কয়েক দিন আগে আমার চেম্বারে এক নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম। এক মা তার ১২ বছর বয়সের ছেলের গালে কষে এক ধাপ্পর মারলেন আমার সামনেই।বাচ্চা কাঁদতে লাগলো। মহিলাও চিৎকার করতে থাকলেন এই বলে যে, বেয়াদবটা ছোটমাছ, শাকসবজি খায় না বলেই ওর এই অবস্থা। বাচ্চার চোখ পরীক্ষার পর চশমার প্রেসক্রিপশন হাতে পেয়েই মায়ের এই রিয়াকশন।
আসলে বাচ্চাটি স্কুলে বোর্ডে লেখা দেখত না, তাই মা নিয়ে এসেছিলেন চোখ দেখাতে। চোখের সবকিছুই ভাল ছিল, শুধু চশমার প্রয়োজন ছিল। দু’চোখেই -১.০০ ডায়াপ্টর মায়োপিয়া অর্থাৎ হ্রস্ব দৃষ্টি।
কিন্তু ছোট মাছ ও শাকসবজি না খাওয়া এই মায়োপিয়ার কারণ নয়।
এবার একটু তত্ত্ব কথা বলতেই হয়, মায়োপিয়ায় চোখের লেন্স সিস্টেমের পাওয়ার আসলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাকে, তাই আলোকরশ্মির ফোকাস হয় রেটিনার সামনে, যা আমরা মাইনাস লেন্সের চশমা দিয়ে নিউট্রাল করে থাকি।
ইদানিং কালে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মায়োপিয়ার হার ক্রমশ বাড়ছেই।
জেনেটিক কারণ সহ মায়োপিয়ার অনেক গুলো কারণ থাকলেও বর্তমান কালের ভয়াবহ কারণ হচ্ছে দূর দৃষ্টির ব্যবহার মারাত্মক ভাবে কমে গেছে। কারণ –
১। বর্তমান প্রজন্ম বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে পড়াশুনা করে, খোলা মাঠে খেলাধুলার মাধ্যমে দূরের দৃষ্টিটা একটু ব্যবহার করার সৌভাগ্য বা সুযোগ এদের হয়ে উঠে না।
২। ডিজিটাল যুগের এই ডিজিটাল বাচ্চাগুলো তাদের অবসর সময়টাও কাটায় মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে।
এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে চোখ অ্যাডাপ্টেড হয়ে যায় নিকট দৃষ্টিতে, দূরে আর দেখে না, এটাই মায়োপিয়া।
আমাদের করণীয় –
১।মোবাইল,ট্যাব,ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এসব স্ক্রিনে একটানা ২০ মিনিটের বেশি সময় দৃষ্টি না রাখতে বাচ্চাদের উপদেশ দিন ।
২। একটানা পড়ালেখা করার সময় ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোন কিছুর দিকে তাকাতে বলুন।
৩।সম্ভব হলে নিয়মিত কিছু সময় খোলা মাঠে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন।
৪। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করতে অভ্যস্ত করে তুলুন।
জনস্বার্থে –
ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান
এমবিবিএস;এমএস(চক্ষু), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন