গত ২৬ সেপ্টেম্বর World contraception day ছিল। কন্ট্রাসেপসনের কার্যকারিতা বা গুণাবলী নিয়ে নতুন করে ডাক্তারদের বলার কিছুই নেই। তবু সম্প্রতি মানুষের নজর কারা এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা বলব এখন যা নিয়ে আমাদের দেশে এখনো হয়তো কেউ মাথা ঘামাচ্ছেনা। এই বিপর্যয় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যাচ্ছে কেননা এটা মানব সংক্রান্ত কিছু নয়। এই ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছু এখনো করার না থাকলেও জিনিসটা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়ার জন্য বলছি।
আমরা ডাক্তাররা জানি কন্টাসেপটিভ পিলের active ingredient হল EE2 অন্য নামে Ethinyl Estradiol . এই ক্যামিকেল প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয় কন্ট্রাসেপটিভ পিল নেয়া মহিলাদের। আমরা কখনো ভেবে দেখিনা এই EE2 সমৃদ্ধ প্রস্রাব কোথায় যাচ্ছে? প্রকৃতির স্বাভাবিক পানি চক্র এবং সাধারণ নিয়মের মাধ্যমে এই ক্যামিকেল স্যুয়েজ লাইন থেকে পর্যায়ক্রমে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডল ও পানি মন্ডলে। বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানির মাধ্যমে প্রথমে পুকুর নদী নালা সেখান থেকে সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ছে এই ইস্ট্রোজেনের ভ্যারাইটি ক্যামিকেল।
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকো টক্সিকোলজিস্ট প্রফেসর চার্লস টাইলার ২০০৮ সালে এক অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করেন মিশিগান হ্রদের মাছদের নিয়ে গবেষণা করার সময়। তিনি অনেক গুলো চেনা প্রজাতির মাছ খুঁজে পান যাদের শুক্রাশয়ের ভেতরে ডিম্বাণু তৈরী হয়েছে। তিনি জিনিসটা দেখে খুব অবাক হন প্রথমে। তিনি এই প্রজনন অক্ষম মাছ গুলোকে intersex মাছ বলেন। কিন্তু তিনি আরো অবাক হলেন যখন ইউরোপের নামকরা প্রায় ১৪ টা হ্রদের পানিতে এরকম intersex মাছ পাওয়া গেল। এই ব্যাপারে মৎস অধিদপ্তর কে জানালে তারা ড. টাইলার কে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট নিয়ে এক গবেষণার প্রজেক্ট খুলতে বলেন ‘Roach, Sex, and Gender-Bending Chemicals: The Feminization of Wild Fish in English Rivers’ নামক । তিনি রাজি হলেন। তিনি ৮ বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণা করে গত জুলাই মাসের ৩ তারিখ , ২০১৭ তে এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ ফিশারিজ সোসাইটির গোল্ডেন জুবিলীতে দেয়া বক্তব্যে বিভিন্ন রেসাল্ট সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন পৃথিবীর মিঠা পানির ৫ ভাগের ১ ভাগ মাছের প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন এই EE2 এর কারণে। ব্যাপক হারে intersex মাছ ও উভচর প্রানি তৈরী হচ্ছে মানুষের ব্যবহৃত ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ জিনিসের কারণে। প্রাকৃতিক ঝর্নার প্রাণিরাও এর শিকার।
তিনি আরো বলেন যে শুধু কন্ট্রেসেপটিভ পিল না, তিনি আরো ২০০ প্রকারের মানুষের ব্যবহৃত ক্যামিকেল পেয়েছেন যা ইস্ট্রোজেনের মত কাজ করছে মাছদের উপর। মাছের যৌন সঙ্গী নির্ধারণের পদ্ধতি চরমভাবে পালটে গেছে। পুরুষ মাছের ভেতর মেয়েলি স্বভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন এমনকি আমাদের খাওয়া antidepressant ড্রাগগুলোও পুরুষ মাছের এগ্রেসিভ স্বভাব কমিয়ে দিয়েছে ব্যাপক হারে। তাদের গবেষণার অন্যতম নদী ওয়াশিংটনডিসির পোটোমেক নদীর ৮০% পুরুষ মাছ ২০১০ সালেই তাদের স্বভাব হারিয়ে ফেলেছে বলে তিনি বলেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এখন দ্রুত এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য গবেষণা চলছে গত বছর থেকে। ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর পরিবর্তন করে দিয়ে ট্রান্সজেনিক প্রাণিতে EE2 এর ইফেক্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর মানুষের মেটাবোলিক এক্সক্রিশনে যেন ইস্ট্রোজেন সরাসরি বের না হয় সেই জিনিস নিয়ে গবেষণা চলছে।
আমরা সৃষ্টির সেরা হয়েছি সমগ্র সৃষ্টিকে তত্ত্বাবধান করার জন্য। তাই একজন মানুষ হিসেবে বাকি প্রাণি জগতের প্রতি আমাদের নজর রাখতে হবে বলে আমার মতামত। এজন্য সবাইকে ব্যাপারটা জানাতে ডাক্তারি কাজের কথার বাইরে এই কথাটা জানিয়ে রাখলাম। আমরা অতিদূর গবেষণা করতে না পারি, ব্যাপারটা ত অন্তত মাথায় রাখা মন্দ কি?
……….
ডাঃ আসির মোসাদ্দেক সাকিব
চমেক ১১-১২