পাঠক, এমন একটি খাবারের নাম ভাবুন তো, যা আপনার দাঁতের শত্রু? উত্তর প্রায় সবারই জানা। চকলেট, মিষ্টি, কোমল পানীয় – তাই তো?
এবার দাঁতের একটি “বন্ধু” খাবারের নাম ভাবুন। এটা কিছুটা অপরিচিত ঠেকছে, তাই নয় কি? জ্বী পাঠক, দাঁতের “শত্রু” খাবার যেমন আছে, তেমনি দাঁতের “বন্ধু” খাবারের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়!
যেমন, ললিপপের কথাই ধরা যাক। সুকরোজ (Sucrose) মিশিয়ে তৈরি করা ললিপপ দাঁতের জন্য ক্ষতিকর, কারণ সুকরোজ দাঁতের সবচেয়ে বেশি ক্ষয় করে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মিসিগান রাজ্যের বাসিন্দা, ১০ বছর বয়সী ক্ষুদে উদ্যোক্তা Alina Morse, “Zollipop” নামে এমন এক ললিপপ তৈরি করেছে, যা নিশ্চিন্তে খেতে পারবে সবাই, দাঁত ক্ষয়ে যাবার ভয় নেই।
পার্থক্য একটাই, ওতে Sucrose এর বদলে যোগ করা হয়েছে Xylitol, Erythritol আর Stevia। এরকম chewing gum তৈরির কাহিনী অবশ্য নতুন নয়, তবে ললিপপ এটিই প্রথম!
তাহলে দেখা যাচ্ছে, একই খাবার, তার তৈরির উপাদানভেদে দাঁতের ক্ষতি করতেও পারে, আবার না-ও করতে পারে। দাঁতের ক্ষতি না করলে সেটাকে আমরা বলি “tooth-friendly খাবার”।
আর এখন sugar এর ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করে এর বিভিন্ন বিকল্প (substitute) ব্যবহার করা হচ্ছে।
যেমন-
১) Xylitol (এটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত)
২) Erythritol
৩) Sorbitol
৪) Maltitol
৫) Isomalt
৬) Isomaltulose
৭) Sucralose
৮) Tagatose
৯) Stevia
১০) Aspartame, ইত্যাদি।
এসব বিকল্প ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি তো হবেই না, স্বাদেও কমতি হবে না। সুতরাং, প্যাকেটজাত মিষ্টি খাবার কেনার সময় ওপরে দেওয়া নামগুলো মাথায় রাখুন।
কোনো খাবার দাঁতের জন্যে ভাল, না মন্দ – কীভাবে বোঝা যাবে?
-মূলত দাঁতে লেগে থাকা খাদ্যকণা (বিশেষত শর্করা) মুখে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গাঁজিত (fermentated) হয়ে অ্যাসিড তৈরি হয়। এই অ্যাসিডই দাঁতকে ক্ষয় করে ফেলে।
সুতরাং, যেসব খাবার-
● মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা fermentate হয় না,
● দাঁতের গায়ে বা ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘসময় আটকে থাকে না, বরং মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে (detergent action)
● মুখে লালা নিঃসরণ বৃদ্ধি করে দন্তক্ষয় প্রতিরোধ করে
– সেসব খাবারকে উপকারী(tooth friendly) বলা যেতে পারে।
কোন্ খাবারগুলো tooth friendly, অর্থাৎ দাঁতের জন্যে উপকারী?
●অপরিশোধিত শর্করা, যেমন- লাল চালের ভাত, আটার রুটি।
●আঁশসমৃদ্ধ খাবার, যেমন-
○ফল – পেয়ারা, আম, আপেল(খোসাসহ), নাশপাতি(খোসাসহ), কলা, কমলা, খেজুর, স্ট্রবেরি, আখ।
○শাকসবজি – শালগম, আলু, গাজর, মটরশুঁটি, টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, ব্রকোলি, সেলেরি।
○ডাল
○ওটস (oats)
○বাদাম – আমন্ড, পেস্তা, চিনাবাদাম, আখরোট।
●পনির (Cheddar, Swiss, Mozzarella)
●Black tea.
– এসব খাবারে “tooth friendly” খাবারের বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে।
অপরপক্ষে চিনিযুক্ত স্ন্যাকস, ক্যান্ডি, কোমল পানীয়, পাউরুটি, মিষ্টি, বিসকিট, কেক, চিপস, ক্র্যাকারস জাতীয় খাবার যথেচ্ছভাবে খেলে দাঁতের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তাই বলে এসব খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করা-ও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
এক্ষেত্রে যা করণীয় –
●এসব খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ কোন উপলক্ষ্যে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
●আপনার বাচ্চা কে মিষ্টি জতীয় দ্রব্য খেতে দিন তার মিল টাইম এর আগে অথবা মিল এর সাথে এবং খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাস করে ফেলতে বলুন। আর তা সম্ভব না হলে অন্তত ভালোভাবে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে বলুন এবং একই অভ্যাস আপনি নিজেও গড়ে তুলুন।
●পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
●দিনে অবশ্যই দু’বার দাঁত ব্রাস করতে হবে। মাঝেমাঝে ফ্লস এবং মাউথওয়াস ব্যবহার করা ভাল।
অনেকেই রাতে ব্রাশ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন ,এই ধরনের অভ্যাস ত্যাগ করুন
●প্রতি ৬ মাস পরপর ডেন্টিস্টের কাছে চেক-আপ করাতে হবে।
সুতরাং পাঠক, দাঁতের সুস্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য গ্রহণ করুন। দাঁতের প্রতি যত্নশীল হোন। তাহলে, আপনার দাঁতও সারাজীবন আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে, অকালে দাঁত হারাতে হবে না।
Reference:
1. www.dentalhealthweek.com
2. en.m.wikipedia.org
3. everydayhealth.com
4. Textbook of preventive and community dentistry by SS Hiremath
5. zollipops.com
লিখেছেন ঃ ইফফাত সামরিন মুনা
ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ (৪র্থ বর্ষ)
তোমার লেখা ? Iffat Samrin