মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসকের চাহিদা থাকলেও পদ খালি ৩৮ জনের। কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মাত্র ২০ চিকিৎসকের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় চলছে কুড়িগ্রামের এ প্রধান হাসপাতাল।
কুড়িগ্রামের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলেও সে অনুপাতে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে উদ্বোধন করা হয় আটতলার নতুন আধুনিক ভবন। তবে সম্প্রতি নতুন ভবনের দুটি লিফট ও পানির পাম্প কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হচ্ছে হৃদরোগীসহ গুরুতর অসুস্থদের, দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আগত রোগী ও স্বজনদের।
নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসক প্রয়োজন ৫৮ জন। কিন্তু এই জনবলের অনুমোদন মেলেনি। এমনকি ১০০ শয্যার মঞ্জুরীকৃত ৪৩ পদের চিকিৎসকও পদায়ন করা হয়নি!
ফাঁকা পদ মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, ইএনটি, চর্ম-যৌন সিনিয়র কনসালট্যান্টের। অর্থো-সার্জারির সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও নেই চক্ষু, কার্ডিওলজি, ইএনটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট।
অ্যানেসথেশিয়া, অর্থো-সার্জারি, চক্ষু, কার্ডিওলজির পাঁচজন করে থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালটিতে রয়েছে একজন করে। এ ছাড়া একই বিভাগে ছয়জন করে জুনিয়র কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একজন করে। এর বাইরে জুনিয়র কনসালট্যান্ট – প্যাথলজি, রেডিওলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ছয়জন করে থাকার কথা থাকলেও রয়েছে একজন করে। হাসপাতালে ঘাটতি রয়েছে মেডিক্যাল অফিসারেরও। সিনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের ৯টি পদই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১২টি পদের পাঁচটি শূন্য। নেই চক্ষু রোগের চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্ট। শুধু যে চিকিৎসকসংকট তা কিন্তু নয়। নার্স, প্যাথলজিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংকটও রয়েছে। হাসপাতালটিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট পদের সংখ্যা রয়েছে ২৯২টি। এর মধ্যে ৮৫ টি পদই শূন্য!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে আড়াই হাজারের বেশি রোগী। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও ৪৫০ জনের মতো। ১০০ শয্যারও কম জনবল নিয়ে কোনো রকমে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। তবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। জনবল ও ওষুধের চাহিদা জানিয়ে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শহিদুল্লাহ প্ল্যাটফর্মকে বলেন, “১০০ শয্যারও কম জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে চিকিৎসা সেবা প্রদান অব্যাহত থাকে। লিফটের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। আটতলা ভবনের জন্য আরো লিফট স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে।”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী