জটিল জটিল রোগ, এমনকি ছোট খাটো রেগুলার চেকআপ করাতে আমাদের দেশের বিত্তবানেরা যখন বিদেশ পারি দিচ্ছেন , তখন বিদেশীরাই তাদের জটিল রোগ সারাতে আমাদের দেশে চলে আসছেন।
বাংলাদেশে সাধারণত দেখা যায়, উচ্চ ব্যয় নির্বাহের সামর্থ্য না থাকায় দরিদ্র মানুষ দেশের সরকারি হাসপাতালের ওপরই নির্ভরশীল।
চাকরি বা কাজের সুবাদে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা চিকিৎসা নিলেও বিদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য কেউ বাংলাদেশে এসেছেন এটা শুনে আঁতকে উঠছেন নিশ্চয়ই। তবে এবার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন সুদূর আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার নাগরিক সাফিছা বোজালেচ ডেসা।
গত ২৪ অক্টোবর মস্তিষ্কে টিউমার অপারেশনের জন্য তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. সেলামু ও ছেলে তামিরাত তোলেরাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। ভর্তি হন স্কয়ার হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ২৭ অক্টোবর তার অপারেশন করে। সাফিছা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তার দেশে ফেরার কথা। সাফিছার চিকিৎসার দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্কয়ার
হাসপাতালের মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ও কনসালট্যান্ট ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন বলেন, স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এন্ডোসকপি অপারেশনের মাধ্যমে সাফিছার মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণ করে। তিনি এখন সুস্থ।
গতকাল স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সাফিছা হাসপাতালের ১১০৪ নম্বরে কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসক ডা. সেলামু ও ছেলে তামিরাতও সেখানে অবস্থান করছেন। সাফিছা ও ছেলে তামিরাত ইংরেজি জানেন না। তবে ডা.সেলামু ইংরেজি বলতে পারেন।
কেন সাফিছা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সেলামু জানান, ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে ৫৯ বছর বয়সী সাফিছা দীর্ঘদিন ধরে তার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। কয়েক মাস আগে তার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। তাদের দেশে টিউমার অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করলেও উচ্চ ব্যয়ের কারণে সাফিছার পক্ষে সেসব দেশে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে মস্তিষ্কে টিউমার অপারেশনের পূর্ণ আশ্বাস দেওয়ার পর তারা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসেন।
তবে বাংলাদেশে আসা তাদের জন্য সহজ ছিল না। স্কয়ার হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল জামান জানান, ইথিওপিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় তারা শুরুতেই সমস্যায় পড়েন। পরে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তারা কেনিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করলে তাদের ভিসা দেওয়া হয়। ওই ভিসা নিয়ে ২৪ অক্টোবর তারা বাংলাদেশে পেঁৗছান।
আশা করছি, আমাদের দেশের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ব্যপারে সুনজর দিবেন এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য যে কোন দেশ থেকে, বাংলাদেশে কোন রোগী আসতে চাইলে, খুব সহজ এবং স্বল্পসময়ের মধ্যে আমাদের দেশে এসে চিকিৎসা নিতে সক্ষম হবে ।
খবর ঃ নিজস্ব প্রতিবেদক