বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে লং কোভিড শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল উন্নয়ন এবং ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদকনীতির পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য কানাডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব হেলথ রিসার্চ (সিআইএইচআর) থেকে তহবিল দেয়া হয়েছে। তহবিল পেয়েছেন কানাডার ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ সায়েন্সেস-এর গবেষক ড. জিওফ বার্ডওয়েল এবং ড. জাহিদ বাট। তারা এই দুটি গবেষণা পরিচালনা করবেন।

ড. জাহিদ বাটের গবেষণা প্রকল্প– ‘বাংলাদেশে লং কোভিড: নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং স্বল্প সম্পদযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম চিহ্নিতকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল উন্নয়ন’। এ গবেষণায় তিনি ১ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছেন।
ড. জিওফ বার্ডওয়েলের গবেষণা প্রকল্প – ‘অবৈধ মাদকের ব্যবহারের প্রতিক্রিয়ায় পুলিশের আচরণের কারণে সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যগত প্রভাব: ছোট শহর ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ে পুলিশ নীতির পরিবর্তন ও কার্যক্রম বিশ্লেষণের জন্য একটি মিশ্র-পদ্ধতির গবেষণা।’ এই গবেষণায় তিনি চার বছরের জন্য ৬ লাখ ৬৪ হাজার ডলার অনুদান পেয়েছেন।

বাংলাদেশে লং কোভিড চিহ্নিতকরণ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল:
এই বিষয়ে ড. বাট আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেন, ‘লং কোভিড সংক্রান্ত গবেষণার বেশির ভাগই উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে পরিচালিত হয়েছে। তবে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা থাকায়, এই গবেষণাগুলোর ফলাফল সবক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে।’
গবেষণাটিতে নমুনা হিসেবে বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট উপজেলার কোভিড-১৯ পরীক্ষিত সব ব্যক্তিকে নেওয়া হবে। এরপর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত জনমিতি ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে ওই অঞ্চলে লং কোভিড কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করা হবে।
এ গবেষণায় শুধু স্বাস্থ্যগত প্রভাব নয়, বরং অর্থনৈতিক প্রভাব, যেমন—জীবন-জীবিকা ব্যাহত হওয়া, আয়ের ক্ষতিসহ অন্যান্য দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। গবেষণার ফলাফল ‘পোস্ট-কোভিড সিনড্রোমের’ প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে এবং মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কমাতে ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদী ড. বাট।
এই গবেষণার মাধ্যমে এই খাতে কানাডার গবেষণা অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় হবে এবং এটি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষকেরা হলেন ড. শ্যানন মাজোভিচ, ড. ক্রেইগ জেনস এবং ড. পিটার হল। তাঁরা তিনজনই ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির গবেষক।
এ ছাড়া, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের—আইসিডিডিআর, বি-এর গবেষকেরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা হলেন—মো. আতিক ইকবাল চৌধুরী, মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন, ফারজানা আফরোজ, আশরাফুল আলম, শামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতি, কাজী মুনিসুল ইসলাম এবং আফরুনা রহমান।
ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদক নীতির পরিবর্তনের প্রভাব সংক্রান্ত গবেষণা
এ বিষয়ে ড. বার্ডওয়েল বলেন, ‘মাদকের ব্যবহার সংক্রান্ত অধিকাংশ গবেষণা বড় শহরগুলো কেন্দ্রীক। কিন্তু, ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোর বাস্তবতা বোঝার জন্য গবেষণা হওয়া জরুরি, যাতে ওয়াটারলু অঞ্চলে এবং অনুরূপ অন্যান্য এলাকায় নীতি নির্ধারণ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মাদক ব্যবহারের বিষয়টি অপরাধ নয়, বরং একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাদক গ্রহণের বিষয়টিকে অপরাধীকরণের ফলে নেতিবাচক স্বাস্থ্যগত প্রভাব পড়ে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াটারলু রিজিয়ন পুলিশ সার্ভিস মাদক সংক্রান্ত অপরাধকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে, মাদকদ্রব্য দখলের অভিযোগ ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।’
বার্ডওয়েলের গবেষণা ২০১৬ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পুলিশের মাদক সংক্রান্ত কার্যক্রমের পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করবে এবং জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে পুলিশের হস্তক্ষেপে কী ধরনের বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে, তাও বিশ্লেষণ করবে।
এ গবেষণা প্রকল্পে বার্ডওয়েলের সঙ্গে রয়েছেন ড. ক্রিস পার্লম্যান ও ড. জেন ল। তাঁরাও ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির। এ ছাড়া টরন্টো ইউনিভার্সিটির ড. ক্যারল স্ট্রাইকও আছেন তাঁদের সঙ্গে। প্রকল্পটি ওয়াটারলু রিজিয়ন পুলিশ সার্ভিস, রিজিয়ন অব ওয়াটারলু পাবলিক হেলথ অ্যান্ড প্যারামেডিক সার্ভিসেস, ওয়াটারলু রিজিয়ন ইন্টিগ্রেটেড ড্রাগ স্ট্র্যাটেজি, ওয়াটারলু রিজিয়ন ড্রাগ অ্যাকশন টিম, ড্রাগ স্ট্র্যাটেজি নেটওয়ার্ক অব অন্টারিও এবং পিভট লিগ্যাল সোসাইটির সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশসহ অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে লং কোভিড শনাক্তকরণ এবং ছোট শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাদক সংক্রান্ত পুলিশের ভূমিকা পরিবর্তনের স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিশ্লেষণ—উভয় গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবসম্মত সমাধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে। বিশ্ব জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থার প্রস্তুতি, মাদক নীতির পরিবর্তন এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এই গবেষণাগুলো ভবিষ্যতের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস