প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. শুভাগত চৌধুরী
কোভিড ১৯ এর মৃতুহারঃ
কোভিড ১৯ এর মৃত্যুহার কী সঠিক ভাবে জানা গেছে? কত ভয়ঙ্কর এই রোগ তা কী আঁচ করা সম্ভব হয়েছে?
Case fatality rate অর্থাৎ কোন রোগে মৃত্যুহার দেশে দেশে ভীষণ ভিন্ন। এমনকি দেশের ভেতরেও তা সপ্তায় সপ্তায় বদলাচ্ছে।
* জার্মানিতে ১০০ প্রমানিত কোভিড ১৯ রোগীর মধ্যে মৃত্যু তিনজনের কম, অন্যদিকে ইতালিতে মৃত্যুহার এর ৫ গুণ বেশি।
* সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণ, সাবধানী টেস্টিং, রোগীর সংস্পর্শ অনুসরণ, আইসোলেশন এর ক্ষেত্রে খুব নিখুঁত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যার কারণে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ৪৪২৭ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১০ জন।
* আমেরিকায় মৃত্যু হার বাড়ছে খুব দ্রুতগতিতে।
গত মার্চ মাসে মৃত্যুহার ছিল ১.৩৬ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসে হয়েছে ২.৬৭ শতাংশ। বৃহস্পতিবার একটি স্পাইক ৫ শতাংশ, নিউ ইয়র্ক সিটির মৃত্যু হারের জন্য। এর মানে কোভিড ১৯ খুব ভয়ঙ্কর রোগে পরিণত হচ্ছে।
মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ার অর্থ হল রোগটির ক্রম অগ্রসর।
অনেক পরীক্ষা ছাড়া মোট কতজন সংক্রমিত হয়েছে তা বের করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পরীক্ষা না করলে, কোন জনগোষ্ঠীতে বা জনমিতি গ্রুপে রোগটির প্রানাশঙ্কা বোঝাও কঠিন। আর উপসর্গহীন কোন ব্যক্তি সংক্রমিত হলে নির্ণয় করা পরীক্ষা ছাড়া অসম্ভব প্রায়।
পরীক্ষার ভুল-ত্রুটি এবং জনস্বাস্থ্য সারভেলেন্সের অভাব মৃত্যুহার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দুর্বলতার অন্যতম কারণ।
এখন করোনা ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর তা নির্ভর করছে কত দিন এটি থাকবে তার উপর।
একটি প্রতিষেধক টিকা তৈরি করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে একমাত্র প্রতিরোধের উপায় হচ্ছে- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
করোনা ভাইরাসের গতিপ্রকৃতিঃ
SARS CoV2 ভাইরাসজনিত রোগটি খুবই ছোঁয়াচে এবং ভয়ানক। এর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো ভবিষ্যতবানী করাও বেশ কঠিন।
* এটি কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে, আবার কোন চিহ্ন না রেখেও প্রস্থান করতে পারে।
* প্রায় সময় মৃদু থেকে মাঝারী উপর্সগ থাকা ব্যক্তি ঘরেই সেরে উঠে। উপসর্গগুলো আসে ঢেউ এর মত, একটার পর একটা।
* অনেক সময় আক্রান্ত রোগী মনে করে সেরে উঠেছে, এমন সময় মোড় নিতে পারে খারাপের দিকে।
* যারা সেরে উঠছেন তাদের মধ্যেও দীর্ঘ মেয়াদী ফলাফল বোঝা যাবে না এখন।
* এটিকে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বলে মনে করা হলেও অনেক দেহতন্ত্রকে আক্রান্ত করতে পারে, যেমন হৃদযন্ত্র, কিডনি, মগজ, লিভার।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতাঃ
ভাইরাসের virulence হল ভাইরাসটির রোগ সংক্রমণের ক্ষমতা।
* বয়স্ক ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড ১৯ এর পরিণতি ভাল নয়।
* যাদের দীর্ঘমেয়াদি কোন রোগ আছে মৃত্যুহার তাদের মধ্যে বেশি।
* নিম্ন আয় অঞ্চল ও জন গোষ্ঠীতে এর প্রকোপ বেশি।
* আফ্রিকান ও আমেরিকান দের মধ্যে বেশি মৃত্যু হার। জার্মানি, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া মৃত্যু হার অনেক কম (এসব দেশে পরীক্ষা অনেক বেশি করা হচ্ছে তা একটি কারণ)।
আমরা কোভিড ১৯ এর মৃত্যু হার নিয়ে কথা বলি কম, বেশি বলি এর ছোঁয়াচে চরিত্র নিয়ে। হয়তো এর পুরোটা বুঝতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
(ঈষৎ পরিবর্তিত)
অনুলেখনঃ সুবহে জামিল সুবাহ