৪ ডিসেম্বর ২০১৯
অধ্যাপক ডা. মনসুর খলিল। ১৯৬১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন দেশের এই মেধাবী সন্তান। ওনার পিতা ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
মেট্রিক ইন্টার দুটোতেই ৪ বিষয়ে স্টার মার্কসহ সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১৫ তম স্থান দখল করে সফলতার স্বাক্ষর রেখে ভর্তির সুযোগ পান ঢাকা মেডিকেল কলেজে। কিন্তু আরেক কিংবদন্তী সহোদর অধ্যাপক ডা. মহসিন খলিলের টানে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।
মেধার কারণে পুরো মেডিকেল কলেজে সবাই এক নামে চিনে মনসুর খলিলকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ১ম পেশাগত পরীক্ষায় প্রথম, ২য় ও ৩য় পেশাগত পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং ৪র্থ বা ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষায় আবারও প্রথম স্থান দখল করে রেকর্ড মার্কস নিয়ে এমবিবিএস পাশ করেন ডা. মনসুর খলিল।
তুখোড় মেধাবী এই চিকিৎসক ৮ম বিসিএসেও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন। তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমান বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এনাটমিতে থিসিস করেন রেকর্ড নম্বর সহকারে। জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনাটমিতে পিএইচডি করতে যান, ১৯৯৯ সালে সেখানেও ইতিহাস সৃষ্টি করে স্পেশাল রিকমেন্ডেশন পান। গবেষণার আকর্ষণীয় অফার, উন্নত বিশ্বের যত সব লোভনীয় প্রস্তাব পায়ে ঠেলে সরকারী বেতনের টাকায় হাজার হাজার চিকিৎসকের ভিত্তি গড়ে দিতে ডা. মনসুর খলিল দেশে ফিরে আসলেন নীরবে নিভৃতে।
জ্ঞানপিপাসা মেটাতে এবারে ডা. মনসুর খলিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভেটেরিনারি এনাটমিতে মাস্টার্স এবং সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে ফরেন্সিক মেডিসিনে ডিপ্লোমা ও এমসিপিএস করেন। একে একে বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং সবশেষে কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নির্জন এক কেবিনে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক ডা. মনসুর খলিল।
দুইটা শার্ট, দুইটা প্যান্ট, একটা চৌকি, একটা সাধারণ চেয়ার টেবিলে তার একাকী সংসার, বিয়েটাও করেন নি। দেশের আনাচে কানাচে মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক গড়ার অক্লান্ত পরিশ্রমে মনোনিবেশ করেন। মৃত্যুর পর তার ব্যাংক একাউন্টে মাত্র দুই হাজার টাকা পাওয়া যায়।
অথচ একটা জাতীয় দৈনিকেও এই মহান ব্যক্তিটির ত্যাগ তিতিক্ষা, অনাড়ম্বর জীবন যাপন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি শিক্ষক হিসেবে নিবেদন, জীবনদর্শন- জীবনাচরণ নিয়ে একটা নিউজ ছাপা হলো না। এরকম শত শত চিকিৎসক দেশের আনাচে কানাচে নীরবে নিভৃতে মানবসেবা করে যাচ্ছেন, মফস্বল শহরে বসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ার কারখানা পরিচালনা করছেন, তাদের নিয়ে কোনদিনই কোন হৈচৈ হয় না!
তথ্যসূত্র: ডা. গোলাম রাব্বি চৌধুরী
প্রতিবেদন/সামিউন ফাতীহা