কালাজ্বরের চিকিৎসায় অ্যাম্বিজোমের পরিবর্তে অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইজিন প্রয়োগ করলে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা। রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বুধবার চিকিৎসকেরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষকেরা জানান, ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কালাজ্বরের নতুন ওষুধ তৈরিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ময়মনসিংহের ৬০০ মানুষের ওপর গবেষণা চালান। দেশে যত মানুষ প্রতিবছর কালাজ্বরে আক্রান্ত হন, তার প্রায় ৫০ ভাগই ময়মনসিংহের।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ; আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি); কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ; ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ; ঢাকা মেডিকেল কলেজ; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ গবেষণা চলে।
২০১৬ সাল পর্যন্ত কালাজ্বরের ওষুধ বিনা মূল্যেগবেষকেরা কালাজ্বরের চিকিৎসায় রোগীদের ওপর শুধু অ্যাম্বিজোম; অ্যাম্বিজোম ও মিল্টেফোসিন; অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইসিন এবং প্যারোমোমাইসিন ও মিল্টেফোসিন প্রয়োগ করেন। শুধু অ্যাম্বিজোমের তুলনায় বাকি তিনটি মিশ্রণই ভালো কাজ করে। অ্যাম্বিজোম ও মিল্টেফোসিনের মিশ্রণের সফলতার হার ছিল ৯৫ ভাগের নিচে। তবে অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইসিন প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক মো. রিদওয়ানুর রহমান গবেষণাটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, কালাজ্বরের নতুন কোনো ওষুধ এ মুহূর্তে হাতে নেই। জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠলে এ রোগে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে। এ ছাড়া অল্প সময়ে, অল্প খরচে মানুষ যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে, সে বিবেচনা থেকেও গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবছর কালাজ্বরে গোটা বিশ্বে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যায়। সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে কালাজ্বরের প্রকোপ অনেকটা কমে এসেছে। গত বছর কালাজ্বরে মারা গেছে দুই হাজার মানুষ। এ বছর এ সংখ্যা হাজার ছাড়াবে না বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ওই একই অনুষ্ঠানে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, কালাজ্বর একটি বিরতির পর মারাত্মকভাবে ফিরে আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তখন ওষুধ জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।
এক ইনজেকশনেই কালাজ্বর থেকে মুক্তিবাংলাদেশের আগে ভারতেও একই ধরনের একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তবে আইসিডিডিআর, বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার যুগ্ম প্রধান গবেষক রশিদুল হক বলেন, এত ব্যাপক পরিসরে এই গবেষণা আর কোথাও পরিচালিত হয়নি।
গবেষণা প্রকল্পে সহযোগিতা দিয়েছে ড্রাগস ফর নেগলেকটেড ডিজিজ ইনিশিয়েটিভ (ডিএনডিআই)। সভায় উপস্থিত ডিএনডিআইয়ের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সুমন রিজাল বলেন, এ ধরনের গবেষণা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মাকসুদুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আবুল ফায়েজ।
আলোচকেরা গবেষণা ও ওষুধ আবিষ্কারের পাশাপাশি বেলেমাছি নিমূর্লে জোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেন। বেলেমাছি থেকে কালাজ্বরের উৎপত্তি।
তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত