১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
অপরিণত নবজাতক শিশুর শরীরে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। অপরিণত নবজাতকের চোখও অপরিণত থাকে বিধায় চোখের নানা রোগ দেখা দেয়। রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি (Retinopathy of Prematurity – ROP) অন্যতম একটি রোগ।
রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি, রেটিনার রক্তনালীর একটি রোগ। অপরিণত নবজাতক শিশুর রেটিনার রক্তনালি সঠিক বৃদ্ধি হয় না। ফলে রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রেটিনা ছিড়ে (রেটিনাল ডিটাচমেন্ট) যেতে পারে।
যে সকল শিশু গর্ভধারণের পর ৩৫ সপ্তাহের পূর্বে জন্মগ্রহণ করে (প্রিম্যাচ্যুর) এবং যাদের ওজন ২ কেজির কম (লো বার্থ ওয়েট) সে সকল শিশুই অপরিণত নবজাতক শিশু। যে সকল অপরিণত নবজাতক শিশু জটিল সমস্যার জন্য নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকে তাদের মধ্যে আরওপি(ROP) এর লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালের ভিট্রিও-রেটিনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ, বাংলাদেশের চক্ষু চিকিৎসায় এক সুপরিচিত ও উজ্জ্বলতম নাম। তিনি একজন প্রথিতযশা ভিট্রিও-রেটিনা সার্জন, দীর্ঘদিন যাবত চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে আসছেন। তারমধ্যে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি স্ক্রিনিং অন্যতম। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শতকরা ১৪ জন অপরিণত বা প্রিম্যাচ্যুর(নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই) এবং শতকরা ২০ জন স্বল্পওজনের বা লো বার্থ ওয়েট নবজাতক শিশুর জন্ম হয়। তাদের মধ্যে ২০-৪০ শতাংশ শিশু রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি রোগে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে নবজাতক শিশুর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও এর সেবা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিশুরা বেঁচে থাকছে ঠিকই, কিন্তু অন্ধত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠছে।অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ আরো বলেন, আরওপি আক্রান্ত নবজাতকের মধ্যে ৮-১০ শতাংশের চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই নবজাতক জন্মের ৩০ দিনের মধ্যে স্ক্রিনিং বা চেক আপ করতে হবে, দেখতে হবে রেটিনার রক্তনালির স্বভাবিক না অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে। স্ক্রিনিংয়ের জন্য রেটিনা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। সকল চক্ষু চিকিৎসকই পেরিফেরিতেও স্ক্রিনিং এবং চিকিৎসা প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে পারবেন।
আরওপির সাধারণত তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে – লেজার, ইন্ট্রা-ভিট্রিয়াল এন্টি-ভিইজিএফ(Anti-VEGF=Anti Vascular Endothelial Growth Factor) ইঞ্জেকশন এবং সার্জারী। এসব চিকিৎসা পদ্ধতি এখন আমাদের দেশেই সম্ভব। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ), জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল এবং আরও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আরওপির চিকিৎসা হয়ে থাকে।
এ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ দেখলেন যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিশাল একটা অংশ অন্ধত্ব বরণ করছে যা আমাদের সচেতনতা এবং দ্রুত স্ক্রিনিং এ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই পরিস্থিতি তাকে ব্যথিত করেছে এবং সেই প্রেরণা থেকে শুধুমাত্র একটি রোগের উপর একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখার প্রয়াস পেয়েছেন।
গত ৮ ডিসেম্বর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এ এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি” নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন। বইটি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ জানিয়েছেন, বইটিতে আরওপির বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি সহ রোগটির বিস্তারিত যেমন রয়েছেই তাছাড়াও বাংলাদেশে আরওপির ইন্সিডেন্স ও প্রিভিলেন্স রেট এবং স্ক্রিনিং নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ এবং দৃষ্টি নিয়ে কাজ করা এনজিও-র ভূমিকা অপরিসীম। তারা সকলেই বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন। বইটিতে আরওপি সকলের জন্য সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই আমাদের নবজাতকদের রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচ্যুরিটি পরবর্তী অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করতে পারে।
বি.দ্র. বইটি পেতে চাইলে অথবা আরওপি(ROP) সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে নিম্নোক্ত ইমেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
[email protected] (অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট)
[email protected] (ডা. রকিব, HMO, NIOH)
স্টাফ রিপোর্টার/ডা. রকিবুল হাসান