প্ল্যাটফর্ম নিউজ: ১৬ এপ্রিল, ২০২০।
আজ দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে করোনা উপদ্রুত রেড জোন নারায়ণগঞ্জ জেলার সার্বিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। টেলিকনফারেন্স বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও নির্দেশনার চুম্বক অংশ দেয়া হলো।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে দেশের খবর তাঁর কাছে আসে। ডাক্তারদের চলাফেরার সমস্যা হচ্ছে কোথাও, কোথাও ডাক্তারদের বাড়িতে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে । তিনি এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং করণীয় সম্পর্কে প্রশাসনিক নির্দেশনা দেন।
বক্তব্যের শুরুতে ডা. শামসুদ্দোহা সরকার সঞ্চয়, আবাসিক চিকিৎসক, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল , (ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন) নারায়ণগঞ্জ, জেলার সার্বিক করোনা পরিস্থিতিতে ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। লকডাউন ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্মিকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চিকিৎসা জোরদার ও অব্যাহত রাখার জন্য সাধুবাদ জানান। তিনি দুঃখ করে বলেন, “মাননীয় এমপি মহোদয় পুলিশ, র্যাব, আর্মিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন কিন্তু আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের ধন্যবাদ দিলেন না।” উল্লেখ্য যে তাঁর অব্যবহিত পূর্বে নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। ধন্যবাদ দেয়ার সময় তিনি স্বাস্থ্যবিভাগ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা উচ্চারণ করেননি। ডা. শামসুদ্দোহা সার্বিক করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসাব্যবস্থা তদারকির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি জানান, “সারা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমরা ভালো করছি। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। ১২৩১ জনের মধ্যে ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রায় ৪%। যার মধ্যে সহকর্মী সম্মানিত সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন স্যারও আছেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”
নারায়ণগঞ্জ এ ২১৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। ১৩ জন মারা গেছেন, প্রায় ২০% ডেথ। এখান থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল যেহেতু এখন করোনা হাসপাতাল, এখানে পিসিআর ল্যাব হলে দিনে দিনে রিপোর্ট দিয়ে(৬-৮ঘন্টায়) contact tracing, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন করা তুলনামূলক সহজ ও কার্যকর হবে। ”
তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে জানান যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যা নেয়া হয়েছে এবং চাহিদামতো আরো ব্যবস্থা নেয়া হলে নারায়ণগঞ্জে করোনার প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। রোগ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা গেলেই তা সম্ভব। এখন প্রতিদিন ১৫০ টেস্ট হয়। এটি আরো বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
করোনা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে তিনি জানান, “এখানে এখন ১৪ জন ভর্তি আছেন। গতকাল ৪২ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ”
তিনি উল্লেখ করেন যে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য যে প্রধান অনুষঙ্গ, N95 মাস্ক (রেসপিরেটর), বিশ্বব্যাপী সংকট, কিন্তু এখানে একটিও N95 mask সরকারি সাপ্লাই আসেনি।
তিনি আশংকা প্রকাশ করেন রেস্পিরেটর মাস্কের অভাবেই হয়তো সুরক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে সিভিল সার্জন সহ ১৬ জন চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।
“আমরা জানি এটা ছাড়া চিকিৎসার ফল কি।
তবুও আমরা পিছিয়ে যাইনি। হাসপাতালের সবাই সাহসের সাথে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত আছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসচিব বলেন N95 USA made, সারাবিশ্বে সংকট, চায়নায় KN95 একই ক্যাটাগরির।
পুনরায় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “এটা দেয়া হয়েছে কিনা? ”
জবাবে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, “দেয়া হয়েছে কিন্তু কম। সারা দেশেই কিছু কিছু দেয়া হয়েছে। আরো কিছু আসতেছে। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এসে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেস্পিরেটর মাস্ক সরবরাহ করতে নির্দেশ দেন।
উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন পিসি আর মেশিন সারা দেশেই কম । স্থাপনেও সময় লাগে। নারায়ণগঞ্জ এ সব স্যাম্পল কালেকশন হয়। দিনশেষে একবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
যদি দিনে কয়েকবার নেয়া যায়, তাহলে এখনই এই সেটাপেই দ্রুত কয়েক ঘন্টায় ফলাফল দেয়া সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মতি দেন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।