ইউনিভার্সেল মেডিকেলকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চালু করায় জটিলতা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ এপ্রিল,২০২০

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চালু করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। হাসপাতাল সংলগ্ন দুইটি গার্মেন্টস কারখানার চাপের মুখে হাসপাতালটির করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে ইউনিভারসাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারীর কন্যা এবং ইউনিভারসাল মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইন্সস্টিটিউডের শিক্ষক ডাঃ হৈমন্তিকা পাল শ্রেয়ার বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

“আমরা ইউনিভারসাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (পূর্ব আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) কোভিড হাসপাতাল খুলবো শুনে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কারণ যে হারে করোনা রোগী বেড়ে চলেছে আসলেই কতজনকে সরকারী হাসপাতাল আগামী দিনে স্থান দিতে পারবে জানিনা। বাংলাদেশে আসলে সামনে কি দিন আসছে তাও জানি না আমরা কেউ।

আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর নির্দেশে (লিখিত এবং মৌখিক) আমরা করোনা হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ নিই। আপনারা জানেন কোভিড হাসপাতাল আর দশটা স্বাভাবিক হাসপাতালের মত নয়। কোটি টাকার ব্যাংক লোনের বোঝা নিয়ে আমাদের এই করোনা হাসপাতাল খোলার পেছনে আমাদের কোন মুনাফার উদ্দেশ্য ছিলনা। বরং কোভিড হাসপাতাল ব্যবসায়িক দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমাদের জন্য লস প্রজেক্ট। কিন্তু সরকারের নির্দেশে এবং মানবিক স্বার্থে আমরা এগিয়ে এসেছি। কোভিড হাসপাতালে দশদিন একজন চিকিৎসক কাজ করার পর ১৪ দিন নিকটবর্তী হোটেলে পূর্ণ কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এর মধ্যে নতুন চিকিৎসক নার্সের ব্যাচ আসবে। এর মধ্যে লাগবে ব্যাকআপ টিম। কারণ করোনা পেশেন্টদের সরাসরি চিকিৎসা দিতে গিয়ে যে কোন নার্স, চিকিৎসক যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি মারাও যেতে পারেন। সব জেনে শুনে আমাদের ডাক্তাররা যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা বলার নয়। আমার প্রবল সাহসী মা সবার আগে এই ভয়াবহ যুদ্ধে তার একমাত্র কন্যার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এমন আরও কোটি কোটি মায়েদের আমি জানাই স্যালুট।

আমরা আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, PICU, ডায়ালাইসিস মেশিন, টেস্ট সুবিধা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, একবার ব্যবহারযোগ্য পিপিই, N95 মাস্কসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে ১০০ শয্যার এই হাসপাতাল প্রস্তুত করি দিন রাত ২৪ ঘন্টা খেটে। আমাদের মূল হাস্পাতাল মহাখালী তে (RAOWA Convention center এর বিপরীতে) যা কিনা আমাদের রুটি রুজির একমাত্র পথ তা আমরা কোভিড ইউনিট এর জন্য ব্যবহার করতে চাইনি এবং মূল হাসপাতালে প্রচুর হৃদরোগ, ক্যান্সারের রোগী,প্রসূতি ও গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন যারা চিকিৎসার জন্য নিয়মিত ভাবে আমাদের হাসপাতালের উপর ভরসা করে থাকেন।

আমরা করোনা হাসপাতাল খোলার ব্যবস্থা করি রসুলবাগ এ (মহাখালী বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে) যেখানে আমাদের নার্সিং ইনস্টিটিউট। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পূর্ণ আইসোলেশন ও পরিচ্ছন্নতা মেনে আমাদের করোনা ইউনিট খোলার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমাদের ভবন সংলগ্ন দুটো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে। আমরা তাদের কথাও মাথায় রেখেছি। আমরা জানতাম যে অবস্থা দেশের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল, কলেজ যেখানে বন্ধ থাকতে পারে, গার্মেন্টস আর দুই মাস অন্তত বন্ধ থাকবে এবং ততদিনে করোনা হয়ত অনেকটাই সহনশীল অবস্থায় আসবে। প্রসংগত বলে রাখি দুটো গার্মেন্টস এখানে অবৈধভাবে সঠিক নিয়ম না মেনে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে। গতবছর আমাদের নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অনুরোধে আমি নার্সিং এ কিছু ক্লাস নিতে গিয়েছিলাম। আমার কয়েকদিনের ক্লাস নেয়ার মধ্যেই আমি গার্মেন্টসে দুইবার আগুন লাগতে দেখেছি। তারা শ্রমিক সুরক্ষা ব্যবস্থা কিছুই মানেনা কিন্তু এবার করোনা হাসপাতালের কথায় তাদের মাথা খারাপ। তাদের চিন্তা সংলগ্ন ভবনে কোভিড হাসপাতাল খোলা হলে তাদের ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকরা আসতে ভয় পাবে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তারা গার্মেন্টস খুলে দিবে। এর সাথে এলাকাবাসী ও অত্যন্ত ভীত। যতই বলা হোক আমরা পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, আইসোলেশন মেনে কোভিড হাসপাতাল করছি, চিন্তা কাউকেই ছাড়েনা।

আপনারা হয়তো জানেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। আগামী দিনে যে ঘরে ঘরে করোনা রোগী পাওয়া যাবে এবং হয়ত এমনও হতে পারে প্রতি দশজনে একজন করোনা রোগী, কত মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে সে চিন্তা কাউকে স্পর্শ করেনা। কিন্তু আমি বলব এখনো দেশে কিছু লড়াকু সৈনিক রয়েছেন। সম্মানিত প্রফেসর ডাঃ রিদোয়ান, মাননীয় স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম এবং আলী নূর, যেভাবে আমাদের করোনা হাসপাতাল চালু করার জন্য কাজ করছেন এখনো আমি তাদেরকে জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আমাদের এখন উত্তর হচ্ছে আমরা এখনই সমাজের পাশে দাঁড়াতে চাই। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও আমি জানি অনেক সহৃদয় ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের কাছে দেশের চিন্তা নিজ ব্যবসার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি অনুমতি দেন এই মুহুর্তে আমরা কোভিড হাসপাতাল চালু করে দিব। আমাদের তৈরী হাসপাতাল, যন্ত্রপাতির কিছু ছবি আমি নিচে দিয়ে দিলাম।

প্রিয় দেশবাসী এবং সরকার এবার আপনারা বেছে নিন গার্মেন্টস না কোভিড হাসপাতাল কোনটা এই মুহুর্তে আমাদের দরকার? গার্মেন্টস চালু করা একান্তই সরকারী সিদ্ধান্ত, কিন্তু নিজে একজন ডাক্তার বলে আমি এটুকু বলতে পারি স্বাস্থ্যবিধি এবং আইসোলেশন মেনে গার্মেন্টস এবং করোনা হাসপাতাল দুটোই পাশাপাশি চলতে পারে। আপনারা না চাইলে আমরা সামাজিক কাজে এগিয়ে আসবোনা এবং সব ইকুইপমেন্ট, বেড আমাদের মূল হাসপাতালে নিয়ে যাব। কিন্তু আমরা নিজের জীবন উপেক্ষা করে আপনাদের পাশে এই ক্রান্তিকালে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম এবং এখনো চাই।
ধন্যবাদ।”

নিজস্ব প্রতিবেদক /আদিয়াত আতকিয়া আবিদা চৌধুরী

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

করোনা চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্রথম 'প্লাজমা' ডোনেট করে ইতিহাসের পাতায় ডা.জোয়ারদার রাকিন মঞ্জুর

Tue Apr 28 , 2020
২৮শে এপ্রিল,২০২০ করোনা থেকে সেরে উঠা ব্যাক্তির রক্তের প্লাজমা অন্য রোগীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে এন্টিবডি তৈরী করা হয়।আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশ সফল হয়েছে এই পদ্ধতিতে। বাংলাদেশে প্রথম প্লাজমা দাতা হলেন ডা.জোয়ারদার রাকিন মঞ্জুর ।তার শরীর থেকে নেওয়া প্লাজমা ব্যাবহার করা যাবে চার জন করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে। করোনার সাথে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo