetic সিস্টেম stimulation এর কারণে ঘর্মগ্রন্থি গুলি অধিকহারে active হয়ে যায়। আর তখন
ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস তথা মাথা, মুখ, হাত, পা, থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে।। এইটার জন্য ভয়ের কোনো কারণ নাই। প্রাইমারী হাইপারহাইড্রোসিস অনেকের ক্ষেত্রে ফ্যামিলিগত ভাবে
ট্রান্সমিশন হতে পারে
২। সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস বা জেনারেলাইজড হাইপারহাইড্রোসিস :
কোন সিস্টেমিক রোগের কারণে যদি সারা শরির থেকে অস্বাভাবিক হাতে ঘাম বের হয়, তখন এইটাকে সেকেন্ডারি হাইপার হাইড্রোসিস বলা হয়।।
সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস এর কারণ সমূহ:
১. Hyperthirodism:
যখন থাইরয়েড হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়, তথা হাইপারথাইরয়েডিজম হয়, তখন অতিরিক্ত পরিমান ঘাম বের হয়, যাকে সেকেন্ডারি হাইপারথাইরয়েডিজম বলে।
হাইপারথাইরয়েডিজম হলে অতিরিক্ত ঘাম বের হবার কারণ :
থাইরয়েড হরমোনের নরমাল কাজ হচ্ছে শরিরের মেটাবলিক Activity এর ভারাসাম বজায় রাখা।
থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে কোষ লেভেলে মেটাবলিক কার্যক্রম বেড়ে যায়, এতে প্রচুর পরিমান ATP তৈরী হয়, এবং তাপ উৎপন্ন হয়,, এই অতিরিক্ত তাপ কে শরির থেকে বের করে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ঘাম বের
হয়ে থাকে।
২। ডায়াবেটিস :
সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস এর আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্রনিক ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এর কারণে যখন Diabetic Neuropathy ডেভেলপ করে, তখন অনেক গুলি নার্ভ ফাইবার যা ঘর্মগ্রন্থি কে নিয়ন্ত্রন করে, তা ড্যামেজ হয়ে যায়, তাই তখন sweat gland একবার active হলে তা অনেক্ষন ধারাবাহিক থাকে। এবং অতিরিক্ত ঘাম বের হয়।।
৩। হাইপোগ্লাইসেমিয়া :
হাইপোগ্লাইসেমিয়া তে ব্লাড সুগার কমে যায়, তখন শরিরের ভারসাম্যতা বজায় রাখার জন্য ফাইট এন্ড ফ্লাইট রেসপন্স হিসাবে Sympathetic pathway অধিকহারে stimulated হয়।
এবং এতে করে ঘর্মগ্রন্থি গুলি stimulated হয়ে প্রচুর ঘাম বের করে।।
৪। Heart attack :
হার্ট এটাকের সময়ও sympathetic over activity এর কারণে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়।।
৫। Drug induced Hyperhidrosis :
SSRI এবং Cholenergic ড্রাগসমূহের সাইড ইফেক্টে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে।
৬। adrenal gland disorder:
অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের ভিবিন্ন রোগের কারণে adreanline, এবং Cortisol হরমোনের পরিমান বেড়ে যায়, যেই হরমোনগুলি Cholenergic activity বাড়িয়ে দেয়, যা আল্টিমেটলি ঘর্মগ্রন্থি কে stimulate করে ঘামের পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের রোগ সমূহের মধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে:
ক.Pheochromocytoma
খ. Conn’s syndrome
গ. Cushing Sundrome
৭। হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা :
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসার জন্য যদি বেশি ডোজে লিভোথাইরক্সিন খাওয়া হয়,তাহলে Circulation এর মধ্যে থাইরয়েড হরমোনের পরিমান নরমাল লেভেলের চেয়ে বেশি হয়ে মেটাবলিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, সাথে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের কার্যক্রম ও বাড়িয়ে দেয়, যার কারণে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়।। এই জন্য অনেক সময় দেখা যায়, হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীরা লিভোথাইরক্সিন ব্যবহারের পর অতিরিক্ত ঘাম বের হবার অভিযোগ করে থাকে।।
সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস এর অন্যন্য কারণ হচ্ছে, Infectious disease, cancer, Lungs disease ইত্যাদি।।
Hyperhydrosis এর জটিলতা:
১। সামাজিক অবসাদ:
Hyperhidrosis এর কারণে রোগী সবচেয়ে বেশি যেই জটিলতায় ভূগে, তা হচ্ছে সামাজিক জটিলতা, অতিরিক্ত ঘামের কারণে জামা কাপড় দূর্ঘন্ধ হয়ে যায়, তাই রোগী সামাজিক অনুষ্ঠানে হতাশা, কিংবা ডিপ্রেশনে ভূগতে থাকে, যার থেকে একসময় ডিপ্রেসিভ ডিস’অর্ডার কিংবা অ্যাংজাইটি ডিস’অর্ডার ডেভেলেপ করতে পারে।
২। Jock itch, (Tinea cruris) Tinea pedis ইত্যাদি হতে পারে।
৩। স্কিন ইনিফেকশন, ওয়ার্ট ইত্যাদি ডেভেলপ করতে পারে।।
–
চিকিৎসা কি??
প্রথমত একটি কথা মনে রাখা চাই যে, hyperhidrosis এইটা স্বয়ং কোনো সমস্যা না,
বরং এইটা অন্যান্য কিছু রোগের উপসর্গ,, প্রাইমারি হাইপারহাইড্রোসিস এর ম্যানেজমেন্টের জন্য যা করবে,, তা হচ্ছে টেনশন এড়িয়ে চলবে, হাঁসিখুশী থাকবে, রাগ ভয় কে জয় করে নিবে।।
সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস এর ম্যানেজমেন্ট :
প্রথমত যেই সিস্টেমিক ডিজিজের কারণে হাইপারহাইড্রোসিস হচ্ছে তা নির্ণয় করবে, এবং তার চিকিৎসা নিবে।।
আর সিস্টেমিক ম্যানেজমেন্টের সাথে কিছু Antri-perspiration মেডিসিন দেওয়া যেতে পারে।
যারমধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে
Aluminium Chloride Hexahydrate Solution.
এইটা সপ্তাহে দুই রাত করে যেইসব জায়গায় বেশি ঘাম বের হয় সেখানে লোকালি লাগাবে।।
আর Sweating যদি অজানা কারণে হয়ে থাকে, এবং সোয়েটিং এর কারণে যদি রেগুলার কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে থাকে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে হাইপারহাইড্রোসিস নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য Anticholinergic Drug ব্যবহার করা যেতে পারে।
যার মধ্যে উল্যেখযোগ্য হচ্ছে,
Prophantheline Bromide:
Drug induced হাইপারহাইড্রোসিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য Prophantheline bromide ব্যবহার হয়ে থাকে।
আর অন্যান্য মেডিসিনের মধ্যে রয়েছে
Botulinum Toxin
Glycopyrroniuem bromide তবে ব্যায়বহুল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই গুলির ব্যবহার কম হয়।
মূল লেখক
Ismail Azhari
DCMC:13-14
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার
সুমাইয়া নার্গিস
শতামেক
সেশন ( ২০১৬/১৭)