যে খবর আমাদের মিডিয়ায় আসে নাঃ
লেখকঃSorwer Alam Shanku
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাদা চামড়ার এক কিউই এমবিবিএস ডাক্তার একটি মাটির ঘরে বাস করছেন। বিয়ে থা করেন নি। এখানে দিনের বেশিরভাগ সময় ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না। বৃস্টি পড়লে কাদা মাটির ভেতর থাকতে হয়। সব লোকই গরীব। ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার সাহেব ছোট বেলা থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করতে চাইতেন। শুরু করেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিউজিল্যান্ড সার্জিকাল দলের সাথে স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে। একবার লক্ষ্য করলেন যুদ্ধে বুলেট বা বোমার আঘাতে আহত অনেক সৈনিক চিকিতসার মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু কয়মাস পর সেই সৈনিক দেখা যাচ্ছে মারা গেলো ডায়রিয়া তে ! ডাক্তার সাহেবের মনে ব্যপারটা খুব আঘাত করলো। একটু সচেতন হলেই এই মৃত্যুটা প্রতিরোধ করা যেতো। ৮০র দশকে এলেন বাংলাদেশে। অবাক হয়ে দেখলেন এখানের লোকজন আরো গরীব। যেই গ্রামে গেলেন তাতে ২০ কিমির ভেতর নেই কোনো হাসপাতাল। শুরু করলেন “কাইলাকুরি হেলথ কেয়ার সেন্টার ” প্রজেক্টের কাজ। এখানে তিনিই একমাত্র ডাক্তার। ট্রেইন করলেন গ্রামের প্রাইমারী বা সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত পড়া ৮৯ জনকে। এদের বলা হলো ” বেয়ার ফুট মেডিকস”। খালি পায়ে হেটে দূর দুরান্তে এরা স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। ৩ কিমির ভেতরে যেসব রোগি আসছেন তাদের জন্যে আউটডোর চিকিতসা সেবার চার্য ৫ টাকা। এর বাইর থেকে যারা আসছেন তাদের জন্যে ১০ টাকা। টাকা না থাকলে সমস্যা নেই। চিকিতসা ছাড়া কেউ ফেরত যাবে না। রোগি দেখার পর ওষুধ পত্র দেয়া হয়। ওষুধের টাকা না থাকলে সমস্যা নেই। সেটা ও ফ্রি। প্রতিদিন ১০০ এর মত রোগি আসছে এখানে। জ্বর, টিবি, ডায়বেটিস, ডায়রিয়া, বার্ন, কাটাচেড়া, এন্টি নেটাল কেয়ার, ফ্যামিলি প্লেনিং, শিশু স্বাস্থ্য সব কিছুরই চিকিতসা হয়। হস্পিটালাইজড থাকতে হবে রোগিকে? সেটাও সমস্যা নেই। ৩৫ বেডের ইনডোর ফ্যাসিলিটি আছে। ইনডোরে আছে টিবি, বার্ন, ডায়রিয়া, ডায়বেটিস এবং মা ও শিশু ইউনিট। ইনডোর এডমিশান ফি ১০০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে যতদিন প্রয়োজন সেখানে ভর্তি থাকবেন। খাবার, চিকিতসা, ওষুধ সব ওই ১০০ টাকা মধ্যেই ! দূর থেকে রোগি পরিবহনের জন্যে আছে গরুর গাড়ি বা ভ্যান। আরাম দায়ক বেড সেখানে নেই। আছে মাটির ঘর এবং চাটার বিছানা। কিন্তু মানুষ খুব খুশি। কারন তাদের চিকিতসা করছেন মমতাময় সাদা চামড়ার এই ভদ্রলোক। সবাই তাকে ডাকেন ” ডাক্তার ভাই। ” মার্সিডিজ বা প্রিমিও নেই। এক খানা সাইকেলে চড়ে দূর দূরান্তে রোগি দেখতে যান। তাও ফ্রি। কথা বার্তায় ভীষন অমায়িক ডাক্তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করা হলো কেনো তিনি বাংলাদেশকে বেছে নিলেন তার কাজের জন্যে। তিনি বললেন বাংলাদেশের মানুষ খুব সরল গরীব এবং ভালো। তাদের স্বাস্থ্য সেবার জন্যে “সামান্য” সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই ৩০ বছর এখানে থেকে যাওয়া। বছরে ৩৩০০০ হাজার রোগির জন্যে আউটডোর সেবা, ১০০০ রোগির জন্যে ইনডোর সেবা এবং প্রায় ২১০০০ মানুষকে হেলথ এডুকেশান দিচ্ছেন তিনি তার প্রজেক্টের মাধ্যমে। খুব ” সামান্যই” বটে।
বছরে এই হেলথ সেন্টারের বাজেট প্রায় ১ কোটি টাকা। নিউজিল্যান্ডের মাত্র দুই জন ম্যানেজারিয়াল পোস্টের লোকের বার্ষিক ইনকামের সমান এই বাজেট। ২ জন নিউজিল্যান্ডের লোকের ইনকামে প্রায় ৫০০০০ বাংলাদেশির স্বাস্থ্যসেবা !
কোথা থেকে আসে এই টাকা? ৮৫ ভাগ সম্পুর্ন ব্যক্তিগত ডোনেশান, বাকি ১৫ ভাগ কন্ট্রিবিউট করছে রোগিরা। অনেক রাতে অর্থ সংস্থানের চিন্তায় ঘুম ভেংগে যায় ডাক্তার ভাই এর। বছরে একবার যান নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ডের শহর বন্দরে ঘুরে বেড়ান ” ডোনেশান ফর কাইলাকুরি হেলথ সেন্টার প্রজেক্ট ” নিয়ে।
উন্নত দেশে যেখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয় কিভাবে ” ফ্যাট ” কমানো যায়, লাইফ স্টাইল কিভাবে মোডিফাই করা যায়, আধুনিক ফ্যাশান কি হওয়া উচিত সেখানে ডাক্তার ভাই আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ২ জন আধুনিক বিশ্বের মানুষের ইনকাম দিয়ে কিভাবে গরীব দেশের অর্ধ লক্ষ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যায়।
৭০ উর্ধ্ব ডাক্তার ভাই এখন প্রায়ই অসুস্থ্য থাকেন। অপেক্ষা করছেন একজন ” সাকসেসর “এর যে তার এই প্রজেক্ট এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভদ্রলোকের নাম বলা হয় নি। উনার নাম ডাঃ এড্রিক বেকার। জন্ম নিউজিল্যান্ডে। হাজার মাইল দূরে এসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কালিয়াকুরি গ্রামে পড়ে আছেন ৩০ বছর ধরে।
রিস্পেক্ট এই আধুনিক যুগের মাদার তেরেসার জন্যে।