আচ্ছা বলুনতো, আপনি যদি অসুস্থ হন, এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার হয় তাহলে কি করবেন,
নিশ্চয়ই রোগের ধরণ বুঝে পরীক্ষা করতে যাবেন। যেমন, রক্তের পরীক্ষা, পস্রাবের পরীক্ষা, এক্সরে, সিটিস্কেন, এমআরআই- এসবের মধ্যেও যে কত কি।
কিন্তু এমন যদি হতো, একটা মেশিন পেতাম যা দিয়ে শরীরের সব রোগ একবারেই ধরে ফেলা যায় তাহলে কি দারুণ হতো।
কিন্তু এমন সায়েন্টস্ট কই যে এত কষ্ট করে এমন মেশিন/ যন্ত্র বানাবে?
সে যাই হোক, যা বিশ্বের কেউ পারেনি তা আমাদের দেশেই সম্ভব হয়েছে
“সব কাজের কাজি
বাংলাদেশের পাজি ”
অবশেষে, দেশের সাধারণ মানুষ কে অসাধারণ পদ্ধতিতে বোকা বানিয়ে এক সুপার স্পেশাল মেশিন নিয়ে এলো “কে-লিংক” নামের এক প্রতিষ্ঠান।
মেশিন টা হলো, অল বডি স্ক্যানার মেশিন। এ মেশিনটা এমন যে রোগী এর সামনে বসে, তার হাতে পায়ে একটি প্রব ঘুড়িয়ে মেশিন অপারেটর বলেদেন যে, তার হার্টের কি অবস্থা, স্ট্রোকের চান্স আছে কি না, কিডনি ভালো তো! রক্তে দুষিত বিষ মিশেছে কিনা, ……. ঘনত্ব বলতে পারে, এজমা আছে কি না, লিভার টা… (বাংলার মানুষের যত ভয় লিভার নিয়ে)
আরো অনেক কিছু আর্থরাইটিস, চোখের পাওয়ার, দুর্বল শরীর – সব একসাথে জানা যায় এই মেশিন দিয়ে ।
এখন কথা হলো, জানতে পারলেন যে শরীর অসুস্থ্য, বিনা চিকিৎসায় চলে যাবেন? তা হবে না। আপনার জন্য রয়েছে তথাকথিত চিকিৎসক। যেহেতু বিএমডিসির সার্টিফিকেট নেই তাই তারা ওষুধ দেয়না, দেয় ভেষজ ফুড সাপ্লিমেন্ট। এটাও যে অবৈধ তা তাদের জানা নেই। আর তারা যেগুলো দিচ্ছে সেসবের দাম প্রতি ১০ ক্যাপসুল দেড় থেকে তিন হাজার টাকা। সেই সাপ্লিমেন্ট খাবারো যে কত রকমের বলার অপেক্ষা রাখেনা।
দেখাযায়, একেক রোগী এখানে এসে বিশ পচিশ, ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করছেন (রেজিস্টার বই থেকে পেলাম)। এখন বুঝা গেল আপনার এখানে আসলে অনেক খরচ হতে পারে। কিন্তু চাইলেই আপনি তা পুষিয়ে নিতে পারেন। কারণ তাদের রয়েছে এক দারুণ ব্যবসা পদ্ধতি “রোগী যখন ব্যবসায়ী ” টাইপের ব্যাবস্থা। এখানে রোগী নিজেই হয়ে উঠেন ব্যবসায়ী। ধরে নিয়ে আসেন এখানে, সাথে সাথে তার কমিশন যুক্ত হয়। সে রোগী যাকে আনবে, তার থেকেও কমিশন। অর্থাৎ অবৈধ ঘোষিত এমএলএম ব্যাবসা নতুন রূপে।
তো এসব যারা করছে, তাদের কে চিনতে, জানতে, দেখতে পারলাম একটি মোবাইল কোর্টে যেয়ে।
আজ দুপুরে কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে কে-লিংক নামের এ প্রতিষ্ঠানে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় মোবাইল কোর্টটি, সেখানে প্রসিকিউটর হিসেবে আমিও ছিলাম।
এই অভিনব প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করার সময় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। কথা হয় কয়েক জন রোগীর সাথে। তারা, যারা নিজেদের বুদ্ধি দরজার বাইরে রেখে এখানে ঢুকেছিল। জানতে পারলাম, এ প্রক্রিয়ায় তারা একেক জন কে একেক ভাবে ফাঁদে ফেলছে। এটা শুধু কুমিল্লায় নয় দেশের বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়েছে। মূল অফিস ঢাকার বনানীতে।
পরিশেষ:
চার জন কে গ্রেফতার করে জেল ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিও সিলগালা করা হয়েছে।
বিশেষ কথা:
চিকিৎসার নামে যারাই এমন ফাঁদ পেতে আপনাদের ঠকাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এসব অসাধু, প্রতারকদের জন্যই কিন্তু আমাদের জীবন বিপন্ন হয়েযেতে পারে।
জীবনে সাফল্যে যেমন শর্টকাট নেই, তেমনি পুরো শরীর একবারে ভালো করে দেয়ার ও শর্টকাট নেই।
তাই, সচেতন হোন, এসব প্রতারকদের ধরিয়ে দিন। সুস্থ্য থাকুন।
বিএমডিসি রেজিস্টার্ড ডাক্তারের থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
প্ল্যাটফর্ম ডেস্কঃ
নিসর্গ মিরাজ