কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর মোবারক হোসেনসহ কয়েকজন চিকিৎসকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমানের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার পরে ০২৪৮৯৫১০৪১ এই নাম্বার থেকে ডা. মীর মোশারফ হোসেন’কে জীবননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর মোশারফ হোসেন জানান, বুধবার সকালে সহকারী কমিশনার মতিউর রহমান তার এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) নেয়ার জন্য ভূমি অফিসের একজন পিয়নকে তার কার্যালয়ে পাঠান।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উক্ত এসি ল্যান্ডের সাথে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে, চা এর দাওয়াত দেন এবং এসিল্যান্ডকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে আসতে বলেন এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসিআর দেয়া হবে বলে জানান।
কিছুক্ষণ পর এসিল্যান্ড সেখানে উপস্থিত হন। তখন তার রক্তচাপ মাপা হয় এবং রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। পরে নিয়মানুযায়ী তাকে ইসিজি করার জন্য হাসপাতালে দোতলায় পাঠানো হয়। প্রথমে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান এবং পরে পরীক্ষার জন্য দোতালায় যান।
সেখানে যাওয়ার পর কর্তব্যরত টেকনেশিয়ান তার শার্ট খুলতে বললে তিনি রেগে সেখান থেকে চলে আসেন। এরপর তিনি ডা. মীর মোশারফ হোসেনের কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় তাকে গালমন্দ করেন। চিৎকার চেচামেচি শুনে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রুমের সামনে ভিড় জমালে তিনি তাদেরও গালমন্দ করেন।
এসময় ভূমি অফিসের নাজির রাকিব হোসেন ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে হাসপাতালে ঢুকে সবাইকে গালিগালাজ ও হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালে মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. জাকির হোসেন, সার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আনোয়ার হোসেন, মেডিকেল অফিসার ডা. মোরশেদের ওপর চড়াও হন।
এসিআর স্বাক্ষরের জন্য কেন তাকে স্বশরীরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হল, তা নিয়ে চিকিৎসকদের ক্রমাগত হুমকি ধামকি দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ডা. জাকির হোসেনের জামার কলার চেপে ধরে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং সাথে থাকা অস্ত্রও প্রদর্শন করেন।
এসময় আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বের করে দিয়ে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় হামলাকারীরা।
এসি ল্যান্ডের সংগে আসা লোকজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিনের কনসাল্টেন্টকেও মারধর করেন।
উল্লেখ্য অভিযুক্ত সহকারী কমিশনার মতিউর রহমান ৩৩ তম বিসিএস এ পদায়নকৃত একজন ক্যাডার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর মোশারফ হোসেন ২৫ তম বিসিএস এ পদায়নকৃত স্বাস্থ্য ক্যাডার।
এদিকে হামলার পর অভিযুক্ত সহকারী কমিশনার ও ভূমি অফিসের নাজির রাকিব হোসেনের শাস্তির দাবিতে দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এছাড়াও তারা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন।
খবর পেয়ে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. এহশানুল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিন, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রামানন্দ সহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
পরে ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে তারা এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজে যোগ দেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স তৃপ্তি রানী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মিজানুর রহমান বলেন, একজন বিসিএস অফিসারের নেতৃত্বে এ হামলার আমরা নিন্দা জানাই। এসিল্যান্ড মতিউর রহমান, নাজির রাকিব হোসেনসহ হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের দোতলায় ইসিজি করতে গেলে এক নারী টেকনোলজিস্ট আমাকে জামা-কাপড় খুলতে বলেন। এতে আমি অপমানিত বোধ করি এবং সেখান থেকে চলে আসি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের সঙ্গে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত ভূমি অফিসের নাজির রাকিব হোসেন দাবি করেন, এসিআর নেয়ার সময় আমি এসিল্যান্ড স্যারের সঙ্গে ছিলাম। সন্ত্রাসী নিয়ে হামলার অভিযোগ সঠিক নয়।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহে এলিদ মাইনুল আমিন বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।