৬ ডিসেম্বর ২০১৯
আঁচিল হচ্ছে ছোট রুক্ষ প্রবৃদ্ধি যা চামড়ার উপর অনেকটা ফুলকপির মত বৃদ্ধি অথবা কঠিন ফোস্কার মত দেখায়। এটা সাধারণত মানুষের হাতে বা পায়ে অথবা শরীরের অন্যান্য স্থানে দেখা দেয়। এগুলো চুলকায় না, ব্যথাও করে না। আঁচিলকে বিনাইন টিউমার বলা হয়।আঁচিল মূলত একটি বৃন্ত(stalk) এর সাহায্যে চামড়ার সাথে লেগে থাকে।
আঁচিল হওয়ার প্রবণতা নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান। তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আঁচিল হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
কারণ
মানবদেহে পাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) এর সংক্রমনের কারনে বিভিন্ন ধরনের আঁচিল হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত জানামতে প্রায় ১৩০ ধরনের পাপিলোমা ভাইরাস যা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে, পাওয়া গেছে।
• শরীরের ভাঁজে ভাঁজে অর্থাৎ যেখানে ত্বকে-ত্বকে অথবা কাপড়ের মাধ্যমে চামড়ায় ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়, সে সব স্থানেই আঁচিল জন্মাতে দেখা যায়।
• যেসব মানুষের ওজন তুলনামূলক ভাবে বেশি এবং যারা স্থুলকায় তাদের আঁচিল হওয়ার হারও অনেক বেশি, কারণ তাদের শরীরের ভাঁজের সংখ্যাও বেশি।
• অতিরিক্ত ওজন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, যাদের এধরনের ডায়াবেটিস আছে তাদের আঁচিল অন্যদের চেয়ে বেশি হয়। যেহেতু, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকে, সেহেতু আমরা সহজে বলতে পারি আঁচিল এর সাথে ইনসুলিন নামক হরমোনের সম্পর্ক আছে (ইনসুলিন হরমোন রক্তে সুগার এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে)।
• ইনসুলিন মাংসের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং এটা ত্বকের কোষের প্রতিরুপ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে। এভাবে পরবর্তীতে আঁচিল বিকাশেও ভুমিকা রাখে। একারণে আঁচিল হওয়াকে ডায়াবেটিসের পূর্ব সতর্ক সংকেত হিসেবে ধরা হয়। সবার হবে তা কিন্তু নয়, তবে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করে সচেতন থাকা উচিত।
• গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে (second trimester) আঁচিল হতে দেখা যায়। (গর্ভকালীন সময়ের ১৩-২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কে second trimester বলা হায়। অর্থাৎ ৪,৫,৬ নাম্বার মাস)
• যাদের Crohn’s disease থাকে, তাদের আঁচিল হওয়া মোটামুটি সাধারণ {এটা একধরণের chronic condition যেটা পরিপাক নালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিসার(diarrhea), পেট ব্যথা(abdominal pain), খিঁচুনি(cramping) , কোষ্ঠকাঠিন্য(constipation), মলদ্বারে রক্তক্ষরণ (rectal bleeding) হয়ে থাকে}। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাদের Crohn’s disease আছে, তাদের আঁচিল সাধারণত পায়ু পথের মুখে হয়ে থাকে।
• আঁচিল এর সাথে জিনগত একটা সম্পর্ক আছে, অর্থাৎ, একই পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও হতে পারে।
অনেক সময় অন্যান্য চর্মরোগ যেমনঃ Warts ও Moles এর সাথে আঁচিল গুলিয়ে যেতে পারে।যা সহজে নাও চিনা যেতে পারে। কিছু কিছু Moles ক্যানসারও সৃষ্টি করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আঁচিল হলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া।
Warts এর আভিধানিক অর্থ ‘আঁচিল’। কিন্তু বাস্তবে Warts এবং skin tags/আঁচিল এর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যেমনঃ
সাধারণত skin tags এর তল মসৃণ ও নমনীয় হয়। কিন্তু,Warts এর উপরিতল রুক্ষ এবং অনিয়মিত হয়ে থাকে।
Skin tags গাঁটযুক্ত(knobbly) এবং ত্বকের সাথে ঝুলে থাকে। কিন্তু, Warts ত্বক থেকে সামান্য উঁচু অথবা সমতল হয় ।
Skin tags সংক্রামক নয়, Warts অনেক সহজে ছড়ায় ।
তাই বাসায় নিজে নিজে আঁচিল অপসারণের চেষ্টা করা উচিত না।বাসায় নিজে নিজে আঁচিল অপসারণের পক্ষে সাধারণত মত দেয়া হয় না। কারণ এতে রক্তপাত এবং ইনফেকশন (Infection) হতে পারে।
আঁচিলের চিকিৎসা
মেডিকেল ট্রিটমেন্ট
> স্যালিসিলিক এসিড সমৃদ্ধ ওষুধ।
> ইমিকুইমড একটি প্রচলিত ক্রিম যা শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে আঁচিলের ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
সার্জিকাল ট্রিটমেন্ট
আঁচিল অপসারণে কিছু নিরাপদ পদ্ধতি হলো
Cauterization: এতে একটি ডিভাইস এর মাধ্যমে আঁচিল পুড়িয়ে ফেলা হয়।
Cryosurgery: এতে তরল নাইট্রোজেন ( Liquid nitrogen) এর মাধ্যমে আঁচিল হিমায়িত (Frozen) করা হয়।
Ligation: আঁচিলের রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
Excision: এই পদ্ধতিতে আঁচিল কেটে ফেলা হয় scalpel এর সাহায্যে।
**খুব ছোট আঁচিলগুলোর ক্ষেত্রে ডেন্টাল ফ্লস(Dental Floss) বা চিকন সুতো (Cotton thread) গোঁড়ায় বেধে রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেও আঁচিল অপসারণ করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার/নুরুন্নাহার মিতু