আসসালামুয়ালাইকুম। কথা দিয়েছিলাম আমার গল্পটা শেয়ার করবো।তাই এই লেখার অবতারণা। প্রথম প্যারায় অনেক আগডুম বাগডুম লেখা থাকবে।যাদের হাতে সময় নেই তার দ্বিতীয় প্যারায় পাবেন আমার অভিজ্ঞতা। যদি কেউ ফলো করতে চান নিজ দায়িত্বে করতে হবে। আর শেষ প্যারায় থাকবে আমার সাজেশন।
১/
গল্পটা শুরু ২০১৩ সালের ভর্তিযুদ্ধের সময়ে। চান্স পেয়েছিলাম BUET, DU(A),IUT,CUET,……আরো ৭/৮ জায়গায়।বুয়েট এ সম্ভবত ৬৮০ এর মত ছিল র্যাংক, বাকি সবখানে ২০০ এর মধ্যে। কিন্তু মেডিকেল পরীক্ষায় ডেন্টালে আসে আমার পজিশন। বাবা মা চেয়েছেন ছেলে যেন কখনো দেশের বাইরে না যায়।তাই নিজের সব প্যাশন বাদ দিয়ে তাদের খুশি করার জন্য AFMC তে ভর্তি হওয়া। কিন্তু মেডিকেলে আসার পর কি যে হলো, পড়ালেখাটা উচ্ছন্নে গেলো। পাশ করার জন্য যতটুকু লাগে ওই ততটুকুই। শারমীন ম্যাম এম্ব্রায়োলজি পড়াতেন। বলতেন- কারিমুল, নিজের পোটেনশিয়াল সব নষ্ট করছো তুমি। আমি শুধু অজুহাতই দিয়ে যেতাম। তাও গাইটন টা পড়তাম।ঈদের ছুটিতে বাসায় নিয়ে যেতাম। কখনো আইটেমে ধরবেনা-স্পোর্টস মেডিসিন,আন্ডারওয়াটার মেডিসিন এইসব পড়তাম মনের আনন্দে। ফার্স্ট প্রফের সময় যখন এক্সটার্নাল স্যার gfr এর হুবহু ডেফিনিশন না পারায় অপমান করলেন, রুমে এসে গাইটন ছিড়ে নৌকো বানিয়েছিলাম সেদিন। খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন,বারান্দা ভর্তি পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম সব নৌকা। হ্যা, অনেক জেদি আমি। হয়তো বয়স কম দেখেই। থার্ড ইয়ারে উঠতেই মাথায় ঢুকলো নিউরোলজির ভূত। দিনরাত ওখানে পড়ে থাকতাম। থার্ড ইয়ারে নিউরোলজি রোটেশন থাকেনা কিন্তু ওখানে যত সময় কাটিয়েছি বাকি তিন বছরে আর কোন ওয়ার্ড এ কাটাতে পারিনি আমি। GBS আর আবদুল্লাহ স্যারকে নিয়ে একটা গল্প খুব প্রচলিত।স্যার পেশেন্ট কে দূর থেকেই ডায়াগনসিস করে ফেলেছিলেন কিন্তু বেচারার বিশ্বাস না হওয়ায় সিংগাপুর যায়।
সেখানকার ডাক্তাররাও একই ডায়াগনসিস দেন কিন্তু অনেক টাকার পরীক্ষা নিরিক্ষার পর। আমার খুব ইচ্ছে ছিল স্যারের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবো এ ব্যাপারে- স্যার কিভাবে সম্ভব এটা।কিন্তু কখনো সেই সৌভাগ্য হয়নি। প্ল্যাটফর্ম এ পোস্ট দিয়েছিলাম কারো আইডিয়া আছে কিনা,কেউ তো হেল্প করেইনি উলটো মক করছিল এজ ইউজুয়াল! যাই হোক তখন খুব ইচ্ছা ছিল স্যারের সাথে একদিনের জন্যে হলেও শ্যাডোয়িং করার কিন্তু থার্ড ইয়ারের উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের জন্য সেটা ছেড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার সমান। তারপর আস্তে আস্তে সময় যায়, কোনমতে পাশ করি প্রফগুলো। তারপরই সেই বিখ্যাত সেন্ট্রাল হাসপাতালের ঘটনা। স্যারের বিরুদ্ধে ভুল ডায়গনোসিসের অভিযোগ, একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেটায় একজন বয়স্ক ডাক্তারকে মারছিল ২০/২৫ টা ছেলে, তাও ঢাবির! বাসায় ছিলাম তখন, রাগে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।মাকে গিয়ে দেখাই ভিডিওটা আর বলি- আর কখনো এই দেশে থাকতে বলবানা। আম্মুরও চোখে পানি তখন। তারপরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি, দিব যখন, ওয়ার্ল্ড এর সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটাই আগে দেই। ইটস টাইম টু ব্রিং ব্যাক মাই নটরডেমিয়ানসেল্ফ
২/
এবার প্রিপারেশনের পালা। প্রথমেই খোজ করি কারা কারা USMLE পাশ করেছেন বাংলাদেশ থেকে। খুজে পাই অনেককেই কিন্তু বেশিরভাগই মেসেজ সিন করে রেখে দেন। DMC এর মামুন ভাই, শরিফুল হালিম ভাই তাও একটু গাইডলাইন দেন। এর মধ্যে আরেকজনের খোজ পাই। উনাকে বলি – ভাইয়া আমার মডেল টেস্টে ২৪০ এসেছে, সাজেশন দেন। উনি বলেন- পরীক্ষার সময় তো এটা থাকবেনা। ? উনার নাম বললে চাকরি থাকবেনা।সেলিব্রেটি মানুষ কিনা। একটা ফিফথ ইয়ারের ছেলেকে এইভাবে ডিসকারেজ করার রাইট নাই আপনার। গতকাল সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত শ’চারেক মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছি,কিছু হয়তো বাকি আছে।আস্তে আস্তে সবগুলোর রিপ্লাই দিবো কথা দিলাম। যাই হোক তারপরই খোজ পাই সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেলের Masum Rahman ভাই এর। উনি আমার মেডিকেলের না কিন্তু পুরো প্রিপারেশনের সময়টা আপন ভাইয়ের মত করে গাইড করেছেন ভাইয়া ♥ যখনই যে হেলপ লেগেছে ভাইয়াকে নক দিয়েছি,কখনো নিরাশ হইনি। ডিসেম্বর থেকে জুন ২৬ পর্যন্ত ছিল আমার ডেডিকেটেড টাইম। তার আগে দুই মাস ল্যাংমেন,জ্যাংকুইরা,স্নেল নিউরো এনাটমি, Biostat,Medical ethics পড়ে শেষ করি আস্তে আস্তে। এখন বুঝতেসি যে আসলে না ল্যাংমেন জ্যাংকুইরা না পড়লেও হতো। তারপর একে একে – KAPLAN (VIDEOS except for patho micro), Pathoma(video+book) First Aid(basic science portion + neuro+cardiolog) i know it’s hard to believe someone could score >250 without finishing FA 3/4 times but u know what, they said- study smart,not hard) Uworld offline followed by online ( i had notebook for pages of offline uworld question that i got wrong,which i have revised again) I used Uworld online during last month to build stamina for 8 hour exam. Then i also used PASTEST USMLE QBANK, Kaplan qbank,Usmle rx qbank. That means by mid may i was done with more than 10,000 cases. I also used some books which was suggested by people who scored more than 250
1/ 100 cases of ethics by conrad fischer
2/BRS PHYSIO
3/BRS behavioral
4/BRS GROSS anatomy
5/High yield cell biology
6/ High yield neuroanatomy
7/High yield gross anatomy
8/ UW biostat review
9/MRCP biostat review
10/Anatomy shelf note
এ বইগুলোর সবগুলো লাগবেনা। আমি লাস্ট প্যারায় সাজেস্ট করবো কোনগুলো মাস্ট। বাট এগুলো পড়ে আমি বুঝতে পারি কি বেহাল দশা আমার মেডিকেল নলেজের। তবে আমার স্কোর সবচেয়ে বেশি বুস্ট আপ করে – Ankidroid. একটা ডেক ইউজ করতাম আমি- Brosencephalon’ শুধু এটার জন্যই আমি FA শেষ না করে পরীক্ষা দেওয়ার সাহস করি। এরমধ্যে ২৫ মে তে
NBME 16 দেই। স্কোর আসে ২৪৪। তারপর আবার একমাস পড়ি সিরিয়াসলি। আবার NBME 18 দেই, জুন ২১ তারিখে, যেটা সবচেয়ে বেশি প্রেডিক্টেবল। আমার স্কোর আসে ২৬০। আবারো মাসুম ভাইকে জালাই। ভাইয়া সাজেস্ট করেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা দিয়ে দিতে।২৭ জুন ডেইট নিই প্রোমেট্রিকে। একটা গাধামি করি ২৬ তারিখ যে আরজেন্টিনা – নাইজেরিয়ার খেলা সেটা ভুলে যাই । সে এক কালো রাত :3। সবমিলিয়ে ঘুমাতে পেরেছিলাম ৩ ঘন্টা। যাই হোক ৮ ঘন্টার পরীক্ষা যতই সময় আগায় ততই টায়ার্ড হচ্ছি। ফ্লাস্কে করে চা নিয়ে গিয়েছিলাম, ব্রেক পেলেই গিলছি। শেষের দিকে মনে হচ্ছিল মাফ চাই ভাই। লাগবেনা আমার USMLE ?? । আমি ঘুমাতে চাই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কি যে ভয়াবহ শান্তি লাগে সেদিন।
USMLE পরীক্ষায় ECG,EEG,USG,CT,MRI,ANGIOGRAM,XRAY, HEART SOUND,LUNG SOUND সবই টেস্ট করা হয়। CT এর জন্য Mediachool এর আয়োজিত ওয়ার্কশপ এ এটেন্ড করি, MRI এর জন্যে লাইব্রেরি থেকে বই তুলি ECG এর জন্য জন্যেও একটা কোর্স করি , Xray এর জন্যে আবদুল্লাহ স্যারের বই আর বাকিগুলো সব ইউটিউবের অবদান।
প্রিপারেশনের মাঝে দুটো ট্যুরে যাই আমি,একটা বান্দরবান অন্যটা টাংগুয়ার হাওরে। হাওরে নৌকার ছাদে শুয়ে শুয়ে পড়েছি আমি, বান্দরবানে হাটু পানিতে ট্র্যাকিং করতে করতে flashcard পড়েছি আমি। ঈদের ৬ দিন পর আমার পরীক্ষা ছিল।ঈদের নামাজ পড়ে এসেই পড়েছি। কিভাবে যে ৭ টা মাস গিয়েছে আল্লাহই ভালো জানেন। আমি শুধু জানতাম আমার লেগে থাকতে হবে। সব উপহাসের জবাব দিতে হবে।
তারপর ৩ সপ্তাহ অসহনীয় অপেক্ষার পর রেজাল্ট হাতে পাই। বাসায় ফোন দিয়ে নিজেই কেদে ফেলি খুশিতে।
খরচ-
১/ রেজিস্ট্রেশন + সেন্টার ফি – ৯৫,০০০/-( ECFMG website)
২/ NBME – ৫০০০/- প্রত্যেকটা
৩/ Uworld online- ২০,০০০/- (১মাস)
৪/ বাকি সব বই- ২০,০০০/-
.
৩/
সাজেশন-
what u must do
Uworld+First Aid+Pathoma(+-kaplan depends on your base level)+ Uw biostat+ 100 cases of ethics.
what you may do
Brs & High yield books if your Nbme’s shows weakness.
বি দ্র ১- লেখা একটু অগোছালো মনে হতে পারে, বিভিন্ন সময়ে লেখা বিভিন্ন প্যারা
বি দ্র ২- কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে লেখার অনুরোধ জানাচ্ছি
বি দ্র ৩- আমি দেশে থাকবো কি থাকবো না দয়া করে সে ব্যাপারে কোন আক্রমনাত্মক বা সারকাস্টিক কমেন্ট করতে না করছি 🙂
বি দ্র ৪- আজকে রেজাল্ট শোনার পর Surgery এর ডিপার্টমেন্টাল হেড মতিন স্যার যখন বললেন- বাবা আমি জানি তুই একটা ইনটিলিজেন্ট ছেলে,তোর অনেক জেদ আছে। পড়ালেখাটা ছাড়িস না।” যখন পেডিয়াট্রিক্স এর নুরুন্নাহার ফাতেমা ম্যাম বলেন- You did an outstanding job” যখন আমাদের কমান্ড্যান্ট স্যার wow বলে বুকে জড়িয়ে ধরেন আমাকে তখন মনে হয় – না কষ্টটা আসলেই সারথক ♥♥♥
বি দ্র ৫- আমাকে আমার ক্যাম্পাসের সবাই যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছে ♥♥♥ এককথায় অসাধারণ৷ আসলে AFMC এর মানুষগুলা একটু বেশি জোস ???
বি দ্র ৬- বাংলিশ এবং লম্বা পোস্টের জন্য দুঃখিত
লেখক:
Karimul Islam Rafi
5th year Medical Student
AFMC
খুব খুশি এবং অনুপ্রেরণা পেলাম এত এত হতাশার মাঝেও। সত্যি! নিজের আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের জন্য এভাবে লেগে থাকা ছাড়া বিকল্প নাই!!!!
শুভেচ্ছা এবংঅভিনন্দন ভাইয়া। আপনার ইমেইল আইডি কি দেয়া যাবে?