প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ জুন ২০২০, সোমবার
মূলঃ মাইকেল ফে কর্টেজ।
ভাবানুবাদঃ ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম,
রোগতত্ত্ববিদ, সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
ডা. নাওমি নুর।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের এর মতে করোনা ভাইরাসে ভ্যাকসিন হয়ত আগামী বছরের মধ্যেও আবিষ্কার করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের প্রত্যাশা এবং আচরন পরিবর্তন করার এটাই সময়।
এই যুদ্ধে ভাইরাসটি জিতে যাচ্ছে। গত ছয় মাস যাবত সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এবং স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন রূপ পরিবর্তনকারী এই মহামারিতে ৪,৫৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। উহান থেকে সাও-পাওলো পর্যন্ত জীবনের গতিকে থামিয়ে দিয়েছে এই করোনা, দীর্ঘ হয়েছে কবরের সারি।
আপাতত আশার বিষয় হল, চীন, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে দ্রুত কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরীর প্রকল্পগুলি চলছে, এই বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিতরণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ভ্যাকসিনটির বাণিজ্যিক প্রস্তুতির প্রত্যাশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ২০২১ সাল নাগাদ হয়ত একটিও কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে সামনের বছর বা তার বেশি সময় পর্যন্ত এই করোনা ভাইরাসের সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে, যদি না কোন জাদুকরী কিছু এসে আমাদের রক্ষা করে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে সঙ্কটের এই পরবর্তী ধাপের সাথে পাল্লা দিতে হলে আমাদের প্রত্যাশা, সচেতনতা এবং আমাদের আচরণগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে।
তাদের দৃষ্টিতে, সাফল্য বলতে ২০১৯ এ আপনি যেভাবে জীবনযাপন করতেন সেভাবেই থাকবেন এটা কিন্তু নয়, বরং এই সময়কে সদ্ব্যবহার করে কিভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা এবং নীতিগুলোকে আর একটু নমনীয় করে ঢেলে সাজানো যায়, যাতে করে এই দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মহামারির ধ্বংসাত্বক ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা যায়, সেটাই বুঝায়। এক হিসাবে বলা হয়েছে, কার্যকরী চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সারা বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ‘ক্যামেরন ওল্ফ’ বলেছেন, “মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা ভাবছে, সব চলে যাবে, শেষ হয়ে যাবে।” তিনি বলেন, “আমাদের এখন থেকে শিখতে হবে, কীভাবে এটির সাথে বেঁচে থাকা যায়।”
জটিল বিষয় হল, ভাইরাসটির হুমকি আসলে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় এবং এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই হুমকির তীব্রতা নির্ভর করছে, স্থানীয় প্রাদুর্ভাবের তীব্রতা এবং পরীক্ষার কার্যকারিতা, সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করা, সামাজিক দূরত্ব, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক ছায়ামুক্ত জনস্বাস্থ্য বার্তা প্রচার এর উপর।
কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ হার এবং মৃত্যুর কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন বা ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর মতো নেতারা ইতিমধ্যেই তাদের জনসংখ্যার কমবেশী একটা অংশ হারিয়েছেন।
বেশ কিছু ক্ষেত্রে, শীর্ষ এই দেশগুলির উপরমহল থেকে আসা বার্তাগুলি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে হয়েছে বা অনেক সময় যৌক্তিক পরামর্শগুলো আমলাতান্ত্রিক খবরদারিতে চাপা পড়ে গেছে। এগুলোই আসলে জনমনে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে এবং জনগণকে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যের মধ্যেও পক্ষপাতিত্ব খুঁজে পেতে বাধ্য করেছে।
তবে সব খবরই হতাশার নয়। বছরের প্রথমার্ধে, বিশ্বব্যাপী সরকারগুলি জরুরি অবস্থার নির্দেশ দিয়ে দোকান-পাট বন্ধ করা, সকল জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ এবং বড় বড় সমাবেশে উপর নিষেধাজ্ঞার জারি করেছে (দেশভেদে প্রয়োগমাত্রার ভিন্নতা দেখা গেছে; কারফিউ থেকে সাধারন ছুটি সবকিছুই এই প্রক্রিয়ার অংশ)। এইসব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপগুলির কারনে সংক্রমণের গতি কমানো সম্ভব হয়েছে, ফলে জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সরঞ্জাম সরবরাহ ও মজুত করার কিছুটা সময় পাওয়া গিয়েছে। (আমরা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছি সেটা সংশ্লিষ্টরা ভালো জানবেন)।
তবুও এইসব নিষেধাজ্ঞার কারনে অর্থনৈতিক প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, যার আর্থিক মূল্য কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। পরিবর্তে, বৃহত্তম অর্থনীতিগুলো পুনরায় সচল হওয়ার কথা ভাবছে, যদিও এই অর্থনীতির গতি ও মাত্রা দুটোই ভিন্নতর। তাই এই বিপর্যয় কাটাতে হয়তো পুরো লকডাউন তুলে নিয়ে বিকল্প পথে হাটবে সরকার। অনেক দেশ এরই মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসা-বানিজ্য, যানবাহন, অফিস, শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দিয়েছে। কোন দেশ আবার সংক্রমণ ঝুঁকি অনুযায়ী পুরো দেশকে লাল হলুদ সবুজ রঙে ভাগ করে, সে অনুযায়ী জোন/অঞ্চলভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা মাত্রা নির্ধারন করে সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে। তবে সকলে দুটো মূলনীতি মাথায় রেখেই কাজ করছে এগুলো হলো, “জনগণ এর স্বাস্থ্য জনগণ এর হাতে; people’s health in people’s hand”, ” সমস্ত সরকার সমস্ত সমাজ পদ্ধতি ; whole of the government whole of the society approach”.
এর ফলশ্রুতিতে, সামাজিক গতিশীলতা বাড়ার সাথে সাথে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। ইতিমধ্যে যে সকল বিজ্ঞানীরা ভাইরাস ট্র্যাক করছেন তারা লক্ষ করছেন, সব খুলে দেয়ার জন্য কেইসের সংখ্যা অনেক বাড়ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারলিনা স্কুল অফ মেডিসিন এর রোগতত্ত্ববিদ ও সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডা অ্যাডিমোরা, বলেন,” আমি বুঝতে পারছি যে, এই অর্থনৈতিক অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীতা সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা যে আপনার অসুবিধা চিন্তা করে, অর্থনীতির কথা চিন্তা করে, সমাজকে উন্মুক্ত করছি এবং লোকজন রেস্তোরাঁগুলোতে যাচ্ছে-আপনি খাওয়ার সময় মাস্ক পরতে পারছেন না- তাহলে ভাইরাসের হুমকি নিয়ন্ত্রণে আপনি তো কোনো ভূমিকাই রাখছেন না।”
SARS-CoV-2 ভাইরাসের সাথে সহাবস্থানের সক্ষমতা নির্ভর করছে কিভাবে প্রত্যেকে এই রোগ এর ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করবে, সেটা মোকাবেলায় কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তার উপর ।
বাল্টিমোরে অবস্থিত জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সিনিয়র স্কলার আমেশ আধালজা বলেছেন, “করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ছাড়া কোন কাজ ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না। এটা মূলত মানুষ কতটুকু ঝুঁকি নিরাপদ মনে করে সেটাই গুরুত্ত্বপূর্ণ।”
সমস্যাটি হলো ভাইরাসটি নিঃশব্দসঞ্চারী। চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো যারা প্রার্দুভাব স্থানীয় ভাবে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো সেখানে আবারও এর গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিবেশী প্রদেশগুলোতে নতুন প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পরার পর বেইজিং এই সপ্তাহে তার স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলো এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো সীমাবদ্ধ করেছে। জার্মানি, যারা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় তার মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে রেখেছে, সেখানকার একটি কসাইখানা এবং বার্লিনের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহামারিটি নিউইয়র্কের পর সান বেল্ট স্টেট, ফ্লোরিডা, টেক্সাস এবং অ্যারিজোনায় প্রবেশ করেছে। প্রথম দিকে রেহাই পাওয়া লাতিন আমেরিকাতেও প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ নগর এবং দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্রাজিল এখন নতুন কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
ভ্যাকসিন অ্যালাইন্সের প্রধান এক্সিকিউটিভ অফিসার অফ গাভি ও শেথ বার্কলি এর মতে, “চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা প্রাদুর্ভাবের পুনরুত্থান এটাই মনে করিয়ে দেয় যে, অঞ্চলগুলো যখন রেস্ট্রিকশন/লকডাউন উঠানো শুরু করে তখন কি হতে পারে।” বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ন্যায়সঙ্গতভাবে বন্টনের জন্য অলাভজনতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং বিষয়টি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।
বার্কলী ইন্টারভিউতে বলেন,”স্পষ্টতই এটি কোথাও শেষ হয়নি। এই ভাইরাসের এগিয়ে চলা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের এটিকে কিছু সমীহ করা প্রয়োজন। একেবারে সকল দরজা খুলে দিয়ে যদি আমরা স্বাভাবিক অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করি, তবে ভাইরাসের ক্রমাগত বিস্তার দেখতেই থাকবো।”
যদিও ভাইরাসটি আঞ্চলিকভাবে শুরু হয়েছিলো পরবর্তীতে তার বৈশ্বিক পদযাত্রা শুরু হয়, যেখানে ৮.৫ মিলিয়ন নিশ্চিত কেস রয়েছে এবং এ গতি দিনে দিনে বাড়ছে বই কমছে না। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, মে মাসের শুরুতে নিশ্চিত কেসের সংখ্যা ছিলো ৮৮,০০০ যা বর্তমানে ১৭৬,০০০। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপ্স রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর এরিক টোপল বলেছেন, “আমরা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবো। ২০২২ সাল নাগাদ আমরা যদি কয়েক মিলিয়ন বা তারও অধিক চলে যাই আমি অবাক হবো না, এটি জেনে যে অনেক লোকই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেটরিক্স এন্ড ইভ্যালুয়েশন বলছে অক্টোবর পর্যন্ত আমেরিকার দুই লাখ লোক মারা যেতে পারে। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গ্যানাইজেশন PAHO এর পরিচালক বলেন “এ রোগটা নিয়ে ধারনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি বুঝতেই পারছি না এরকম একটা দ্রুত বিস্তৃত ও মারাত্মক কিছুর জন্য কিভাবে আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন।”
বোষ্টন বিশ্ববিদ্যালয় এর গ্লোবাল হেলথ এন্ড মেডিসিন এর অধ্যাপক ডেভিডসন হ্যামার বলেন, “কেউ কেউ বলেছিলেন গরম আবহাওয়া, আদ্রতায় প্রকোপ কমবে, যা পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ যদি এধরনের মিথ্যা নিরাপত্তাভ্রান্তি (false sense of security) তে ভোগে তারা মাস্কও পরবে না ভীড়ও এড়িয়ে চলবে না।”
সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার সময় হল, এই বর্ষায় যখন স্কুল কলেজ খুলে যাওয়ার কথা হচ্ছে, যার ফলে বাচ্চারা সবাই ভিতরে থাকবে এবং এক সাথে থাকবে। এবং এটাই রোগটা পুনরায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করবে।
টোপল এর মতে, এই যে বিশাল সংখ্যক উপসর্গহীন রোগী এটাই এ রোগ প্রতিরোধে বিরাট প্রভাব ফেলেছে।
“এটা ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি, ১৯১৮ তে এমন হয়নি যে ৩০ ভাগ লোক জানতোই না যে তারা সংক্রমিত। এটা নীরব সংক্রমণ এর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে।”
ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী চিকিৎসা ও ভ্যাক্সিন এর জন্য দিনরাত এক করে ছুটছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর গবেষকরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, ডেক্সামেথাসোন নামের একটি সহজলভ্য বহুল ব্যবহৃত প্রদাহ নাশক ওষুধ গুরুতর করোনা রোগীর জীবন বাঁচায়। এরোগ শুরুর পর থেকে জীবনরক্ষায় এটিই প্রথম স্বীকৃত চিকিৎসা হিসাবে আশা জাগাচ্ছে।
আমেরিকার সরকারি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা ২০২১ এর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরীতে একটা দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহন করছেন কিন্তু হোয়াইট হাউজ এর উপদেস্টা এন্থনি ফসি’র মতে এতে আরও বেশী সময় লেগে যেতে পারে।
আশার খবর গুলোর মধ্য রয়েছে যে, মডার্না বায়োটেকনোলজি কোম্পানি, চীনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্ল্যাঙ্কের যৌথ প্রজেক্ট সেপ্টেম্বর এর মধ্যে একটি ভ্যাক্সিন আবিস্কারের চেষ্টা করছে।
WHO এর প্রধান বৈজ্ঞানিক সৌম্য স্বামিনাথান গত সপ্তাহে এক ব্রিফিং এ বলেন, “আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ২ বিলিয়ন কার্যকরী ভ্যাক্সিনের সরবরাহ থাকবে। তবে সেটা সারা পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশেরও কম মানুষের জন্য প্রযোজ্য।”
ভবিষ্যতে যে ভ্যাকসিন গুলো আসবে হয়ত তা দীর্ঘ মেয়াদী ইমিউনিটি দেবে না। ফসি একটি সাম্প্রতিক ইন্টারভিউতে বলেছেন, যদি এটা অন্যান্য করোনা ভাইরাসের মত হয় যেগুলো ঠাণ্ডা কাশি সৃষ্টি করে, তাহলে হয়ত আমাদের প্রতি বছর এর জন্য এই টিকা’র বুস্টার শট দিতে হতে পারে।
ভ্যাকসিন ব্যতীতও বিভিন্ন দেশ এই ভাইরাসের সংযমনের জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেমন কন্টাক্ট ট্রেসিং ও কোয়ারান্টাইন করণ। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডেভিড হেইম্যানের বলেছেন, “পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে অনেক দেশই পর্যাপ্ত পরীক্ষা করার ক্ষমতা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “এটি ট্রায়াল ও ইরোর প্রক্রিয়া তবে যদি রোগতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকে তাহলে যেখানে সংক্রমিত হচ্ছে সেখানে আরও পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করা যায়।”
যেহেতু এই মহামারি গ্রীষ্মকাল জুড়েও চলছে, তাই এটা স্পষ্ট যে, ভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কার না হলে খুব দ্রুত এটি শেষ হয়ে যাবে না, এ সপ্তাহে এটাই ট্রাম্প এর ভবিষ্যদ্বাণী।
জন হপকিন্সের অ্যাডালজার মতে, “এটা এমন ব্যাপার না, যা খুব সহজে সংযমিত বা অদৃশ্য হয়ে যাবে। এটা খুব সুক্ষ্মভাবে সন্তপর্ণে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়ায় এবং এটা করাই তার কাজ।”
কাজেই আমাদের নিজেদের বৈশ্বিক বাস্তবতা মেনে নতুন ভাবে জীবন যাপন ও নতুন সামাজিক ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে হবে।