প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ এপ্রিল, শনিবার, ২০২১
লেখাঃ আরাফাত তান্নুম
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর শুরুর দিক। করোনা কন্ট্রোল রুমে প্ল্যাটফর্মের হয়ে ভলান্টারি ওয়ার্ক করছি। প্রচুর মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, রেজাল্ট কিভাবে দ্রুত পৌঁছানো যায়, কী করে ডেটাগুলো সংরক্ষণ ও প্রেরণ করা যায়, সে কাজ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও রেফারেল সেন্টারে গিয়ে বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। সেখানেই স্যারের রুমে স্যারের সঙ্গে প্রথম দেখা। একজন গুণী এবং সজ্জ্বন, সদাহাস্যজ্বল পরিচালক ছিলেন তিনি। প্রথম দিনেই অনেক মজা করে কথা বললেন যেটা কিনা একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে বিরল অনেকটাই।এরপর এম. আই. এস. এর হয়ে কাজ করতে যাওয়া বা প্ল্যাটফর্ম স্যাম্পল কালেকশনের জন্য যতরকম সাহায্য পাওয়া সম্ভব ছিল আমাদের, সবটাই তিনি করেছেন একদম একবারও বিরক্ত না হয়ে। নিজের অসুস্থতা বা অন্য যে কোন প্রয়োজনে স্যার সবসময় তার অদৃশ্য হাত দিয়ে ছিলেন আমার এবং আমাদের মাথার ওপরে।
![](https://www.platform-med.org/wp-content/uploads/2021/04/8-5210670039608363948-n-1-1619247460998.jpg)
শুধু ডাক্তার ই নয়, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক স্টাফ, টেকনোলজিস্ট সকলের পাশে সবসময় তিনি ছিলেন। তার কাছে যখনি কোনো আবদার নিয়ে যাওয়া হত, ‘না’ শব্দটি যেন তার অভিধানে ছিলই না। কেউ স্যারকে এসে কোন হেল্প চেয়েছেন, স্যারকে আল্লাহ তায়ালা সবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মত বড় করে দুনিয়াতে রেখেছিলেন এবং আমার দেখামতে উনি পুরোটাই ভাল কাজে ব্যবহার করেছিলেন!
![](https://www.platform-med.org/wp-content/uploads/2021/04/IMG-20210424-WA0003.jpg)
ব্যক্তিগতভাবে একজন পিতার মত তাকে আমি পেয়েছি। কোভিড টেস্ট করতে গেলেও উনি নিজ হাতে আমার স্যাম্পল নিতেন। যেকোনো সমস্যায় মনে হত, সমস্যা নেই, আমার স্যার তো আছেন ই! গলার কিছু অসুখে কথা বলতে সমস্যা হচ্ছিল স্যারের, একদিন এমন কথা বলতে কষ্ট হওয়া সদা আসর জমিয়ে রাখা টাইপ স্যারের কন্ঠস্বর শুনে তৎক্ষনাৎ আমার চোখে পানি এসে গেল। বললাম, স্যার আপনি চলে গেলে, এই প্রতিষ্ঠান টা এতিম হয়ে যাবে একদম!কোভিডের সময়ে সবচেয়ে বেশি সার্ভিস দেয়া এ প্রতিষ্ঠান কে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ দিয়েছিলেন এবং সেই কৃতিত্বের দাবিদার স্যার, আমার দেখা একজন সত্যকারের হিরো। সততার দিক থেকেও তিনি একদম উপরের দিকের কেউ হবেন। রিটায়ার্মেন্টে যাবার দিনও উনি আমাদের কাজ নিয়ে অনেক কথা বলছিলেন। বলছিলেন, ‘আবার আমাদের দেখা হবে, ছবি তোলা হবে।’ নিশ্চয়ই অন্য কোন ভুবনে তা হবে! নিশ্চয়ই হবে!
পরিবার, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এই অমায়িক গুণী চিকিৎসক, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, লেখক, কবি, সাহিত্যানুরাগী, আমার পিতৃসম মানুষটি তার জীবন উৎসর্গ করে চলে গেলেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে তিনি নিজের জন্য যে সময়টুকু শেষ সময়ে চেয়েছিলেন তা যেন তিনি জান্নাতে বহুগুণে পেয়ে যান এই কামনা করি।