রমজান মাস যেহেতু চলে আসছে। আজ আমরা লিখতে বসেছি এমন একটি ফল, যেটি না খেলে ইফতারি শুরু করা যায় না, আজ সেই ফলের উপর লিখতে বসছি। সে ফলের নাম হলো “খেজুর”।
খেজুর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও পুষ্টিকর ফল। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাছে এটি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। এই ছোট্ট ফলটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। খেজুর শুধুমাত্র ইসলামের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানেও স্বীকৃত একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খেজুরের গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ সহজে হজম হয়, ফলে এটি দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে।
ইফতারিতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
১. শক্তি পুনরুদ্ধার
রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় এবং ক্লান্তি দূর করে।
২. হজমশক্তি উন্নত করে
খেজুরে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। রোজার পর হঠাৎ ভারী খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, তবে খেজুর ধীরে ধীরে হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়তা করে।
৩. ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে
খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোজার সময় পানি গ্রহণ করা যায় না, ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৪. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ইফতারির সময় খেজুর খাওয়া হার্টের জন্য উপকারী হতে পারে।
৫. মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে
খেজুর ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি৬-এর ভালো উৎস, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। রোজার সময় দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে মাথাব্যথা বা মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে, যা খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে সহজেই কমানো যায়।
৬. প্রাকৃতিক মিষ্টি ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প
অনেকেই ইফতারিতে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খান, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। খেজুর প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি এবং শরীরের জন্য নিরাপদ, যা কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবারের তুলনায় অনেক স্বাস্থ্যকর।
কিভাবে খেজুর খাওয়া যেতে পারে?
খেজুর সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়, তবে এটি বিভিন্ন উপায়ে ইফতারিতে উপভোগ করা যায়:
দুধ বা পানি দিয়ে খেজুর খেলে এটি আরও পুষ্টিকর হয়।
বিভিন্ন ফল ও বাদামের সাথে মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর স্মুদি বানানো যায়।
খেজুরের শরবত বা মিল্কশেক তৈরি করে ইফতারিতে উপভোগ করা যায়।
খেজুর দিয়ে তৈরি ডেজার্ট যেমন খেজুরের লাড্ডু বা খেজুরের বরফি খাওয়া যেতে পারে।
খেজুর কেবল একটি সুস্বাদু ফল নয়, এটি ইফতারির জন্য অন্যতম স্বাস্থ্যকর ও উপকারী খাদ্য। এর পুষ্টিগুণ শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করে, হজমশক্তি বাড়ায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে। তাই ইফতারিতে খেজুর রাখার অভ্যাস করলে শরীর ও মন উভয়ের জন্য উপকার পাওয়া যাবে। তাই শিশুদেরকেও খেজুর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন