প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৫০
‘unlucky-14’
লেখকঃ
মোকাররম আলাভী, থ্রি গরজেস ইউনিভার্সিটি , ইছাং, হুবেই, চীন
আরও একটি ১৪ ফেব্রুয়ারী দুয়োরে কড়া নাড়ছে, আমি আবারো হারিয়ে যাচ্ছি ফেলে আসা দিনগুলির রোমন্থনে।
স্মৃতি- বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে খুঁজি আপন অস্তিত্ব। পাণ্ডুলিপি তা ঠিক তার উলটোও হতে পারত। হয় নি-তা নিয়ে আক্ষেপও নেই।তবুও…
[আজ তোমাকে নিয়ে যখন লিখতে বসলাম- অনবরত লিখতে চেষ্টা করেই চলেছি, কিন্তু আঙুল তো চলেনা। কিবোর্ডে
থমকে দাঁড়ায় সময়। হুম, আমি ফিরে যাচ্ছি পেছন দিকেই- যদিও তা ভুল, নিছক ভুল। অনেক সময় ভুলেই পূর্ণতা পায় জীবন। তবুও পারলে ক্ষমীও!]
কঙ্কাবতীকে যখন প্রথম দেখেছিলাম- হৃদয়ের ধারেকাছেও ভালবাসা জাগে নি। দেখেই বিভোর হওয়ার মত রসায়ন তখনও পিটুইটারিতে জমে নি- হয়তো, হয়তোবা!তারপরও…
কিন্নর কণ্ঠে বলেছিলাম-‘আমিই কি তোমার ভালবাসায় প্রথম আগন্তুক?’
চুপচাপ।তার মুখে তখন রাজ্যের নিস্তব্দতা ভর করেছিল। মুখখানি যেন গোধূলির রক্তিম আকাশ।
ভেবেছিলাম তখনি হেরে যাব। বজ্রপাতের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। হঠাৎ…
আমি নিজের কাছে ভুল প্রমাণিত হলাম।
তার মুখে ফুটে উঠল হাসির আভা।আমি তো তথৈবচ-
তারপর আবারো ভুল প্রমাণিত হলাম। ক্ষণিকের মাঝে দ্বিতীয়বারের মতন।
কঙ্কাবতী বলল – ‘ভালবাসার ভ- ও ত বুঝো না, কেন এত লাফালাফি?’
-‘তুমি শিখিয়ে দিবে!’
-‘চমৎকার!’
-‘আচ্ছা,ভালবাসা মানে কী?’
-‘জানি না’
-‘এখন না বললে?’
-‘বলেছি বটে। তবে অপাত্রে জন্মে না তা’
-তবুও…আগাছা হয়ে থাকতে চাই- নেবে?’
-‘আগাছা তো রাখতে নেয়, অস্তিত্ব কে ছুড়ে ফেলে’
-‘তোমার এতই ভয়?’
আবারও নিস্তব্ধতা জেগে উঠে- আমার আর কঙ্কাবতীর মাঝে।
তারপর অনেকগুলো সন্ধ্যা কেটে গেল। অনেকগুলো রাত জানালার ফাঁকে ফাঁকে চাঁদ দেখতে দেখতে। ভেবেছিলাম, জীবন-বসন্ত ছিল অই সন্ধ্যাই!
কিন্তু-একি? আমি আবারও ভুল, জীবন আর ভুল যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
মুঠোফোন বেজে উঠলো –অচেনা নাম্বার।সবুজ বাটন চাপ দেয়ার পরঃ
-‘হ্যালো’
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ঠোঁট যুগলও নড়ে না।
-‘কে বলছেন?’
সহজাত ভঙ্গীতেই বললাম।
-‘অচিন পরী’
-কোত্থেকে?
-তেপান্তরের মাঠ
আমি একটু স্তির হওয়ার চেষ্টা করলাম।অতপর নিউরন জাগিয়ে দিল ভুলতে চাওয়া স্মৃতি। যা অনেক কষ্টে ভুলতে চেয়েও পারি নি। হ্যাঁ, এই কলের জন্যই দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
-‘অপাত্রে পদ্ম দেখেছ নাকি?’
-আমাকে চিনছ?
-অচিন পরী কে চেনে, এই সাধ্য কার!
-ভণিতা বাদ দাও, দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
-বেঁচে আছি, কারনে অকারনে কাঁদি। রাত হলে চাঁদ দেখি।
-বাহ!এই কাব্যিক জীবন তাহলে এখনও চলে!! একা?
-কেন? একা হলে টেনে নেবে কাছে?
আবারও নিস্তব্ধতা। ক্রন্দনের ধ্বনি শুনতে পাই। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়।কেউ কাদছে? না-কি ভ্রম? চোখের ধারে আঙ্গুল ঘেঁষতেই দেখি জল।
-‘পাগলামি কি এখনও ছাড় নি?মন দিয়ে শোন -১৪ ফেব্রুয়ারী আমার বিয়ে। আসতে ভুল না হয় যেন! আর কার সাথে জানো? অই তোমার…’
[নেটওয়ার্ক এরর।]
কার সাথে- আমার জানার দরকারও ছিল না। নিজের কাছে চতুর্থ এবং শেষবারের মতন ভুল প্রমাণিত হলাম।
আর কখনই এই মনের দরোজায় ভুল করে হলেও ভালবাসা জাগে নি।
হ্যাঁ, আমি আরও একটি ‘unlucky-14’-এর অপেক্ষায়…