প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ডা. শামীমা সুলতানা। দীর্ঘ ১৮ মাস রেক্টাল ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলো তাঁকে। গত সোমবার (২১ জুন) সকাল ১১ঃ৩০ ঘটিকায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
প্রয়াত ডা. শামীমা সুলতানা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম- ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজের ২৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালে ইন্টার্ন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে নিজের পদচিহ্ন ফেলার মোক্ষম সময়টাতেই উনার CA Rectosigmoid Junction ধরা পড়ে, সাজানো চিন্তার জগৎটা হয়ে উঠে ধূসর, অস্পষ্ট৷ চট্টগ্রামেই চিকিৎসা শুরু করা হলে ধরা পড়েছিল perforation within the tumour. দিনের পর দিন অবস্থার ক্রম অবনতি নিয়েই তাঁর পরিবার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলো। স্কয়ারের আইসিউ তে ১২ দিন কাটানোর পর অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ভারতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ দীর্ঘ ক্লান্তিকর সব দিন, প্রচণ্ড শারীরিক কষ্ট আর মানসিক চাপেও শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে না পড়া ডা. শামীমার যুদ্ধ চলতে থাকে। পরিবারসহ আশেপাশের সবার সহযোগিতা এবং মানসিক দৃঢ়তায় সুদীর্ঘ সংগ্রাম করতে গিয়ে ডা. শামীমার দুই পরিবারই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল৷ ঠিক তখনই চিকিৎসকদের সংগঠন প্ল্যাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি এগিয়ে আসে ডা. শামীমার পাশে। ‘আসুন ভালবাসা বিলাই-জিতে যাক ডা.শামীমা’ নামে ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহও করতে থাকে। গতবছর ১৫ নভেম্বর, ২০২০ইং ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫ শত ৪৮ টাকা অর্থ সংগ্রহ হলে টাকা উত্তোলনের ইভেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সকলের একান্ত প্রচেষ্টার পরও বাঁচানো যায়নি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করা ডা. শামীমা সুলতানাকে।
তার স্বামী ডা. এসএম হাসান প্ল্যাটফর্ম গ্রুপে এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান “গত ২১ শে জুন আমার স্ত্রী Dr. Shamima Sultana আমার কলিজার টুকরা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। আল্লাহ তার দুনিয়ার সকল কষ্টের অবসান দিয়েছেন। রেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বোন মেটাস্টেসিস ছিল তার। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত লাভ হলো না।আমাদের বিয়ের কিছুদিন পর ওর অসুখটা ধরা পরে তখন থেকে আমার জীবন এর একটাই লক্ষ্য ছিল ওকে সুস্থ করে তোলা,কিন্তু সেটা আমি আর পারলাম না ১৮ মাসে ক্যান্সার এর সাথে লড়াই করে ও হার মানল,,আমি আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের অনেক হেল্প করেছেন। আমার স্ত্রীর চিকিৎসা অবস্থাতেই আমার বাবা চলে গেছেন ওপাড়ে। আমি মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছি যে আপডেট দেওয়ার মত কোন অবস্থা আমার নেই। গত কয়েকদিন আমি এন্টি ডিপ্রেসেন্ট ছাড়া ঘুমাতে পারছি না। সে বলে গেছে আমরা আবার আখিরাতে মিলিত হব, শামু সবার জন্য দোয়া করতো,আপনারাও ওর জন্য দোয়া করবেন। ওর মত শান্ত শিষ্ট ভালো মেয়ে খুব কম আছে দুনিয়াতে। আমি ওর উপর সন্তুষ্ট ও আমার উপর সন্তুষ্ট, ও আমার জান্নাতি বউ, আমি আর বেশী কিছু লিখতে পারছি না। যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।”
তরুণী চিকিৎসক ডা. শামীমার অকাল মৃত্যুতে প্ল্যাটফর্ম পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।