প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ আগস্ট, ২০২০, সোমবার
গতবছর ডেংগুর সময়ে দুই ঈদের ছুটি বাতিল হয়েছিল। সেই থেকে ঈদের ছুটি পাচ্ছেন না হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এবছর ঈদেও ছুটিহীন কাটিয়ে দিচ্ছেন। হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রোগীর সমস্যাগুলো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।
পাশাপাশি বেডে কেউ সেরে উঠছে, কেউ মৃত্যু এড়াতে পারছে না। বিশেষ করে ঈদের সময়টাতে অল্প সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি হয় না বললেই চলে। অনেকটাই রোগী ও স্বজনের চাওয়া থেকে। যাদের অসুস্থতা তীব্র হয়ে উঠে, কেবল তাঁরা অনন্যোপায় হয়ে হাসপাতালে এসে ঠাঁই নেন। কখনো বা একেবারে অন্তিম সময়ে, যখন তেমন কিছু করার সুযোগ থাকে না।
ঈদে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক বলেছেন-
“ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে ডিউটি করার মত বালাই আর নাই। একে তো একগাদা রোগীর চাপ যার বেশীরভাগই থাকে খুবই খারাপ অবস্থার রোগী, আর তারপর হাসপাতালের বাইরের উৎসবমুখর পরিবেশ থেকে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে খারাপ রোগীগুলোর এটেন্ডেন্টদের অন্তিম কাউন্সেলিং করা এবং খানিক পর কিছু রোগীর ডেথ ডিক্লেয়ার করাটা আসলেই যথেষ্ট মানসিক কষ্টের।
গতকাল রাতে নাইট শিফটের দুইটা খুবই খারাপ রোগী অবশেষে আজ সকালে মারা গেল। এর মধ্যে একটা রোগী ছিলো রাহাত, ৩ মাস বয়সের, সিভিয়ার নিউমোনিয়া সাথে কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর। দীর্ঘ ১৪ বছর পর বাচ্চাটার মা এই সন্তানটা লাভ করেছিলেন, তার চোখের সামনে বাচ্চাটা তীব্র শ্বাসকষ্টে মারা গেলো। বাচ্চাটা আর বেঁচে নেই এ কথাটা সেই মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকেই বলতে হল।
আরেকটা বাচ্চা মোহাম্মদেরও ছিলো সিভিয়ার নিউমোনিয়া, সাথে রক্তশূন্যতা আর কম ওজন। সকাল ৮ টায় বাচ্চাটা মারা গেলো। ডেথ সার্টিফিকেট লেখার সময় বাচ্চার বাবাটা বলল, ওর আরো ৩টা বাচ্চা নাকি মারা গেছে।
অনেক রোগীর আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে আসে নতুন পোষাক, ভালো খাবার নিয়ে। ইদের আমেজটা টের পাওয়া যায় এসব সিচুয়েশনের মাঝেও। পাশাপাশি দুইটি বিছানায় কী অদ্ভুত বৈপরীত্য, এক বিছানায় কিছুটা সুস্থ হওয়া রোগীর সাথে মা, বাবা, স্বজনদের আহ্লাদ। আর আরেকটিতে সবার আহাজারী। সবচেয়ে বড় কথা, ইদের দিনে।
May the Almighty give them strength to keep patience. Surely we belong to Him, and to Him shall we return.
(সর্বশক্তিমান তাদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করার শক্তি দিন। অবশ্যই আমরা তাঁর সংসৃষ্ট এবং তাঁর নিকটেই ফিরে যাবো।)”