প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ জুন ২০২০, রবিবার
বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত না করায় আজ ২৮ জুন, ২০২০ (রবিবার) থেকে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার এবং সহকারী রেজিস্ট্রারবৃন্দের পক্ষ থেকে হাসপাতালের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে চিকিৎসকেরা জানান কোভিড-১৯ মহামারীতে হাসপাতাল থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা নিরলসভাবে রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বার বার মৌখিক ও লিখিতভাবে সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য আবেদন করা হলেও কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য করে নি। হাসপাতালের স্থায়ী-অস্থায়ী সকল চিকিৎসকই রোগীদের সেবা দিয়েছেন এই মহামারিতে। কিন্তু অস্থায়ী পোস্টে থাকা রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রারবৃন্দকে স্বীকার করতে হয়েছে বিশাল বেতন বৈষম্য। উপরন্তু হাসপাতাল থেকে পিপিই এর অপ্রতুলতা থাকায় নিজ অর্থে পিপিই সংগ্রহ করে রোগীর সেবা দিয়ে গিয়েছেন তারা। তারপরেও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের বেতন দেয়া হয় নি, ইদ বোনাস কর্তন করা হয়েছে, বৈশাখী ভাতা কর্তন করা হয়েছে। যেই বেতন-বোনাস গত বছরও ঠিক ছিল, তা এই মহামারীর সময়ে বাতিল করে দেয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসকদের পরিবারের উপর এক অসহনীয় চাপ। এক দিকে মৃত্যু ঝুঁকি, অন্যদিকে পিপিই, বেতন, বোনাস সবকিছুর অপ্রতুলতা!
এছাড়াও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের কতৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার জন্যে পিসিআর মেশিন থাকার পরেও কোভিড-১৯ টেস্ট চালু করতে দেরি হওয়ায় রোগীদের বহু ভোগান্তি পোহাতে হয়। রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় বহু চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে চলে আসেন। এছাড়াও হাসপাতালে ছিল না কোভিড/ নন কোভিড রোগীর ভর্তির আলাদা প্রটোকল। এমনকি হাসপাতাল কতৃপক্ষ করোনা রোগীর সেবার জন্য সকল চিকিৎসককে একসাথে রোগীর সংস্পর্শে না আসার আন্তর্জাতিক পরামর্শ অর্থাৎ চিকিৎসকদের রোস্টার পদ্ধতি অবলম্বন করে নি। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে এবং কতৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার ফলে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালের বহু চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৯ জুন মহাপরিচালক বরাবর হাসপাতালের চিকিৎসকের কর্মপরিবেশ উন্নত ও সুরক্ষিত করার ৫ টি প্রস্তাবনা সহ আবেদনপত্র পেশ করা হয়।
আবেদনে সকল অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের চাকরি স্থায়ীকরণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এছাড়াও আবেদনপত্রে আরও ছিল সকল চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করা, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যদের কোভিড টেস্ট ও চিকিৎসার দায়িত্ব বহন করা, কোভিড/ নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নীতিমালা প্রদান ও বারডেমে কর্তব্যরত কোন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এই যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবীদাওয়াগুলো হাসপাতাল কতৃপক্ষ বার বার অগ্রাহ্য করা আসায় এবং আবেদনকৃত ২৭ জুনের মধ্যে চিকিৎসকদের চাকরী স্থায়ীকরণে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় চিকিৎসকেরা আজ ২৮ জুন থেকে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন।
চিকিৎসকেরা জানান তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হলে কোভিড অথবা নন কোভিড সাসপেক্ট রোগী সহ সকল রোগীর সেবা দানের জন্য তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। হাসপাতাল কতৃপক্ষ চিকিৎসকদের চাকরী স্থায়ীকরণের দাবি মেনে নিয়ে চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলেই সকলে প্রত্যাশা করছেন।