প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ জুন, ২০২০, শনিবার
ডা. জোবায়ের আহমেদ
সিলেট এম-এ-জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
সেশন ২০০৩-২০০৪
উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি ও দক্ষিন আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমির নাম আমরা সবাই জানি। তো আমরা চাইলেই কি সেই মরুভূমিতে সবুজ বনায়ন হবে?
মরুভূমিতে যেমন হিমসাগর আমের ফলন সম্ভব নয়, তেমনি আমাদের জনগনের মাঝে নিজের ভুল অনুধাবন করার ক্ষমতা ও দায়িত্ববোধ জাগানো সম্ভব না। কারণ জাতিগত ভাবে আমরা পরশ্রীকাতর, দূর্নীতিপরায়ন ও হুজুগে বাঙ্গালী।
আপনি এক কাপ লাল চা খাইয়ে এই দেশের মানুষের মাথা কিনে নিতে পারেন, যা ইলেকশন এর সময় দেখতাম। এখন যদিও একটু রেট বাড়ছে। হাজার টাকার একটা নোট হাতে গুজে দিলেই সেই ব্যক্তির মাথা আপনার। জনগণ যখন তাদের অধিকার ভুলে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, মহীরুহ দানবদের রুখে দিতে মরিয়া হয় না, তখন সেখানে চেপে বসে দানবরা।
যেমন জনগন, তেমন শাসক।
যেমন মা-বাবা, তেমন সন্তান।
স্কুলে থাকতে ভাব সম্প্রসারণ পড়েছি।
“অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।”
আপনি দেশে চলা অনাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন? বরং নিজের গা বাঁচিয়ে চলেছেন। অন্যের সাথে হওয়া অন্যায়ে আনন্দ পেয়েছেন। আনন্দ না পেয়েও ব্যথিত কি হয়েছেন? ব্যথিত হলেও প্রতিবাদী হন নি। যারা অন্যায় করেছেন, তাদের তোয়াজ ও চাটুকারিতা করেছেন। অন্যায়কারীর সহযোগী হয়ে অবৈধ সুযোগ নিয়েছেন। এখন দয়া করে মাতম তুলবেন না।
ঘুম থেকে উঠেই বিএসএমএমইউ এর একজন প্রফেসর এর মৃত্যু সংবাদ পেলাম। আফসোস, তিনি তার কর্মস্থলে চিকিৎসা পান নি, প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মারা গেলেন। স্বাস্থ্যখাতের টিপ অব আইস বার্গ নিয়েই মাতামাতি করেছেন সবাই। কিন্ত গভীরে কেউ যেতে চান নি কখনোই। জনগণের দায়িত্ব থাকে। সেই দায়িত্ব আমরা পালন করি নি, আমরা উদাসীন থেকেছি নিজের ঘাড়ে না আসা অব্দি। আজ সব দৃশ্যমান।
উত্তোরণের উপায় কি? এই দেশে কিছু চেঞ্জ হবে? সিস্টেম পাল্টাবে? আমরা জনগণ নিজেদের পাল্টাতে পারবো? আমরা অতি অল্পতেই তুষ্ট হওয়া জাতি। হাতে একটা কলা ধরিয়ে দিলেই শেষ!
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বদলি করা হয়েছে। আমরা বেজায় খুশিতে বোগল বাজাচ্ছি। কিন্ত ভদ্রলোককে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব করে পুরুষ্কার দেওয়া হলো। আর ভূমি সংস্কার বোর্ডের সচিব কি উন্নতি করবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের? এতদিন ভূমির জটিল হিসাব কষে এখন তিনি এই আপাদমস্তক দূর্নীতিতে নিমজ্জিত পঁচা সিস্টেমকে পাল্টিয়ে ফেলবেন বলে আপনারা আশাবাদী হলেও আমি তেমন আশাবাদ রাখি না।
ডাক্তারদের মাতমও ভালো লাগছেনা। আপনারা যখন স্বাচিপ, ড্যাব, এনডিএফ এর পিছনে তৈল দিয়েছেন, বিভিন্ন নিজ সুবিধার জন্য তাদের জয়গান গেয়েছেন, আজ তারা কি আছে আপনাদের পাশে?
প্রমোশন বানিজ্য, বদলি বানিজ্য, বিরোধী মতের চিকিৎসকদের দমন ও বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতা দেখানো ছাড়া তাদের পুরো সিস্টেমে সার্বজনীন কি অবদান বলতে পারেন? সারা অঙ্গে ব্যথা যখন, তখন ঔষধ লাগাবেন কোথায়? আমরা এখন অসহায়। আমরা হাহাকার করবো। মাতম করবো। কিছুদিন পর আমরা ভুলে যাবো। আমাদের গোল্ডফিশের মেমোরি তাই। যদিও আমরা ইস্যুবাজ জাতি। অনেকদিন এক করোনা ইস্যুতে থেমে গিয়ে আলোচনা বাড়ছে। নতুবা নতুন নতুন ইস্যুর ভীড়ে কবেই আমরা সব ভুলে দেশের চিকিৎসকদের গালি দিতাম, শালা তোরা কসাই।
ডাক্তারদের অনেক দোষ আছে। তা আমি কোনদিন অস্বীকার করি নাই। আমি সেসব নিয়েও কথা বলেছি, গালিও খেয়েছি স্বজাতির। আমি নিজেও এসব দোষে কমবেশি দুষ্ট। কিন্তু আমি চাই আত্মসমালোনা, আত্মউপলব্ধি। সেটা জনতার এবং চিকিৎসক উভয় শ্রেণির। যদি জনতা জাগতে পারে, যদি জনতা তার নাগরিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে পারে, যদি সাহস নিয়ে দূর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের কলার চেপে ধরা যায়, তবে একটা পরিবর্তন আসবে অনেক প্রিয়জনের বিদায়ের মাধ্যমে।
এখন কথা হলো, আমরা কি সত্যি পরিবর্তন চাই? তবে আগে নিজেকে পরিবর্তন করি।