এর আগের কিস্তিতে লিখেছিলাম যে কানাডায় চিকিৎসকেরা এলে , নিজ পেশায় থাকতে কি কি সমস্যায় পড়েন, বাস্তবতা কি, এসব বিষয় নিয়ে। আজকে লিখব ঘুরপথে এই সিস্টেমে ঢোকার কিছু উপায় নিয়ে। বিভিন্ন মানুষ এই উপায় ব্যবহার করেছেন। ১০০ ভাগ নিরাপদ নয় তবে, সুযোগ আছে।
এদেশে নন প্র্যাক্টিসিং বলে কোন কথা নেই । সবাই নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে তার সেবা দিয়ে থাকেন। যে সমস্ত এলাকায় চিকিৎসক পাওয়া যায় না সেখানে নির্দিষ্ট আয় সীমা বা সেশনাল ফি এর ব্যবস্থা আছে। সেশনাল ফি অর্থ হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ফি। তা ওই সময়ে তিনি যে কয়টি রোগী দেখেন না কেন, তিনি ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন।
আগের কিস্তিতে লেখা ছিল এদেশে এলে কিভাবে এদের হেলথ সিস্টেমে ঢোকা যায়। আজ বিদেশের কোন ডিগ্রি নিয়ে এলে কিভাবে এই সিস্টেমে ঢোকা যাবে তাঁর বিস্তারিত।
আমাদের ভাষায় যারা জিপি এখানে তাদের নাম ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান। মেডিকেলের কলেজের চার বছর পড়াশোনা করার পরে দুই বছরের রেসিডেন্সি করতে হয়। ট্রেনিং শেষে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানদের কলেজ থেকে ফেলোশিপ পরীক্ষা পাশ করলে তারপর ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ পাওয়া যায়। যারা স্পেশালাইজেশান করবেন তাদের একই পদ্ধতিতে চার অথবা পাঁচ বছরের রেসিডেন্সি করতে হয়। কানাডায় এসে স্পেশালাইজেশান করাটা ভীষণ ঝক্কির।
কানাডা এখনও শাসনতান্ত্রিকভাবে ভাবে ব্রিটেনের রানীর নামে শাসিত। তাই ব্রিটেনের সাবেক কলোনি গুলোর “কলেজ” থেকে যারা পাশ করে আসেন তাদের রেজিস্ত্রেশন পাওয়া সহজ। এই সাবেক কলোনির মধ্যে কেউ যদি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড থেকে রেসিডেন্সি করেন , তাদের কানাডায় আসার সম্ভাবনা কম। কারণ সেই ফেলোশিপের সুবাদেই তারা সেই সমস্ত দেশে স্থায়ী হতে পারেন। বাকি থাকে সাউথ আফ্রিকা। সাউথ আফ্রিকা থেকে করা ডিগ্রি/ফেলোশিপ দিয়ে এখানে চাকরি পাওয়া যায়। শর্ত থাকে যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কানাডার কলেজ পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, আগে যে LMCC পরীক্ষার কথা বলেছি সেটাও করতে হবে।
সাউথ আফ্রিকা থেকে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের ট্রেনিং করে এসে এখানে চাকরি করেছে বেশ কিছু বাংলাদেশি চিকিৎসক। কিছু দিন আগেও সরাসরি চাকরি পাওয়া যেত, এখন একজনের অধীনে কাজ করতে হয় পাশ না করা পর্যন্ত। পরিক্কখায় পাশ করলেই, সেই “সুপারভিশন” শেষ হয়ে যায়। আমি শেষ খবর শুনেছি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বাইরে এই সুযোগ এখনো চালু আছে। তাই যারা অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন তারা এটা ভেবে দেখতে পারেন। সাউথ আফ্রিকা থেকে অন্য বিষয়ে ফেলোশিপ করে এলে একই অবস্থা। এখন ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে শতকরা পনের ভাগ্যের বেশি চিকিৎসক হয় সাউথ আফ্রিকা থেকে পাশ করা বিদেশি অথবা ওখানকার স্থানীয় চিকিৎসক যারা কানাডাতে অভিবাসন নিয়েছেন। সুতরাং যারা এখানে (কানাডাতে) বছরের পর বছর চেষ্টা না করে সাউথ আফ্রিকা ঘুরে এখানে আসতে চান, তাদের সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারে।
এখানে দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপ দেওয়া হয়। এটা পরীক্ষার ফেলোশিপ নয়, ট্রেনিং এর ফেলোশিপ। সাধারণত এক বছরের। যারা এই ফেলোশিপ নিয়ে আসেন তারা হাসপাতালে চিকিৎসা এবং গবেষণা দুইই করেন। এদের মধ্যে যাদের সাথে বিভাগীয় প্রধানদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে , তারা সাধারণত আরও এক দুই টার্ম এক্সটেনশন পান। এই সময়ে রয়েল কলেজের কাছে আবেদন করলে কানাডার ট্রেনিং এর ভিত্তিতে রয়েল কলেজের পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। এবং পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলে সেই চিকিৎসকের সাথে কানাডায় পড়াশোনা করা চিকিৎসকের মর্যাদা সমান।
অনেক সময় ইউনিভারসিটি স্পেশাল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে দেয়। সাধারণত ফেলোশিপের সময়ে যোগ্যতা দেখাতে পারলে প্রভিন্সিয়াল রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও চাকুরী করা যায়। তবে অসুবিধা এই, ওই ইউনিভারসিটির বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। অথবা কর্তৃপক্ষের সাথে কোন কারণে মতান্তর হলে সেই চাকরিটিও চলে যেতে পারে। আরেক টি অসুবিধা হল যে এই চাকরিতে আয় সীমাবদ্ধ। আপনার আয় করা বাড়তি টাকা চলে যাবে ইউনিভারসিটির কোষাগারে।
কানাডার প্রায় প্রত্যেকটা ইউনিভারসিটি তে ফেলোশিপ প্রোগ্রাম আছে। সেখানে আবেদন করলে ক্ষতি নেই, বরঞ্চ সুযোগ পাওয়া গেলে সম্ভবনার দরজা খুলে যেতে পারে।বেশ কিছু ভারতীয় চিকিৎসক এভাবে কাজ করছেন বিশ্বখ্যাত McMaster বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের কেউ কেউ আমেরিকা অথবা কানাডা থেকে আগে একটা মাস্টার্স করে তারপরে ফেলোশিপে ঢুকেছেন।
সুতরাং সাউথ আফ্রিকার ডিগ্রি নিয়ে বা ফেলোশিপে ঢুকে এখানে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ আছে। যারা UK থেকে MRCP/MRCS/FRCA বা সমমানের ডিগ্রি করেছেন কিন্তু এখনো স্পেশালিষ্ট রেজিস্ত্রার হিসেবে ট্রেনিঙে ঢুকতে পারেননি, তারা এখানে ফেলোশিপ নিয়ে এসে দেখতে পারেন।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য রইল শুভ কামনা।
লেখক ঃ ডা. অসিত বর্ধন
কানাডা প্রবাসী এনেস্থেটিস্ট । bdemr.com এর স্থাপক
Ashit Bardhan
bd e valo asi
MRCP (UK) কি accepted canada তে?