১৭ই মে ২০১৯; বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস (World Hypertension Day) আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্যঃ Know Your Numbers!
দিবসটি উপলক্ষ্যে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) সম্পর্কিত একটি প্রয়োজনীয় পোস্ট শেয়ার করা হল। এছাড়া রাত দিন ২৪ ঘন্টা ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবার জন্য ফোন করুন স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে।
দেশের নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে দিন দিন উচ্চ রক্তচাপের ব্যাপকতা বাড়ছে। খাদ্যাভাসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপকে বিশ্বব্যাপী নীরব ঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আইসিডিডিআরবি পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। অর্থাৎ এ দেশে উচ্চ রক্তচাপের রোগী দেড় কোটিরও বেশি। তবে আক্রান্তদের অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন উচ্চ রক্তচাপ মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহারের কারণে প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিকের রক্তক্ষরণ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল ও চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধ খাবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে। কারো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। উচ্চ রক্তচাপ থেকে দূরে থাকতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
এরই মধ্য দিয়ে আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেশন লীগের সদস্য হিসেবে হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ২০০৬ সাল থেকে নানা আয়োজনে এই দিবস পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সেবা নিশ্চিত করা ও জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এই রোগে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।
এক গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ মানুষের স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, কিডনি সমস্যার অন্যতম কারণ। দিন দিন উন্নয়নশীল বিশ্বে এর ব্যাপকতা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ছে। প্রতি বছর ০ দশমিক ০৪ শতাংশ হারে এই রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে উচ্চ রক্তচাপকে বংশগত বিষয় হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক মানসিক চাপ, শারীরিক পরিশ্রমের না করা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বিশেষ করে ফাস্টফুডের প্রতি আসক্ত উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী।
উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর রক্তচাপ কমাতে নিম্নমাত্রায় লবণ, ফল, শাকসবজি, স্নেহবিহীন দুগ্ধজাত খাদ্য ও তেল কম খাওয়া ইত্যাদি অনেকটা সাহায্য করে। ধূমপান ছেড়ে দেয়া সরাসরি রক্তচাপ না কমালেও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু উপসর্গ যেমন- স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে আসে। উচ্চ রক্তচাপ মৃদু হলে সেটা সাধারণত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।