“জেনে নিন ভিটামিন ডি সম্পর্কে আকর্ষণীয় কিছু তথ্য”
ভিটামিন ডি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে কম আলোচিত একটি খাদ্য উপাদান। কারণ, আমাদের দেহ সূর্যালোকের উপস্তিতিতে এই ভিটামিন নিজে নিজেই তৈরি করে, একেবারে বিনামূল্যে। আর তাই অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন ডি সম্পর্কে খুব কমই ধারণা রাখে।
আমেরিকান প্রফেসর ড. মাইকেল এফ. হলিক এবং মাইক এডামস একটি সাক্ষাৎকারে ভিটামিন ডি সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করেছেন:
১। সূর্যের আলোয় থাকা অতিবেগুনি রশ্মি যখন আমাদের ত্বকে এসে পৌঁছায়, তখন আমাদের ত্বকই ভিটামিন ডি তৈরি করে।
২। এই অতিবেগুনি রশ্মি কাঁচ ভেদ করে যেতে পারে না। তাই, ঘরে কিংবা গাড়িতে কাঁচের আড়ালে বসে থাকলে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হবে না।
৩। দৈনন্দিন খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই সূর্যালোকই ভিটামিন ডি এর একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস।
৪। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পেতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ১০ গ্লাস ভিটামিন ডি যুক্ত দুধ পান করতে হবে।
৫। যে ব্যক্তি বিষুব রেখা থেকে যত দূরে অবস্থান করে, তার ত্বককে ভিটামিন ডি প্রস্তুত করতে তত বেশি সূর্যের আলো প্রয়োজন হয়।
৬। সমপরিমাণ ভিটামিন ডি প্রস্তুতের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি সূর্যালোক প্রয়োজন। তাই কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সারের হার অনেক বেশি।
৭। দেহে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকা অত্যাবশ্যক। ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কখনোই দেহে কার্যকরী হবে না।
৮। দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে তা সহজেই পুনরুদ্ধার করা যায় না, বরং লেগে যায় কয়েক মাস।
৯। সানস্ক্রিন দ্রব্যসামগ্রী দেহে ভিটামিন ডি তৈরি ৯৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে দেহে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি এবং এথেকে উদ্ভুত বিভিন্ন রোগ দেখা যায়।
১০। অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকলে কখনোই শরীরে প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন ডি তৈরি হবে না। শরীরের যতটুকু প্রয়োজন, শুধু ততটুকুই তৈরি হবে।
১১। দেহে ভিটামিন ডি ঘাটতির একটি লক্ষণ হলো বুকের হাড়ে (sternum) চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
১২। বৃক্ক এবং যকৃৎ (kidney & liver) দেহে ভিটামিন ডি কে কার্যকরী করে তোলে।
১৩। বৃক্ক বা যকৃতের কোনো রোগ থাকলে তাই দেহে ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা কমে যায়।
১৪। সানস্ক্রিন দ্রব্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই চাইবে না তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাক, এ কারণেই তারা সূর্যের আলোর এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এ থেকে আপনার ত্বককে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
১৫। যদিও ভিটামিন ডি আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদানগুলোর একটি, তবুও আমাদের শরীর তা একদম বিনামূল্যে তৈরি করে দেয়।
ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগ:
১। অস্টিওপোরোসিস, যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
২। রিকেটস, যা হাড় ক্ষয়কারী একটি রোগ
পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি যেসব রোগ প্রতিরোধ করে:
প্রোস্টেট ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, বিষণ্ণতা, কোলন ক্যান্সার, সিজোফ্রেনিয়া।
ভিটামিন ডি সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য:
● ভিটামিন ডি এর ঘাটতি টাইপ টু ডায়াবেটিস বৃদ্ধি করতে পারে এবং শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
● স্থূলতা দেহে ভিটামিন ডি এর ব্যবহার কমিয়ে দেয়। তাই স্থূল ব্যক্তিদের স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
● সোরিয়াসিস নামক একটি ত্বকের রোগের চিকিৎসায় ভিটামিন ডি ব্যবহার করা হয়।
● পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পেলে দেহে মেলাটোনিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে সিজনাল এফেক্টিভ ডিসঅর্ডার সৃষ্টি করতে পারে।
● ভিটামিন ডি ঘাটতি এবং ফাইব্রো মায়ালজিয়া এর কিছু লক্ষণ অনেকটা একরকম। যেমন- মাংস পেশির দুর্বলতা ও ব্যাথা।
ভিটামিন ডি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিসংখ্যান:
● প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার সূর্যের আলোতে গেলে ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে যায়।
● যেসব শিশুরা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে (দৈনিক ২০০০ ইউনিট), তাদের পরবর্তী ২০ বছর টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ কমে যায়।
● ৩২% ডাক্তার এবং মেডিকেল স্টুডেন্ট এরই ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে।
● আমেরিকায় ৪০% মানুষের ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে।
● আফ্রিকান-আমেরিকান ৪২% সন্তান ধারণক্ষম নারীর ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে।
● ৯ থেকে ১১ বছর বয়সী ৪৮% বালিকার ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে।
● হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের প্রায় ৬০% এর ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে।
● ৭৬% সন্তানসম্ভবা নারীর ভিটামিন ডি ঘাটতি রয়েছে, যার ফলে তাদের সন্তানেরা পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, স্ক্লেরোসিস, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ
পরিচালক, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ফিচার ডেস্ক / সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর
Thanks for sharing important information.