প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুলাই ২০২০, রবিবার
ভিয়েতনামে কারো প্রাণ কেড়ে নিতে পারেনি কোভিড-১৯। সবচেয়ে গুরুতর রোগিটিও এখন সুস্থ। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল ভিয়েতনাম এখনো মৃত্যুহীন। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত সবচেয়ে গুরুতর রোগীটিও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
যুক্তরাজ্যের নাগরিক স্টেফেন ক্যামেরন পেশায় একজন পাইলট। ৪৩ বছর বয়সের ক্যামেরন গত মার্চের শুরুর দিকে ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স এর পাইলট হিসেবে যুক্তরাজ্য থেকে নিজের প্রথম ফ্লাইট নিয়ে ভিয়েতনাম যান। তার তিনদিন পর জ্বরাক্রান্ত ক্যামেরন ভর্তি হন হাসপাতালে। হো চি মিন সিটির একটি বারে গিয়ে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
ভিয়েতনাম সরকার শুরু থেকেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সম্ভাব্য আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং সময়মত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপযুক্ত সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎপত্তিস্থল চীনের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকার পরও দেশটিতে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭০ জন নতুন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।
পাইলট ক্যামেরনের অসুস্থতা ভিয়েতনাম জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। তাঁকে সুস্থ করে ফিরিয়ে আনতে দেশটির চিকিৎসকরা প্রাণপণ লড়াই করেছেন। ক্যামেরন যেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। ‘রোগী ৯১’ নামে পরিচিত ক্যামেরন এক পর্যায়ে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর ফুসফুস মাত্র ১০ শতাংশ কর্মক্ষম ছিল। মৃৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন পাইলট ক্যামেরন। তাঁর শরীরিক অবস্থা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি, তাঁকে বাঁচাতে অনেকে ফুসফুস দান করতে এগিয়ে এসেছিলেন। যদিও চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন, সেরকম প্রয়োজনে একমাত্র ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ব্যক্তির ফুসফুস গ্রহণ করা হবে। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের আর প্রয়োজন পড়েনি। চিকিৎসকদের দিন-রাত এক করে সেবার ব্রতে এগিয়ে আসায় সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন ক্যামেরন। জুন মাসে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।
শনিবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। হাসপাতাল ছাড়ার সময় হুইলচেয়ারে বসা ক্যামেরনকে চিকিৎসকরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। খুব শীঘ্রই বিশেষ বিমানে করে তাকে দেশে পাঠানো হবে। বিমানে তার দেখাশোনায় চিকিৎসকরাও থাকবেন বলে জানিয়েছে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা। ক্যামেরনের চিকিৎসায় দুই লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে দেশটি।
হাসপাতাল ছাড়ার সময় কৃতজ্ঞ ক্যামেরন বলেন,
‘‘আমার হয়তো এখানে থাকার কথাই ছিল না। যারা এ অসাধ্য সাধন করেছেন তাদের শুধুমাত্র ধন্যবাদ বলতে পারি।”
দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজে ফিরবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনো একজন পাইলট। শুধু আমার লাইসেন্সটা স্থগিত হয়েছে, এই যা।”