“আত্মঘাতী” শব্দটা শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন । কল্পনায় ভেসে ওঠে এক সন্ত্রাসীর ছবি যে নিজের শরীরে বিষ্ফোরক নিয়ে হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে, কিন্তু আশেপাশের কেউ লক্ষ করছে না । তারপর হঠাত্ বিষ্ফোরন । ঐ সন্ত্রাসী নিজে মারা গেলেন, সাথে তার পাশের অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হলেন ।
সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহৃত এই ‘সুইসাইড বোম্বিং’ কে এবার মানবকল্যানে কাজে লাগতে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা । তবে তা করা হবে ল্যাবে তৈরি ব্যাকটেরিয়ার আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করা । ‘সিনথেটিক বায়োলজি’ এর ক্ষেত্রে এটি একটি মাইলফলক । কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে, ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে কিভাবে এই আত্মঘাতী হামলা চালানো হবে ??
যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকেরা এক বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং নিজেদের সৈন্য ও শত্রুপক্ষকে আলাদা করতে পারে । তেমনিভাবে ব্যাকটেরিয়াও কেমিক্যাল সিগনালিং এর মাধ্যমে নিজেদের ও ভিন্ন প্রজাতি ব্যাকটেরিয়া সনাক্তকরন ও তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে । ‘Pseudomonas aeruginosa’ তেমনি এক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া যা মাধবদেহের অনেক মারাত্মক ইনফেকশনের জন্য দায়ী, যা Cystic fibrosis এর রোগীর ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে ভয়ংকর । এই ব্যাকটেরিয়াটি প্রাকৃতিকভাবে বেশিরভাগ এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী । এরা কেমিক্যাল সিগন্যালিং এর মাধ্যমে নিজেদের ভিতর যোগাযোগ করে এবং খাদ্য ও পুষ্টি কম থাকলে Pyocin নামক টক্সিন তৈরী করে অন্য Pseudomonas দের কে মেরে ফেলে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকে । এভাবে অসংখ্যা Pseudomonas একত্রে ঘন কলোনি তৈরি করে যা Biofilm নামে পরিচিত । এই Biofilm এর চিকিত্সা খুব কঠিন ।
গবেষকরা পরীক্ষাগারে E. coli ব্যাকটেরিয়ার জিনকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন যেন দুইটি নতুন জিন এর ভিতর যুক্ত হয়েছে । এর একটি জিন সুইসাইড প্রোটিন তৈরী করে যা E. coli কে ই মেরে ফেলে । আরেকটি জিন তৈরী করে Pyocin টক্সিন । এই জিন দুটি সেন্সরের সাথে যুক্ত । LasR এর মাধ্যমে এই রুপান্তরিত E. coli , Pseudomonas এর বায়োফ্লিম সনাক্ত করতে পারে । সনাক্ত করার পরপরই E. coli এর ভিতর প্রচুর পরিমানে Pyocin টক্সিন তৈরী হয় । একই সময়ে অন্য জিন সক্রিয় হয়ে সুইসাইডাল কম্পোনেন্ট তৈরী করে যার ফলে E. coli ব্যাকটেরিয়া ফুলে ফেঁপে ওঠে ও বিষ্ফোরিত হয়ে মারা যায় । বিষ্ফোরিত হওয়ার সময় উত্পন্ন প্রচুর পরিমান Pyocin টক্সিন Biofilm এ ছড়িয়ে পড়ে । ফলে ৯০-৯৯% Pseudomonas মারা । এই টক্সিনটা মানবদেহের জন্যে অতটা ক্ষতিকর নয় বলে গবেষকরা জানিয়েছে ।
ওষুধের প্রতি Pseudomonas ক্রমশ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার যে ভাজ পড়ছিল তা কিছুটা হলেও সমাধানের আশার আলো দেখা গেছে । যদিও এই এই গবেষনা এখনো ল্যাবেই সীমাবদ্ধ , প্রানীদের উপর এখনো ভালোভাবে প্রয়োগ করা হয় নি । তবু ভবিষ্যতে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া দমনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে…….
…
লিখেছেনঃ ডা.এ.এন.এম নাসিম ফেরদৌস
[তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে]