প্রশ্ন ১
‘ স্যার আমার রোগী লাইফ সাপোর্ট মেশিনে আছেন ….. কিন্তু রোগীতো নড়াচড়া করেনা ! আমার তো মনে হয় রোগী আর বেঁচে নেই ! ‘
উত্তর :
খুব সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করুন ঃ
একজন রোগী যখন নিজে নিজে আর কোন অবস্হাতেই শ্বাস নিতে পারেন না অথবা রোগীর ধমনীর রক্ত পরীক্ষা ( arterial blood gas analysis ) করে যখন দেখা যায় যে , রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতির পরিমাণ এতোটাই বেশি যে অক্সিজেনের এই ঘাটতি জনিত কারণে রোগীর মস্তিষ্ক , হৃৎপিন্ড , কিডনী সহ সংবেদনশীল অংগগুলো যে কোন মুহূর্তেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে – তখন একজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসক রোগীর শ্বাসনালি দিয়ে একটি নল ঢুকিয়ে ( Endotracheal tube ) দেন এবং রোগীকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস মেশিনের সাথে সংযুক্ত করেন l রোগীর শরীরের অক্সিজেনের এই ঘাটতি , ventilator নামক মেশিনটি পূরণ করার চেষ্টা করে l এক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ রোগীর ফুসফুস সহ পুরো শরীর কে অবশ / paralyzed করে দেন এবং রোগী যাতে ঘুমন্ত অবস্হায় থাকেন এজন্য কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করেন l এসব ওষুধ রোগীকে মানসিক চাপমুক্ত রাখে , রোগীকে নিস্তেজ রেখে ফুসফুসের অক্সিজেন প্রবাহ নিশ্চিত করে এবং রোগীকে ব্যাথামুক্ত রাখে l
এই সময় রোগী নড়াচড়া করতে পারেনা ।ডাকলেও সাড়া দেয়না।
কতক্ষণ রোগী এভাবে নিস্তেজ থাকবে তা রোগীর ফুসফুসের উন্নতি সহ অনেক গুরুত্ববপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভরশীল ।
এসময় রোগীর আত্মীয় স্বজনদের অনেকেরই ভুল ধারণা জন্মায় ‘ যেহেতু রোগী আর নড়ছে না , ডাকলেও শুনছে না , রোগী মৃত।
আশা করি বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি ।
বাস্তবিক অর্থে ভেন্টিলেটর মেশিন বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস মেশিনের বিভিন্ন mode /প্রয়োগ কৌশল অনেক জটিল বিষয় ।
প্রশ্ন : 2
‘ আমার রোগীর হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে ,শরীর কালো হয়ে গেছে ।আর আপনারা ওনার গলায় ছিদ্র করেছেন / বগলে ছিদ্র করেছেন / বুকের উপরে ছিদ্র করেছেন ! আমি নিশ্চিত আমার রোগী মৃত !
উত্তর :
একজন রোগী যখন blood pressure / শরীরের রক্তচাপ নিজে নিজে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, ( due to shock of any cause ) তখন রোগীর মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহও কমতে থাকে । রোগী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়, হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন বা pumping ক্ষমতাও হ্রাস পেতে থাকে ,শরীরের শিরা উপশিরা সংকুচিত হয়ে আসে ( peripheral vesoconstriction ) । এমতাবস্থায় রোগীর হাত পায়ের শিরা উপশিরায় যদি ছিদ্র করা হয় ইনজেকশন বা জরুরী ওষুধ দেয়ার জন্য , অধিকাংশ সময়েই শিরায় রক্ত পাওয়া যায়না ( শিরার সংকোচনজনিত কারণে ) ।
একারণেই রোগীকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা রোগীর বগলে , গলার ডান বা বাঁ পাশে , বুকের উপরাংশে , উরুতে ছিদ্র করেন । কারণ এখানকার শিরাগুলো রোগীর blood pressure অনেক কমে গেলেও সহজে সংকুচিত হয়না।
রোগীর প্রেসার বা রক্তচাপ কমে গেলে হাত পায়ের শিরার দ্রুত সংকোচন ( vesoconstriction ) জনিত কারণে রোগীর শরীর মৃতের শরীরের মতোই ঠান্ডা হয়ে যায় ।
অন্যদিকে রোগীর হৃৎপিন্ড , মস্তিষ্ক , কিডনী , লিভার সহ গুরুত্বপূর্ণ অংগের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য চিকিৎসকরা dopamine , adrenaline, noradrenaline , vesopressine জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করেন ।
জীবনরক্ষাকারী এসব ওষুধ শরীরের হাত পায়ের রক্ত প্রবাহ কমিয়ে হৃৎপিণ্ড সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংগকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা করে । এক্ষেত্রে রোগীর গায়ে হাত দিলে খুবই শীতল মনে হয় , শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায় । রোগীর আত্মীয় স্বজন রোগীর শরীরের এই শীতলতা ও বর্ণহীনতাকে মৃতের শরীরের সাথে তুলনা করে ভুল করেন ।
একথা বুকে হাত রেখে সকল চিকিৎসকই দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলার মানসিকতা রাখেন ।
‘ আমরা কখনোই চাইনা রোগী আমাদের চোখের সামনে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হউক । আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করি, করবো।
এতে রোগীর বুকে , গলায় বা বগলে ছিদ্র করে IV access ( জরুরী ওষুধ প্রয়োগের জন্য রাস্তা তৈরি ) করাটাই মূখ্য , রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য শরীরের শীতলতা কখনোই মূখ্য বিষয় হতে পারেনা ।
আস্থা রাখুন –
মনের যে কোনো প্রশ্ন চিকিৎসককে বলুন।
( বি: দ্র:- আমি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে দুটি বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করেছি এবং ব্যাখ্যা দিয়েছি l বাস্তবিকপক্ষে আইসিইউর চিকিৎসা প্রণালীর বিষয়গুলো অত্যন্ত জটিল ।)
লেখক ঃ ডা. Asif Soikot,( Registrar Critical care Dept – Apollo Hospitals Dhaka )