প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ অক্টোবর, ২০২০, বৃহস্পতিবার
আইসিডিডিআরবি-র আন্তর্জাতিক বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ ডা. তাহমিদ আহমেদকে পরবর্তী নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডা. আহমেদ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালক পদে প্রফেসর ক্লেমেন্সের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ক্লেমেন্স ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।
নিয়োগ পাওয়ার পর মন্তব্য করতে যেয়ে ড. তাহমিদ আহমেদ কোভিড-১৯ বিষয়ে গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এই চলমান মহামারী জনস্বাস্থ্যকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগের অপরিসীম গুরুত্বকে বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেয়।
ডা. আহমেদ তার গবেষণামূলক কাজ এবং শিশু অপুষ্টি রোধ ও এর সহজতর চিকিৎসা ব্যবস্থা সন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বুলেটরি পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন, কমনওয়েলথ সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলোজি এন্ড নিউট্রিশন এবং ভারতীয় পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সংস্থার পদক পেয়েছেন।
২০১৮ সালে, ডা. আহমেদ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ডেভেলপমেন্ট ট্রান্সফর্মারস পুরুষ্কারের একজন বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নিয়েছেন।
ডা. তাহমিদ আহমেদ আইসিডিডিআরবি-র ৬০ বছরের গৌরবময় ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাহী পরিচালক পদকে অলংকৃত করবেন।
এ বিষয়ে ড. আহমেদ বলেন,
“আইসিডিডিআরবি-র প্রথম বাংলাদেশী নির্বাহী পরিচালক হওয়া নিঃসন্দেহে একটি গৌরবের বিষয়। আইসিডিডিআরবি একটি আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল এবং থাকবে। আমি দেশি বিদেশী ৪,০০০ জনেরও অধিক কর্মীর একটি দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানটিকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গর্বিত, যা আমাদের গবেষণার ব্যপ্তিকে আরও বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।”
ডা. আহমেদ ১৯৮৫ সালে আইসিডিডিআরবি-তে যোগদান করেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি বিভিন্ন দায়িত্বভার পালন করেছেন এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আইসিডিডিআরবি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর জন ক্লেমেন্সের নির্দেশনায় ডা. আহমেদ আইসিডিডিআরবি-র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পুষ্টি বিষয়ক গবেষণায় ডা. তাহমিদ আহমেদ একজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী, এক্ষেত্রে তার ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁর গবেষণা এবং এর বাস্তবায়ন শিশুদের অপুষ্টি, যক্ষ্মা এবং ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা সহজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ডা. আহমেদ শিশুদের তীব্র অপুষ্টি ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় একটি প্রোটোকল তৈরি করেছেন যার ফলে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও তিনি স্থানীয় খাদ্য উপাদান দিয়ে সহজে ব্যবহারযোগ্য (রেডি-টু-ইউস) এক ধরনের খাদ্য তৈরি করেছেন যা তীব্র অপুষ্টি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। তিনি অপুষ্টি, আন্ত্রিক রোগ এবং মানসিক বিকাশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি দেশে পরিচালিত ম্যালনিউট্রিশন -এন্টেরিক ডিজিজ (ম্যাল-এড) প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের প্রধান গবেষক। তিনি বিড (বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল এন্টেরিক ডিসফানক্শন) গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা শিশুদের বৃদ্ধি রোধ বা স্টান্টিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণ পরিবেশগত নন-ইনভেসিভ বায়োমার্কার আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে। ডা. আহমেদ আমেরিকার সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. জেফরি গর্ডনের সাথে মিলে মাইক্রোবায়োটা পরিচালিত সম্পূরক খাবার (মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড – এমডিসিএফ) আবিষ্কার করেছেন – শিশুদের অপুষ্টিরোধে যা এক অভিনব আবিষ্কার। এই আবিষ্কারটি সম্মানজনক জার্নাল সায়েন্স, ২০১৯ সালের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। ডা. আহমেদ বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এমডিসিএফ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডা. আহমেদ পুষ্টি বিষয়ে গবেষণা এবং প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং বইয়ে তাঁর ৩৬০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ডা. তাহমিদ আহমেদ ঢাকার সেইন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল এবং নটরডেম কলেজে থেকে পড়াশোনা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শুরুতে বাংলাদেশের গ্রামীণ একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করেছেন এবং পরে ১৯৮৫ সালে আইসিডিডিআরবি-তে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে আবাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে জাপানের সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি আইসিডিডিআরবি-র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণার পাশাপাশি আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডায়রিয়ার হাসপাতাল-ঢাকা হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র সমূহের তত্ত্বাবধান করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতেই তিনি আইসিডিডিআর,বি ক্যাম্পাসে কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়াও, ড. আহমেদ ইউনিসেফের সহযোগিতায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য আইসিডিডিআরবি-র টেকনাফে অবস্থিত ক্যাম্পাসে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি কোভিড-১৯ আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা দলের সদস্য হিসাবে, ডা. আহমেদ শিশুদের তীব্র অপুষ্টি চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত নির্দেশিকা সংশোধন করেছেন। তিনি তীব্র অপুষ্টি সম্পর্কিত কাউন্সিল অফ রিসার্চ অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইস (কর্টসাম) আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একজন সদস্য। তিনি শিশুদের কলেরা রোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গ্লোবাল টাস্ক ফোর্স অন কলেরা কেস কন্ট্রোল (জিটিএফসিসি)-কে পরামর্শ প্রদান করেন। সম্প্রতি ডা. আহমেদকে দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র অপুষ্টি কমাতে গবেষণা ও কার্যক্রমে পরিচালিত কারিগরি উপদেষ্টা পরিষদের সহ-সভাপতির পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি উগান্ডা, সুদান, দক্ষিণ সুদান, লেবানন, আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং উত্তর কোরিয়ায় শিশুদের অপুষ্টি ও ডায়রিয়া রোগ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন।
ডা. আহমেদ ৫৪টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিশু পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞদের একটি সংগঠন, পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন (ক্যাপগান)-এর সভাপতি ছিলেন। তিনি জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর জনস্বাস্থ্য পুষ্টির প্রফেসর এবং সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল অব গ্লোবাল হেলথের একজন এফিলিয়েটেড প্রফেসর।
২০০৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ডা. তাহমিদ আহমেদকে মেডিকেল সায়েন্সে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ডা. সুলতান আহমেদ চৌধুরী স্বর্ণপদক প্রদান করেছে। ২০১৮ সালে, ডা. আহমেদ ইসলামী ব্যাংক ডেভলপমেন্ট ট্রান্সফর্মারস পুরস্কারের একজন বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেছেন।
সহকর্মীদের মধ্যে ডা. আহমেদ তাঁর দৃঢ় নৈতিকতা এবং তরুণ বিজ্ঞানীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য সমাদৃত।
“ডা. আহমেদ একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, যিনি বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ সম্মানিত,আমি নিশ্চিত যে তাঁর নেতৃত্বে আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এবং মানুষের স্বাস্থ্য সুবিধা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে”–
আইসিডিডিআরবি-র বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ন্যান্সি ওয়াই চেং বলেন।