রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০
ডা. আমিনুল ইসলাম
এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (চেস্ট)
রেসপিরেটরী মেডিসিন বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চিকিৎসকদের মৃত্যু আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সবাই যদি এভাবে একে একে চলে যায়, তবে রোগীদের জন্য বেঁচে থাকবেন কারা? চিকিৎসকদেরকে অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। বিশেষ করে যারা করোনা ওয়ার্ডে কাজ করেন।
১) TDS তথা Time, Distance, Shield এ নীতিটা আপনাকে সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে।
Time= যত কম সময় দেয়া সম্ভব।
Distance= করোনা রোগী বা সাসপেক্ট থেকে যথাযথ দূরত্ব (কমপক্ষে ৬ ফুট) বজায় রাখা।
Shield= বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা।
২) রাউন্ড/চিকিৎসা/ফলোআপের সময় বা ডিউটি রুমে করোনা রোগী বা রোগীর এটেনডেন্ট এর কাছ থেকে যথাযথ দূরত্ব (৬ ফুট) বজায় রাখতে হবে।
৩) রোগী বা রোগীর এটেনডেন্ট এর মুখে মাস্ক না থাকলে, তাদের কাছে যাওয়া যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে করোনা ওয়ার্ডে রাউন্ডের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, রোগীদের এটেনডেন্টদের বেশিরভাগেরই করোনা পজিটিভ থাকে।
৪) একেবারে অপরিহার্য না হলে, চিকিৎসা হবে যতদূর সম্ভব non touch technique এ। অপ্রয়োজনে examine করার দরকার নাই। দুনিয়ার কোথাও কেউ সেটা করে না। কথাটা বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের, আমার না।
৫) পালস অক্সিমিটার একবার ব্যবহার করলে পরের বার সেটা ডিজিনফেক্ট করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, পালস অক্সিমিটার মেশিনের সুতাটা নিজের হাতে রেখে মেশিনটা রোগীর হাতে দিয়ে দেয়া। রোগীকে ইনস্ট্রাকশন দিতে পারলে রোগী ঠিকই সেটা নির্দিষ্ট আঙ্গুলে সেট করতে পারে।
৬) রোগী বা এটেনডেন্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না, দাঁড়াতে হবে মাথার পাশে যাতে একজনের মুখ আরেকজনের মুখোমুখি না হয়।
৭) স্বাস্থ্য সেবার সাথে যারা জড়িত নন, তারা সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) বলতে সাদা গাউন কেই বুঝে, যা সঠিক নয়। এই coverall জরুরী কিছু না, এপ্রোন অন্য যে কোন গাউনেই হয়ে যায়।
মাস্ক, গুগোলস, ফেস শিল্ডের, গ্লোভস এগুলো হল সুরক্ষার এর মূল উপাদান। স্পর্শ, অ্যারোসল যেভাবেই হোক নাক মুখ ও চোখ এই তিন পথেই করোনা শরীরে ঢুকে। এ তিনের বাইরে অন্যকোন পথ নেই।
৮) মাস্ক পড়ার পর ভালো করে ফুঁ দিয়ে দেখতে হবে মাস্ক ও মুখের চামড়ার ফাঁক দিয়ে বাতাস বের হয় কিনা বা চশমা ঘোলা হয়ে যায় কিনা। তেমনটা হলে ফিট টেস্ট নেগেটিভ। এই অবস্থায় কোনোভাবেই করোনা রোগীর কাছে যাওয়া যাবে না।
৯) ডিউটির সময় কোনভাবেই মাস্ক, গুগোলস বা ফেস শিল্ডের সম্মুখ ভাগে স্পর্শ করা যাবে না। কারণ এদের সম্মুখ ভাগ থাকে সবচেয়ে contaminated.
১০) কোভিড ওয়ার্ডে শর্তহীনভাবে শুধুমাত্র n95 অথবা ইকুইভেলেন্ট মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রোগীর এটেনডেন্টকে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
১১) কোভিড ওয়ার্ড অ্যারোসল জেনারেটিং কি জেনারেটিং না, কোন প্রসিডিউর করছি, কি করছি না, তার ওপর নির্ভর করে n95 বা ইকুইভ্যালেন্ট মাক্স ব্যবহার করা না করা নির্ভর করবে না। কোভিড ওয়ার্ড মানেই n95 বা ইকুইভ্যালেন্ট মাস্ক। এর বাইরে আর কোনো কথা নাই, এর বাইরে অন্য কারো কোন কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের জায়গায় থাকতে দিতে হবে। আমেরিকা-ইউরোপের প্রবাসী ডাক্তাররা যত পণ্ডিতই হোক, তারা যাতে নিজেরা অন্যদের জন্য সাইন্স তৈরি করে তা মার্কেটিং করতে না পারে। সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
“Do no harm to you and your family first.” নিজের ও নিজের পরিবারের ক্ষতি না করে, যতদূর সম্ভব চিকিৎসা দিতে হবে। ডাক্তার ও তার পরিবার নিজেও মানুষ। মানবতাই যদি আমাদের মূল দর্শন হয়, সে মানবতার ভাগ ডাক্তার নিজেও পাবে। ডাক্তারের মায়ের কান্না, অন্য কারো মায়ের কান্নার চেয়ে কম তীব্র হয় না। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাও প্যান্ডেমিকের দায়িত্বের অংশ। আপনি বেঁচে থাকলে তো দেশের মানুষের সেবাই করবেন। মরে যাওয়া মানে, দেশ ও ভবিষ্যৎ রোগীদেরও বঞ্চিত করা।
কথাগুলো বিভিন্ন সাইন্টিফিক সোর্স থেকে নেয়া। যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা কোন রণসংগীতের তালে নয়, আমাদেরকে সাইন্স মেনে চলতে হবে। চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে অনেক সময় উন্নত বিশ্বেও ফেইক সাইন্স তৈরি হয়। সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
“No amount of precaution is ridiculous when you are dealing with COVID.”