“গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ” রেনিটিডিনে ক্যান্সারের জীবাণু বৃত্তান্ত

সম্প্রতি জনপ্রিয় “গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ” (এন্টি আলসার ড্রাগ) রেনিটিডিন এ ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আসুন জেনে নেই এ বিতর্কের আদ্যোপান্ত।

আন্তর্জাতিক গবেষনাঃ
গত ১৩ ই সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি(ইএমএ) এর যৌথভাবে নেয়া সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানা যায় যে, রেনিটিডিন ব্র‍্যান্ডের জেনট্যাক ও এছাড়া আরো চারটির বেশি কোম্পানির তৈরি রেনিটিডিন ব্র‍্যান্ডের ওষুধগুলোতে এন-নাইট্রোসোডাইমিথাইলএমিন (এনএমডিএ) নামক এক ধরনের কারসিনোজেনিক (ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ) উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।

বিশ্ববাজারে রেনিটিডিন ব্র‍্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতিঃ
১। যুক্তরাষ্ট্র স্যান্ডোজের তৈরি এই রেনিটিডিন ক্যাপসুলের মধ্যে এন-নাইট্রোসোডাইমিথাইলএমিন নামক পরিবেশ দূষণকারী এ উপাদানের উচ্চমাত্রার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর কোম্পানিটি তাদের এই ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ফলে বিশ্ববাজার থেকেও ওষুধটি তুলে নেয়ার ঘোষনা এসেছে।

গ্লোবাল নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপোটেক্স, প্রো ডক লিমিটেড, স্যানিস হেলথ এবং সিভেম ফার্মাসিউটিক্যালস নিজেদের রেনিটিডিন জাতীয় ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে চেয়েছে।

২। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন পূর্ব সতর্কতা হিসেবে রেনিটিডিন ভারতের বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি বিশ্ববাজার থেকেও তারা ট্যাবলেটটি প্রত্যাহার করে নিতে চায়।

৩। চলতি মাসের শুরুর দিকে কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক করে দেয় যে, রেনিটিডিন জাতীয় ওষুধে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণু পাওয়া গেছে। সেখানে বলা হয়, পাকস্থলির প্রদাহ এসব ওষুধে কমে গেলেও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ওই সময় বলা হয়, সনোফির এসএ জেনট্যাক ট্যাবলেটে এ ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। রেনিটিডিন গ্রুপের রেনট্যাক, রেনট্যাক-ওডি, আর-লক, রেনিটিনও গ্যাসের ট্যাবলেট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এতকিছুর পরেও ওই ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

বিশ্বের বাজার থেকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন তাদের রেনিটিডিন জাতীয় ট্যাবলেট প্রত্যাহার করে নিতে চাইলেও অন্যন্য সংস্থার তৈরি এ জাতীয় ওষুধের কী হবে, তা এখনো জানা যায়নি।
গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রেনিটিডিন উৎপাদন, বাজারজাত ও সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থানঃ
বাংলাদেশের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (ডিজিডিএ) এর পক্ষ থেকে ভারতের মেসার্স সারাকা ল্যাবরেটরিজ লিঃ এবং Dr. Reddy নামক কাঁচামাল প্রস্তুস্কারক প্রতিষ্ঠান থেকে রেনিটিডিন ঔষধের কাঁচামাল রেনিটিডিন হাইড্রোক্লোরিক এসিড আমদানি, এই কাঁচামাল দিয়ে ঔষধ তৈরী ও বিক্রির উপর সাময়িকভাবে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ডিজিডিএর অফিসে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস(বিএপিআই) এর রিপ্রেজেন্টেটিভ দের সাথে এক মিটিং এ এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ডিজিডিএর ড্রাগ সুপার সাবরিনা আলম জানান যে, বাজার থেকে এই ওষুধটি সরিয়ে ফেলার ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এভাবে প্রতিটি দেশের সতর্কতা গ্রহনের মাধ্যমে বিশ্ববাজার থেকে এই ঔষধ নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে, চিকিৎসক দের এই ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রাইব করা বন্ধ করলেও এর ব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে। স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবেও এই উদ্যোগ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

স্টাফ রিপোর্টার/ লাইবা ইসাবেলা

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত

Tue Oct 1 , 2019
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পালিত হলো বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্ব হার্ট দিবস ২০১৯ উপলক্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলোজি ডিপার্টমেন্ট একটি সচেতনতামূলক র‍্যালি এবং চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে। হৃদরোগ এখন বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি। কিন্তু কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo