৫ এপ্রিল ২০২০: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মানিত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাছির উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর সম্বলিত গত ২রা মার্চের একটি নোটিশ নিয়ে তোলপাড় চলছে চিকিৎসক সমাজে।
উক্ত নোটিশে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৫২ তম ব্যাচের চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নির্দেশিত সময়ে ইন্টার্নশীপে যোগদান না করায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়। দেশের ক্রান্তি লঘ্নে এমন একটি নোটিশে বিস্মিত হয়েছেন অনেকে, হয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।
এবারে এ বিষয়ে মুখ খুললেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিজেই। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট হতে তিনি বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেটির বক্তব্য সমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:-
“আমি এখনও ছুটিতে। আমার বর্তমানে বা অবর্তমানে যে চিঠি বা নোটিশ দেয়া হয় তার সম্পূর্ণ দায় আমার। শব্দ চয়নে ভুল বা কাঠিন্য অনেক সময় পরিস্থিতির বিবেচনায় বাড়াবাড়ি মনে হয় এবং এতে অনেকেই আঘাত প্রাপ্ত হয়ে যায়।
সম্প্রতি সদ্য পাশ করা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ কৃত এম-৫২ ব্যাচের ডাক্তারদের গত ২৫শে মার্চ যোগদান করার জন্য সকল কাগজপত্র নিয়ে রিপোর্ট করার কথা ছিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি অসুস্থতার মধ্যে ১লা এপ্রিল অফিসে যেয়ে জানতে পারি ইন্টার্নরা যোগদান করেনি। কেন করেনি চীফ ইন্টার্ন কোঅর্ডিনেটর আমাকে বা প্রশাসনের কাউকে জানায়নি। কেন যোগদান করেনি প্রশাসনের কেউ আমাকে বলতে পারেনি। যোগদানের চিঠির ব্যাপারে আমাকে জানান হয়নি। ব্যক্তিগত ভাবে সদ্য পাশ কৃত একজন চিকিৎসক যোগদান করেছেন বলে আমাকে ই-মেইল করেন। এদিকে নির্দেশনা আছে সবাই যেন কর্মস্থলে থাকে।
আমরা প্রশাসন, একটা ভারসাম্যমূলুক অবস্থা বজায় রেখে হাসপাতাল চালাই। আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো। সেখানে জেলা প্রশাসন, ডিজিএফ আই, আইন শৃংখলা বাহিনী, এন এস আই সবাকেই বর্তমান পরিস্থিতে জানানোর বাধ্যবাধকতা আছে। শুধু স্বমন্বয়ের জন্য।
আমার প্রতিষ্ঠানের আমার বর্তমানে বা অবর্তমানে সব চিঠি বা দালিলিক যোগাযোগে শব্দ চয়নে কেউ আঘাত পেলে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আল্লাহ ভীরু মানুষ হিসেবে সব দায় আমার। ক্ষমা ও বিনয় আল্লাহর কাছে প্রিয়।
এম -৫২ ব্যচের সদ্য পাশ কৃত ডাক্তারদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী আমার প্রশাসনিক অফিসের সকল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যা সংগঠিত হয়েছে আমার জ্ঞাত সারে বা অজ্ঞাত সারে। আমি সকল দায় মাথা পেতে নিচ্ছি কিন্তু তোমাদের দায়িত্ব ছিল এস এম এস, টেলিফোনে বা ই-মেইলে ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে বা অফিস কে জানানো তোমাদের সমস্যাগুলো।
আমি এ ৪ বছর ৫ মাসে সাধ্যের মধ্যে হাসপাতালের সকল কল্যাণ ও নিরাপত্তা সবার নিশ্চিত করেছি। যে সকল সন্মানিত ডাক্তাররা খাবার খেতে হোটেল পাচ্ছেন না তাদের খাবার, পেশাগত নিরাপত্তা নিজে অনেক কষ্ট করে নিশ্চিত করার সম্ভব সাধ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করছি। যদিও আমি অসুস্থতা নিয়েই ময়মনসিংহ এ অবস্থান করছি পরিস্থিতির বিবেচনায়।
মন্তব্য বা কমেন্ট করার অধিকার সবার আছে। শালীনতা কাম্য। কারণ আমরা ডাক্তার। পৃথিবীর থ্যানকলেন্স পেশার একটা। আরো দুটি পেশা আছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পেশা এবং দিন মজুরের পেশা। করোন ভাইরাল ডিজিজের জন্য দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে নবীন ডাক্তারদের সাহায্য হাসপাতালের প্রয়োজন। তোমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠাতে হবে তোমাদের নিরাপত্তা ও রোগীর নিরাপত্তার জন্য।
আমি বিনয়ী কিন্তু দুর্বল মানসিকতার নই। অবশ্যই আল্লাহ বিনয়ী বান্দাকে তাঁর নৈকট্য দান করবেন। আমিন।
তোমাদের হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে আমি হয়তো আর অল্পকিছু দিন থাকব। দোয়া প্রার্থী।
বিনীত
পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল”
নিজস্ব প্রতিবেদক/মোঃ নাফিউল ইসলাম টিপু