২৫ অক্টোবর ২০১৯:
সম্প্রতি ২২ অক্টোবর ২০১৯ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে উদ্বোধন করা হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইসিইউ।
বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হার্ট অ্যাটাক। বলা হয় বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্যে দায়ী হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ। বাংলাদেশেও হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ আজকাল খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭০ সালের পর উন্নত দেশে মৃত্যুহার কমে গেলেও বিশ্বব্যাপি মৃত্যুর জন্য হৃদরোগ দায়ী। একই সাথে, মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশগুলিতে হৃদরোগের সংখ্যা ও এর কারণে মৃত্যু দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও হৃদরোগ প্রাপ্ত ববয়স্কদের হয়, কিন্তু হৃদরোগের পূর্বাবস্থা অ্যাথেরোসক্লোরোসিস অনেক আগে থেকেই শুরু হয়।
এই হৃদরোগ নিরাময়ের গতি তরান্বিত করতেই গত ২২ অক্টোবর ২০১৯ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নতুন সাতটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি) উদ্বোধন করা হয়েছে, আরও চারটি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি, ৩৮টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে এখন এই হাসপাতালের আইসিইউ কমপ্লেক্সই সবচেয়ে বড়।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সম্প্রসারিত আধুনিক কার্ডিয়াক আইসিইউ ও অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্সের উদ্বোধন, ফলক উন্মোচন এবং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, “দেশের কেউ সার্জারির অভাবে মারা যাক, তা আমরা চাই না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছি। এর মাধ্যমে মানুষ চিকিৎসা সেবা আরও বেশি পাবে। বিশেষ করে, বাইপাস সার্জারি। এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি হয়ে থাকে। এখানেও চালু হয়েছে। নতুন ওটি যোগ হওয়ায় এই সার্জারি আরও বাড়বে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি করতে পারবেন পাঁচশ’ রোগী। এছাড়া, এখানে অন্য সার্জারির টার্গেট সাড়ে তিন হাজার। হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১৮টি পেড্রিয়াটিক আইসিইউ রয়েছে। এখানকার সব ওটি ও যন্ত্রপাতি অত্যাধুনিক। এখানে কার্ডিয়াক সার্জন, নার্সরা ভালো কাজ করছেন। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী যন্ত্রপাতি ঘুরে ঘুরে দেখলেন।
ইতোমধ্যে সার্জারি শুরু হয়ে গেছে। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থাও এগিয়ে নিয়ে যেতেই এই অভিনব উদ্যোগ ইনস্টিটিউটটির। প্রতিরক্ষামূলক চিকিৎসার দিকেও নজর দিচ্ছে। হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস যেন না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে পরিদর্শনকালে রোগীদের খোঁজখবর নেন মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি সম্প্রসারণ কাজ, নির্মাণাধীন নতুন ৫০টি কেবিন ব্লক, হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে পরিত্যক্ত জায়গা সংস্কার করে নতুন সড়ক নির্মাণ, নির্মাণাধীন ক্যাথল্যাব কমপ্লেক্স, হেল্পডেস্ক পরিদর্শন করেন।
এসময় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এতে সাতটি কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার ও ৫০টি আধুনিক আইসিইউ বেড বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বর্তমানে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় কার্ডিয়াক আইসিইউ। কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ বেড বৃদ্ধি পাওয়ায় হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবার মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত মানসম্মত হৃদরোগ সেবার পাশাপাশি বুকের পাজর না কেটে ছোট ছিদ্রের সাহায্যে কার্ডিয়াক অপারেশনের (মিনিমালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি: এমআইসিএস) মতো অত্যাধুনিক পদ্ধতির অপারেশন শুরু হয়েছে। গত ৩০ জুলাই থেকে দেশে প্রথমবারের মতো কনট্রাস্ট ব্যবহার না করে জটিল কিডনী রোগীদের হৃদরোগ চিকিৎসায় জিরো কনট্রাস্ট এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতির ব্যবহারও শুরু হয়েছে। এছাড়া, এই হাসপাতালে সর্বাধুনিক থ্রিডি ম্যাপিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল অ্যারিদমিয়া রোগীদেরও চিকিৎসা করা হচ্ছে নামমাত্র মূল্যে।
এসময় মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ হাসপাতালটির অন্য চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার/নুরুন্নাহার মিতু