১২ ডিসেম্বর ২০১৯
কুমিল্লার কুচাইতলীতে রাস্তার পাশে পড়ে ছিলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানসম্ভবা মহিলা। দুঃখজনক হলেও নির্মম সত্য, হাজার লোক পাশে দিয়ে গেলেও কেউ একটিবার মানবতার চোখে ফিরে তাকায় নি এই মায়ের দিকে। তাকালেও কে বা নিজে থেকে যেচে দরদ দেখাতে যাবে কিংবা “নিজের কাঁধে ঝামেলা” আনতে যাবে।
কিন্তু এই করুণ দৃশ্য চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২৭ তম ব্যাচের দুই জন ছাত্র মোঃ ওমর ফারুক এবং মোঃ জোনায়েদ তৌফিকের। কারণ তারা ইতিমধ্যে মুখস্থ করে ফেলেছেন ডাক্তারিবিদ্যার “হিপোক্রেটিক ওথ”, গ্রহণ করেছেন মানবসেবার মহান শপথ।
ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. প্রণব এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. সৈকত দেব, ডা. জুবায়ের, ডা. সুপ্রিয় পালের সহযোগিতায় তারা এই অসহায় মহিলাকে নিয়ে আসেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মা ও প্রসূতি বিভাগে। উক্ত বিভাগের চিকিৎসক-নার্স এবং অন্যান্যদের ঐকান্তিক চেষ্টায় মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাটি জন্ম দেন একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের। কিন্তু শিশুসন্তান জন্ম দিয়েই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হন মা। মর্মান্তিক সত্য, এই নিষ্পাপ শিশু কোনদিন জানবে না তার বাবা-মার পরিচয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় থানার হেফাজতে শিশুটিকে স্থানান্তর করে তাদের মহৎ কাজের সমাপ্তি করেন কুমিল্লা মেডিকেলের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকগণ। জানা যায়, শিশুটিকে কোনো সুহৃদয়বান ব্যক্তি দত্তক হিসেবে নিয়ে গেছেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী রানা জামান বলেন, “ধন্যবাদ সবাইকে মানবতার সেবায় এই অসাধারণ দৃষ্টান্ত দেখানোতে। আবারো প্রমাণ হলো ডাক্তার বা মেডিকেল স্টুডেন্টদের কাছে মানুষের শ্রেনীবিভেদ নেই, এদের কাছে সকল মানুষ সমান। এদের কাছে রোগী হিসেবে যারা আসেন, তারা রোগী। কখনোও মন্ত্রী রোগী, এমপি রোগী, মুচি রোগী বলে কোন শব্দ তাদের মুখ থেকে শুনবেন না। তাদের কাছে “মানুষ অর্থ মানুষ”, “রোগী অর্থ রোগী”।”
তথ্যসূত্র: রানা জামান
প্রতিবেদন/সামিউন ফাতীহা