প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার। ১৮ এপ্রিল, ২০২০
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে কয়েকদিন আগেই। পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে করোনায় ভয়াল থাবায় আক্রান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর মিছিলে বাংলাদেশিদের নাম প্রায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে। গতদিনে করোনায় আরও ৭ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে মোট ১৪৭ বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেল।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রউফ আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল হক অতুল, তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ রহমান, আবু তাহের, ফরিদ উদ্দিন (ভার্জিনিয়া) ও আমীরুন্নেসা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমছে নিউইয়র্কে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বুধবার (১৫ এপ্রিল) জানান, “আগের দিন অঙ্গরাজ্যে ৬০৬ জনের মৃত্যু হয়। আর ১ হাজার ২০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় এক দিনে নিউইয়র্কে করোনায় মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির এই সংখ্যাকে অবস্থার উন্নতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।”
নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের লকডাউনের মেয়াদ ১৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো নিজেই বলেছেন, “পরিস্থিতি এখনো লকডাউন তোলার মতো পর্যায়ে যায়নি। ধাপে ধাপে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হবে। অবস্থার উন্নতি অব্যাহত থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুমোর ভাষ্যমতে, “সামনের এক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক মাস পর পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা তিনি নিজেও জানেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন।”
উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন যাঁরা হাসপাতালে আসছেন, তাঁরা চরম সংকটজনক অবস্থায় আসছেন। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটগুলো চাপ সামাল দিতে পারছে না।
প্রতিদিন শুধু নিউইয়র্ক নগরীর হাসপাতালেই ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে সংকটজনক অবস্থায় আইসিইউ ইউনিটে পাঠাতে হচ্ছে। নগরীর এসব হাসপাতালকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০ জন সংকটজনক রোগীকে সামাল দিতে হচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে কতজন ফিরবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
ব্রুকলিনের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার পিয়া ড্যানিয়েল নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, “আইসিইউতে থাকা রোগীদের অধিকাংশের অবস্থাই সংকটজনক।”
বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে লোকজনকে সতর্কভাবে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। ফেডারেল অর্থ সহযোগিতা অনেকেই ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন।
মালিকেরাও সতর্কতার সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন। গ্রোসারি–কর্মী শিরিল হাসান জানালেন, “লোকজন সরকারি অর্থ হাতে পাওয়ার পর বাজার করছেন বেশি করে। অনেকেই মাসের বাজার নিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ঘনঘন দোকানে আসতে না হয়।”
বেকার-ভাতার আবেদন যাঁরা করেছেন, তাঁদের অনেকেই ভাড়া পেতে শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক, নিউজার্সির অনেক আবেদনকারী জানিয়েছেন, তাঁরা এখনো অপেক্ষায় আছেন।
অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলো জানাচ্ছে, অতিরিক্ত আবেদন সামাল দিতে তাদের সময় লাগছে।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী, “খাবার বা কোনো সাহায্য নিয়ে কারও দরজায় কড়া নাড়ার সুযোগ নেই।” পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই স্বেচ্ছাসেবকদের এই কাজ করতে হয়। এ কারণে প্রান্তিক আমেরিকার নানা এলাকায় ঘরে থাকা লোকজনের কাছে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন জানালেন মৈনুস সুলতান।
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি মানুষ নিউইয়র্কেই মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যমতে, আমেরিকায় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৬১৭ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৬ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ। সুস্থ হয়েছেন ৫৭ হাজার ২৩২ জন।
প্রসঙ্গত, করোনা প্রতিরোধে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে, নিজগৃহে অবস্থান করেই সুস্থ ও নিরাপদ থাকা সম্ভব।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়