প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ মে ২০২০, সোমবার
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এয়ার এম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি ডা. জাফর হোসাইন রুমিকে। তিনি চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
গত ১৩ মে, ডা. জাফর হোসাইন রুমি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল বিকেলে তাঁকে আইসিইউ তে স্থানান্তর করা হয়। আইসিইউতে হাই ফ্লো অক্সিজেন (উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন) চলাকালীন অক্সিজেন স্যাচুরেশন (রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ) ৯০-৯২% এর উপরে উঠছিল না ডা. রুমির। স্বাভাবিকভাবে এই মাত্রা সুস্থ মানুষের দেহে সাধারণত ৯৬% এর বেশি থাকে। এ কারণে দ্রুত এয়ার এম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকার কোন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বিএমএ, ডা. রুমির বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের বন্ধুরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে এয়ার এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেন।
গতকাল (১৭ই মে) দুপুর ৩ টায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেক্ষিতে বিকেল ৫.৩০ টায় একটি হেলিকপ্টার এলেও ঢাকায় নেওয়া সম্ভব হয় নি ডা. রুমিকে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়,
অবস্থার অবনতি হতে থাকে ডা. রুমির। অক্সিজেন সেচুরেশন বাড়ছিল না। হেলিকপ্টারে নেওয়ার সময় উচ্চতার কারণে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই রোগীর অক্সিজেন চাহিদা বেড়ে যায়। ডা. রুমির শারীরিক অবস্থায় এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে ইন্টিউবেট (শ্বাসনালী তে টিউব দিয়ে অতি উচ্চমাত্রা অক্সিজেন দেয়া) করা জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। উভয়সংকটে ইনটিউবেশনের সম্মতি দেয় নি পরিবার। হেলিকপ্টারে ছিল না পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর সুবিধা। সন্ধ্যায় আলোকস্বল্পতার কারণে হেলিকপ্টারের খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। রোগী নেওয়ার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ৫.৪৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করে হেলিকপ্টারটি চলে যায়। হেলিকপ্টারের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে৷
সেখানে দেখা যায়, একটি মাঠে (বহুতলা কলোনি মাঠ) হেলিকপ্টারটি ঘিরে রয়েছে বহু লোক।
ডা. রুমির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কথা বলা হলে (১৭ মে, রাত সাড়ে এগারোটা) তিনি জানান, হাই ফ্লো অক্সিজেন চলছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯১-৯২%। রেস্পিরেটরি রেইট ৪০ ও PO2 ৫০। রয়েছে উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা। খুবই ক্রিটিকাল অবস্থা। তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন। নিয়মিত ফোন করে রোগীর অবস্থা জানানো হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে৷
এদিকে, ঘটনার প্রেক্ষিতে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর আতংকিত হয়ে বাধা প্রদান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপণ, সাসপেক্টেড কোভিড-১৯ রোগী হওয়ায় হেলিকপ্টারে নেয়ার ব্যাপারে অসম্মতি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আই সি ইউ তে বেড নিশ্চয়তা না পাওয়া ইত্যাদি নানা কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায় এর কোনোটিই সত্য নয়।
বেশ কয়েকজন শোনা কথায় সত্যতা জানতে চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পেরে পোস্ট দ্রুত সরিয়ে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আপামর স্বাস্থ্যসেবাকর্মী এবং সর্বোপরি এলাকাবাসী ডা. রুমির জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। (বহুতলা কলোনি বাসীর পক্ষে এমন একটি ভিডিওতে সহযোগিতার কথা বলা হয়।)
সকালে এয়ার এম্বুলেন্সের মাধ্যমে ডা. জাফর হোসাইন রুমিকে ঢাকা নেওয়ার ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। পরবর্তীতে পরীক্ষা করা হলে তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।