জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস: ২ নভেম্বর

২ নভেম্বর ২০১৯:

মানুষের মহামূল্যবান জীবন ও দেহ সুরক্ষায় রক্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশকীয় উপাদান। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে শতকরা ৮ ভাগ (৫-৬ লিটার) রক্ত থাকে যা আমাদের দেহের জ্বালানী স্বরূপ। কৃত্রিমভাবে শরীরে রক্ত উৎপাদনের আপাতত কোন পন্থা নেই, তবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৪ কোটি ১০ লক্ষ ইউনিট রক্ত স্বেচ্ছায় দান করা হয়, এর ৩৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে। ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত যে কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে স্বেচ্ছায় রক্তদানের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ‘২ নভেম্বর’ জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হলেও এর মাত্র ২৫% আসে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের মাঝ থেকে। ৫০% রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে এবং বাকি ২৫% পেশাজীবি রক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়।

এ বছর রক্তদান কর্মসূচি উৎযাপন সম্পর্কিত এক বাণীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মত মানবিক কর্মসূচিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন স্বেচ্ছায় রক্তদানকে উদ্ভুদ্ধ করতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরাপদ রক্তের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭২ সালে বিএসএমএমইউ তে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ চালু করেন। তিনি এবারের রক্তদান দিবস উৎযাপন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ১০ জুন জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম দেশের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে প্রথম রক্তদান করেন। তারপর ১৯৭৮ সাল থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর ২ নভেম্বর এ দিবস পালন করা হয়।

রক্তদান সম্পর্কিত কিছু কথাঃ

★আমরা কেন রক্তদান করবো?
১. এর প্রথম ও প্রধান কারণ আপনার/আমার দানকৃত রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচাবে, এর থেকে মহৎ আর পরিতৃপ্তিকর কী হতে পারে?
২. হয়তো আপনার নিজের/পরিবারের এমন বিপদের মুহূর্তে অন্য কেউ এগিয়ে আসবে। কারণ আল্লাহ সকল কাজের পুরস্কার একইভাবে দিয়ে থাকেন।
৩. নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে জানা যায় শরীরে এইচআইভি(এইডস), সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়ার মত বড় কোন রোগের সংক্রমণ আছে কি না।
৪. নিয়মিত রক্তদানে হৃদরোগ ও হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
৫. ধর্মীয় দিক বিবেচনা করলে রক্তদান অতি পূণ্যের কাজ। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, ‘কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৩২)


★কারা রক্তদানের জন্য উপযুক্ত?

১. ৪৫ কিলোগ্রাম বা তার বেশী ওজনের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য যে কোন ব্যক্তি রক্তদানের উপযোগী।
২. রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ৭৫% বা তার উপরে থাকলে, রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে, সম্প্রতি ৬ মাস কোন দূর্ঘটনা বা বড় ধরনের কোন অপারেশন না হলে ৩/৪ মাস পরপর রক্ত দান করা যায়।
৩. শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ, যেমন- অ্যাজমা, হাঁপানি; কিংবা অন্যান্য রোগ যেমন- এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস, ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার, যক্ষা বা হৃদরোগ থাকলে রক্ত দান করা যাবে না। তবে, টাইফয়েড আক্রান্ত রোগী রক্ত দিতে পারে।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকালে, মহিলাদের গর্ভাবস্থায় বা মাসিক চলাকালীন সময়ে রক্তদান না করাই শ্রেয়।


★রক্তদানের সুবিধাঃ

১. প্রতি চারমাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন ব্লাড সেল তৈরীর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
২. নিয়মিত রক্তদানকারীর হার্ট ও লিভার অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে।
৩.রক্তদান অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, রক্তে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সহায়তা করে।
৪. নিয়মিত রক্ত দানে শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি (হিমোক্রোমাটোসিস) প্রতিরোধ করা যায়।
৫. রক্তদান স্থুলদেহী মানুষের ওজন কমাতে সহায়ক।

★রক্তদান পূর্ববর্তী সময় করণীয়ঃ

১. রক্তদাতা কোন কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেদিনের মত রক্তদান থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. রক্তদানের পূর্বে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বেশি পরিমাণ পানি বা পানি জাতীয় খাবার (ডাবের পানি, জুস, স্যালাইন) খেতে হবে। তবে তৈলাক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ব্লাড টেস্ট প্রভাবিত হতে পারে।
৩. রক্ত দেওয়ার আগের রাতে ডোনারের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো উচিত।
৪. প্লেটলেট ডোনারের ক্ষেত্রে দুইদিন আগে থেকে অ্যাসপিরিন গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
৫. যতদূর সম্ভব রক্তদানের আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা উচিত।

★রক্তদান পরবর্তী সময় করণীয়ঃ

১. রক্তদানের পর বেশ কিছুটা সময় শুয়ে থাকতে হবে। হুট করে দাঁড়ানো বা বসা উচিত নয়।
২. পরিমান মত পানি/ পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং পরবর্তী ২৪ ঘন্টা অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৩. রক্তদানের পর ভারী কোন কাজ বা ব্যায়াম না করাই ভালো।

পুরো রক্ত দান প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সময় লাগে না। এই অল্প সময়ে আরেকজন মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যায়। তাই আসুন আমরা নিজে রক্ত দিই, অন্যকে দিতে উৎসাহিত করি।

স্টাফ রিপোর্টার/ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মারুফ

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ: যা জানা দরকার

Sat Nov 2 , 2019
২ নভেম্বর ২০১৯: যেসকল ঔষধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত কিনতে পারবার কথা, তাদেরকেই বলা হয় ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ (Over the counter drug)। OTC ড্রাগ বা যেকোন ঔষধ আমরা কিনি কোথা থেকে? বাংলাদেশে খুচরা ঔষধ বিক্রয়ের দোকান, মডেল মেডিসিন শপ এবং মডেল ফার্মেসী এ ৩ ধরণের জায়গা হতে ঔষধ ক্রয় করা […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo